করোনার করালগ্রাস, ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে প্রদীপের নীচের অন্ধকার

নয়ন রায়

দুর্গাপুজো প্রত্যেক বছর হয়। তবে এবার বাড়তি পাওনা করোনা। করোনার গ্রাসে তলানীতে অর্থনীতি। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বহু মানুষ। খুব স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে সমাজের দুটি অর্থনীতির ছবি।

একটি অর্থনীতি-যেখানে বহু মানুষের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে। দ্বিতীয় অর্থনীতি, যেখানে বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে ভিটে মাটি হারিয়ে কপর্দকশূণ্য হয়ে পড়েছেন।

সমাজের ওপরে যারা বাস করেন করোনা অর্থনৈতিকভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি। যত সমস্যা মধ্যবিত্ত আর আর্থিক দিকে পিছিয়ে থাকা মানুষদের। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা, তার মধ্যে আবার পুজোর আনন্দ। ভাবাটাও অন্যায় যেন!

সরকার তো পুজোর সময় সুজি, ময়দা, মিস্টি বা নতুন জামা কাপড় দেবে না। এমনিতে সরকারের অবস্থাও তথৈবচ। মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলছেন ভাঁড়ার শূন্য। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ যা বলছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র অন্য কথা বলছেন।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/leftists-ready-to-face-the-people-again-sanctify/

করোনার সময় যারা মোটা টাকার বেতন পেলেন তাদের তো সমস্যা নেই। রেল কর্মী, অধ্যাপক, শিক্ষক, এদের তো এই কয়েক মাসই কাজ করতে হয়নি।

কিন্তু ঝাড়গ্রাম, লালগড়, দিঘা, পাঁশকুড়া, আরামবাগ, খানাকুল, বর্ধমানের প্রান্তিক মানুষের তো মোটা মাইনের চাকরি ছিল না। ওই মাঠে-ঘাটে, নদী-নালা চাষ বা মাছ ধরে জীবন কাটলো।

সরকার বলছেন চিন্তা করবেন না সরকার পাশে আছে। বাস্তবে ‘ললিপপ’। গোটা বাংলা জুড়েই হাহাকার। এই দীর্ঘ কয়েকটা মাস মানুষ কিভাবে ছিল, তারাই বলতে পারবেন।

যারা রাজনৈতিক নেতা তাদের সংসার চালাতে অসুবিধা হয়নি। বিধায়ক ও সাংসদ বা গ্রামাঞ্চলে পার্টির নেতাদের তো কোনো সমস্যার মুখেই পড়তে হলো না।

তবু পুজো হবে নম নম করে। যারা ঢাক বাজান সেই ঢাকিরা কি করবে? যারা প্যান্ডেল তৈরি করেন আর মণ্ডপকে আলো দিয়ে যারা সাজিয়ে তোলেন তাদের তো সাড়ে সর্বনাশ। এবার কুমারটুলির ঠাকুর বিদেশ গেলেও সংখ্যাটা হাতে গুনে বলে দেওয়া সম্ভব। পুজো পার হলে বাজবে ভোট বাদ্যি।

রাজনৈতিক নেতাদের মুহুর্মুহু প্রতিশ্রুতি শোনা যাবে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাস্তার লাইটপোস্টে লাগানো মাইকে। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে প্রতিযোগীতা থাকবে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার।

এতদিন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকলেও করোনা যেন তা আরও প্রকট করে দিয়েছে। সেখানে মাস্ক দিয়ে মুখ-নাক ঢাকলেও আর মুহুর্মুহু স্যানিটাইজার ব্যবহার করলেও প্রদীপের নীচের অন্ধকারটা কিন্তু ক্রমশ গাঢ় হয়ে উঠছে।

সম্পর্কিত পোস্ট