বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসলেও মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যাগুলোর সমাধান আজ‌ও অধরা

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ মধ্যপ্রাচ্য মানে শুধু আরব দুনিয়ার বা জ্বালানির অফুরন্ত ভাণ্ডার নয়। আরব-ইজরায়েল, আরব বনাম আরব, ইরাক-ইরান, ইরান-সৌদি, শিয়া-সুন্নি, কুর্দ বনাম আরব, আইসিস এমন‌ অজস্র সমস্যা আজ‌ও দগদগে ঘা হয়ে আছে। যখন তখন যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে এখানে। ইরাক, সিরিয়াতে লড়াই চলছেই। তার‌ই মধ্যে বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন করতে চলেছে আরব দুনিয়ার দ্বিতীয় ক্ষুদ্র দেশ কাতার।

মেসি-রোনাল্ডো-নেইমার-বেঞ্জেমা’দের স্বাগত জানানোর জন্য পুরোপুরি তৈরি কাতার। ফুটবল শিল্পের সাক্ষী হতে তৈরি দেশটির ৮ টি দুর্দগন্ত স্টেডিয়াম। আয়তনে ছোট হলেও তেলের টাকায় সমৃদ্ধশালী কাতারে বিলাসবহুল হোটেল-রিসর্টের রমরমা অনেকদিন ধরেই। ফলে সারা বিশ্ব থেকে ছুটে আসা ফুটবল ভক্তরা এখানে ভালোই থাকবেন।

এ শুধু কাতারের গর্ব নয়, রুক্ষ-শুষ্ক গোটা আরব দুনিয়ার উজ্জ্বল বিজ্ঞাপন হতে চলেছে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। কিন্তু আরব দুনিয়ার বাস্তব ছবিটা যে এর ঠিক উল্টো। গোটা আরব দুনিয়ায় ইরাক আর একটি দেশেও নির্বাচিত সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করে না।

সেখানেও শিয়া-সুন্নি, কুর্দ-সুন্নি, আইসিস, গোষ্ঠীপতিদের ক্ষমতার লড়াইয়ে নিয়মিত রক্ত ঝরাটাই নিয়ম। আরেক দেশ সিরিয়ার কথা যত কম বলা যায় তত‌ই ভাল। গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার আর কিছুই প্রায় অবশিষ্ট নেই। তবু সেখানে মানুষ বসবাস করে, বেঁচে থাকে। এটাই অন্যতম আশ্চর্যজনক বিষয় হ‌ওয়া উচিৎ!

এই যে কাতারে আমেরিকা, ইংল্যান্ড খেলতে আসবে। হ্যারিকেনরা লুসাইল বা আল বাইত স্টেডিয়ামে ফুটবলের ফুট ফোটাবেন। তখন নিশ্চয়‌ই তাঁর আরব ভাইদের ইতিহাস ভুলে যাওয়ার নির্লজ্জ নজির দেখে রামাল্লার কবরে শুয়েই চোখের জল পড়বে কোন‌ও এক ইয়াসের আরাফাতের!

নিজের বাসস্থানের জমি দখল করে স্রেফ গায়ের জোরে রাতারাতি একটা দেশ তৈরির ঘটনা এই আরব দুনিয়াতেই ঘটেছে। প্যালেস্তিনে বসবাসরত আরবরা রাতারাতি নিজভূমে উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। ইংল্যান্ডের ষড়যন্ত্র ও আমেরিকার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় হঠাৎই গড়ে ওঠে ইজরায়েল রাষ্ট্র। সেই নিয়ে উদ্ভুত সমস্যা আজ‌ও বজায় আছে।

নিম্ন আয়ের ১০ শতাংশ সংরক্ষণে সব সমস্যা মিটবে কি ?

প্যালেস্তাই ইস্যুতে সেদিনের সেই আরব একতা নেই। প্রবল ক্ষমতাশালী ইজরায়েলের চোখে চোখ রেখে লড়াই করা সেই ইয়াসের আরাফাত‌ও কবরের নিশ্চিত আশ্রয়ে চলে গিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, এই ২২ তম বিশ্বকাপে যে পশ্চিমের দেশগুলো হট ফেভারিট হিসেবে শিরোনামে, তাদের‌ই প্রত্যক্ষ মদতে চলছে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ। যার কারণে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার এই দেশটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

ইরাকের সমস্যা বা বাকি আরব দেশগুলোয় মানবাধিকার হরনের কথাই বা ভুলবেন কী করে। এই যে কাতার ঝাঁ-চকচকে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চলেছে সেখানেই বহু শ্রমিকের রক্তের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে বিশ্বকাপের মাঠ, পরিকাঠামো। আর এর জন্য নাকি ক্রীতদাস প্রথা ফিরিয়ে এনেছিল দেশটি।

প্রদীপের আলোর নিচের অন্ধকারের মতো এই সব কিছুই চাপা পড়ে যাচ্ছে। চাপা পড়ে যাওয়াটাই হয়তো নিয়ম। কিন্তু ইতিহাস বড় নির্মম। তাই তার পাতায় ২০২২ এর বিশ্বকাপ কাতারে আয়োজিত হ‌ওয়ার কথা যেমন লেখা থাকবে, তেমনই লিপিবদ্ধ থাকবে আরব ভ্রাতৃত্ববোধের বিপর্যয়ের করুন গাথা।

সম্পর্কিত পোস্ট