অফিস খুললেও নেই গণপরিবহন, সরকারের তীব্র সমালোচনায় চিকিৎসকমহল
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ রাস্তায় চলছে না সরকারি-বেসরকারি কোনরকম বাস। স্টাফ স্পেশাল ট্রেনে চড়ার অনুমতি নেই। সব কর্মীকে গাড়ি করে অফিসে নিয়ে আসা বা বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার সঙ্গতি নেই বেশীরভাগ অফিসের। সরকারি নির্দেশ মতো ২৫ শতাংশ কর্মী নিয়ে বেসরকারি অফিস চালু করার বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গণ পরিবহণ ছাড়া সাধারণ চাকুরেদের অফিস পৌঁছানো কি আদৌ সম্ভব? বাস,ট্রেন বন্ধ রেখে অফিস চালু করার সিদ্ধান্ত মফস্বলের চাকরিজীবীদের কি নতুন সঙ্কটে ফেলে দিচ্ছে না? উত্তর শহরতলীর ব্যরাকপুর থেকে দক্ষিণের সোনারপুর, বাগনান থেকে শ্রীরামপুর সর্বত্র বুধবার শর্তসাপেক্ষে বেসরকারি অফিস চালু হওয়ার প্রথম দিনে দিনভর এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খেয়েছে।
গতবার আনলক পর্ব শুরু হওয়ার পরে যানযন্ত্রনায় দূর্বিষহ হয়ে উঠেছিল মফস্বলের নিত্যযাত্রীদের জীবন। অনেকের চাকরি চলে গেছিল। অনেকের জীবিকা নিয়ে টানাটানি পড়েছিল। বেতন কাটা গেছিল অনেকের। এবার কি তারই পূনরাবৃত্তি?
অফিস খোলার প্রথম দিনেই আশঙ্কার সিঁদুরে মেঘ দেখেছেন বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা। পাশাপাশি বাস-ট্রেন-মেট্রো বন্ধ করে রেখে অফিস, বাজার, শপিং মল, রেস্তরাঁ-সহ একাধিক জায়গায় ছাড় দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে । রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের একাংশের।
সংগঠন মজবুত করে পুরভোটে বিরোধীদের টেক্কা দিতে গোপাল শেঠেই আস্থা দলের
যে পদ্ধতিতে আত্মনিয়ন্ত্রণ বা কড়া বিধিনিষেধ রাজ্য সরকার চালু করেছে, তাতে লাভের কিছু দেখছেন না চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশ। বুধবার রাজ্য সরকারের বর্তমান উদ্যোগের কিছুটা সমালোচনা করেছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ।
তিনি বলেন, ‘‘এভাবে মানুষের উপর লকডাউন বা বিধিনিষেধ যাই বলা হোক না কেন, তা চাপিয়ে দিয়ে করোনার সংক্রমণ কমানো সম্ভব নয়। বরং এর মাধ্যমে বহু সংখ্যক মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। এভাবেই সবকিছু বন্ধ না করে সরকার যদি মাইক্রো লেভেলে কনটেন্টমেন্ট জোন তৈরি করে করোনা মোকাবিলার চেষ্টা করত, তাতে অনেক ভালো ফল পাওয়া যেত।”
তিনি বলেন, “ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম এবং শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ, কেউই কেন্দ্রের লকডাউন এবং রাজ্যের কড়া বিধিনিষেধকে সমর্থন করে না।” চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণের মতে, “শেষ পর্যায়ে যে বিধিনিষেধ রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, তার কোনও বাস্তব ব্যাখ্যা আমি খুঁজে পাচ্ছি না। যদিও এটা আমার ব্যক্তিগত মত। আসলে যে বিশাল সংখ্যক মানুষকে সরকারি এবং বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তাঁরা কীভাবে সেখানে পৌছবেন, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় কথা, সব বেসরকারি অফিসের ক্ষমতা নেই তাদের কর্মীদের অফিসে নিয়ে আসার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করার। ফলে তারা কার্যক্ষেত্রে এই সুযোগের কোনও সদ্ব্যবহার করতে পারছে না। সমস্যা বাড়ছে।”
রাজ্য সরকার যদি এখনই গণপরিবহণ চালুর অনুমতি দেয়, তাহলে কতগুলি বাস বা মিনিবাস রাস্তায় নামবে, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। একদিকে টানা দেড় বছর লকডাউনে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বাস মালিকরা। অনেক বাস দীর্ঘদিন না চলার কারণে জরাজীর্ণ হয়ে গিয়েছে৷ সেগুলিকে আবার রাস্তায় চলার যোগ্য করে তোলার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন।
অন্যদিকে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, টোল প্লাজাগুলিতে ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়ানো, সব মিলিয়ে জটিল অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে গণপরিবহণ ব্যবস্থা ।জয়েন্ট কাউন্সিল বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই মুহূর্তে কেন্দ্র এবং রাজ্যের কল্যাণে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন বাস মালিকরা। তাই সরকার চাইলেও এখনই বাস নামানো সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। সরকার যদি মনে করে বেসরকারি বাস শহরের বুকে চলুক, তাহলে সবার আগে এক-দুই টাকা নয়, বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাসের ভাড়া বাড়াতে হবে। তবেই এই বেসরকারি পরিবহণ শিল্প বাঁচবে। নতুবা আমাদের পক্ষে বাস চালানো সম্ভব নয়।”
যত্রতত্র পড়ে পিপিই কিট, হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সরব রোগীর পরিজনেরা
গত এক-দু’মাস আগেও আগেও রাজ্যে করোনা সংক্রমণের যে ছবিটা ছিল, সরকারি পদক্ষেপের ফলেই তার বদল এসেছে। যেহেতু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃতীয় ঝড় আসতে পারে করোনার। সেদিক থেকে বিচার করলে সরকারকে আরও কিছুটা সময় দেওয়া উচিত।