পানি মিলনা দূর কী বাত হ্যায়! কব মিলেগা পাতা নেহি…
সহেলী চক্রবর্তী, দূর্গাপুরঃ
২০১৭ সালে দুর্গাপুর ব্যারেজের ১ নম্বর লকগেট ভাঙার স্মৃতি উসকে ফের ২০২০ সালে ভাঙল দুর্গাপুর ব্যারেজের ৩১ নম্বর লকগেট। কেটে গিয়েছে ২৪ ঘন্টা। জলশূন্য গোটা দুর্গাপুর।
দুর্গাপুর ব্যারাজ পুরোপুরি খালি হওয়ার আগেই সকালে বালির বস্তা ফেলে সাময়িকভাবে জল আটকে মেরামতির কাজ শুরু করেন সেচ দফতর ও ডিভিসির কর্মীরা। পুরো জল বের হতে আরও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ডিভিসির দাবি, জল পুরোপুরি বেরিয়ে গেলে ৩১ নম্বর লকগেটের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে মেরামতির কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। জল সঙ্কট রুখতে মজুত করা জলই আজ সরবরাহ করেছে দুর্গাপুর পুরসভা ও দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট।
দুর্গাপুর পুরসভা, দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষকে আগেই জল মজুত রাখতে বলা হয়। সেই জলই আজ ও কাল, এই দু’ দিন সরবরাহ করা হবে।
দুর্গাপুর ব্যারেজের লকগেট ভেঙে যাওয়ায় বাঁকুড়ার মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জল সরবরাহ না হলে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দেবে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন মেজিয়া বিদ্যুৎ প্রকল্পের ডিজিএম। শুধু মেজিয়া নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে ডিভিসিরও।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/rail-and-nabanna-will-meet-monday-evening/
দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টেও জলের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। একইসঙ্গে ঘাটতি হতে পারে দুর্গাপুর প্রজেক্ট লিমিটেডে। যদিও তারা দাবি করেছে, তাদের আগামী ৫ দিনের জল রিজার্ভারে রাখা আছে।
এখানেই শেষ নয়। ক্ষতির মুখে পড়লেন মৎসজীবীরাও। দুর্গাপুর ব্যারেজকে কেন্দ্র করে যেসব ক্ষুদ্র থে্কে মাঝারী শিল্প গড়ে উঠেছে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়লেন তারাও।
বারবার দুর্গাপুর ব্যারেজের এই লকগেট ভাঙার কারণে রাজ্যের সেচ দপ্তরের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন অনেকেই। কারণ, দীর্ঘকাল আগে এই লকগেট তৈরি হলেও সেচ দপ্তরের পক্ষ থেকে তার সংস্কার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
২০১৭ সালে লকগেট ভাঙার পর তৎকালীন সেচমন্ত্রী ওরফে রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ সম্পন্ন করিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দেখা মিলল না সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর।
শুধুতাই নয়। বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং অহলুওয়ালিয়াও এই পরিস্থিতিতে কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে তা প্রকাশ্যে আসেনি। পার্শ্ববর্তী আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ওর কোনো বার্তা পাওয়া যায়নি। গোটা বিষয়টি নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর।
ইতিমধ্যেই দুর্গাপুর ব্যারেজের লকগেট ভাঙার পর থেকেই রাজনৈতিক কাজিয়া তুঙ্গে। ২০১৯ সালে বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় নির্বাচনী জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তৃণমূল শিবির।
সেখানে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার ১৩০ কোটি টাকা খরচ করে ব্যারেজ সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। ২০১৭-র বিপত্তির পরে রাজ্য সরকার ব্যারেজের বাকি গেট বদল ও সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই কাজ চলছে। তা শেষ হওয়ার আগেই ফের বিপত্তি। গুরুতর এই বিষয়টি নিয়ে অযথা রাজনীতি না করারও আবেদন জানিয়েছে শাসকদল।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/besides-three-states-cpim-will-fight-against-congress-in-kerala/
সিপিএমের দাবি, জোড়াতালি দিয়ে লাভ হবে না। সাড়ে ছ’দশকের পুরনো সব গেট। বদলে নতুন গেট লাগাতে হবে। বাম আমলে বারংবার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা।
দামোদরের বন্যা থেকে অবিভক্ত বর্ধমান, বাঁকুড়া ও হুগলির নিম্ন দামোদর এলাকাকে বাঁচাতে দেশের প্রথম রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিসেবে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন গড়ে ওঠে। বন্যা প্রতিরোধ ছাড়াও সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পস্থাপন ছিল ডিভিসি-র লক্ষ্য। মাইথন, তিলাইয়া, তেনুঘাট, পাঞ্চেত ও কোনারে বাঁধ তৈরি হয়।
একমাত্র ব্যারেজটি দুর্গাপুরে গড়ে তোলা হয় ১৯৫৫ সালে। ব্যারেজ থেকে কৃষি জমিতে জল সরবরাহ করা হত। খাল খননের মাধ্যমে ব্যারেজের জল দ্বারা বর্ধমান জেলা ও বাঁকুড়া জেলার কৃষিকাজ সম্পন্ন হয়।
এই ব্যারেজটির সঙ্গে দুর্গাপুর পৌরনিগমের ৪৩ টি ওয়ার্ড যুক্ত৷ মোট ৩৪ টি লকগেট আছে দুর্গাপুর ব্যারেজে। ব্যারেজের জমা জল দামোদরের নিম্ন অববাহিকায় বয়ে যাচ্ছে৷ এর ফলে শুধুমাত্র পানীয় জলের সংকট নয়, সেচের জলের সংকটেও ভুগবে বহু এলাকা।
ইতিমধ্যে বেসরকারী পানীয় জল সরবরাহকারী কোম্পানি গুলির জলের দাম বেড়ে গিয়েছে গোটা এলাকাজুড়ে। দামোদর ব্যারেজের পর এবার ময়ুরাক্ষী, ম্যাসেঞ্জার, মাইথন, পাঞ্চেত, ফারাক্কা, তিস্তা ব্যারেজের সংস্কার নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন এলাকার মানুষরা।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/the-astrologer-emperor-jayanta-shastri-died-in-a-fire-in-his-house/
প্রসঙ্গত, ব্যারেজ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার নেপথ্যে দায়ী ভারী ট্রাক চলাচল। এই বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ব্যারেজের উপর দিয়ে যাতায়াত করা ভারী ট্রাক ও লরি গুলিকে পর্যবেক্ষণ করার দায়িত্ব লোকাল পুলিশের। এই সব জায়গায় তাদের সিন্ডিকেট চলে। ওভারলোডেড ট্রাকগুলির চলাচলে যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ব্রিজ, তেমনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রাস্তাঘাট।
প্রশ্ন এখানেই, যেখানে কলকাতার উড়ালপুলগুলির অবস্থা রক্ষণাবেক্ষণ করছেন সেখানে বাকি ব্যারেজগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখছে না কেন? তবে এক্ষেত্রে দায়িত্ব শুধু রাজ্য সরকারের একার নয়।দায় রয়েছে কেন্দ্র সরকারের।
এখন দেখার কবে দুর্গাপুর ব্যারেজের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, কবেই বা জলকষ্ট থে্কে মুক্তি পায় আমজনতা…