পাথুরে মাটির নেতা নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
দ্য কোয়ারি বিশেষ প্রতিবেদনঃ ছাত্র অবস্থা থেকেই রাজনীতির প্রতি আগ্রহ বরাবরই ছিল নরেনের।আসল নাম নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। অবিভক্ত বর্ধমান জেলার, জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধক্ষ্য ছিলেন। সাফল্যের সঙ্গে কৃষির উন্নয়ন এবং ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় তার উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়।
প্রথম জীবনে উপপ্রধান।পরে প্রধান। তারপরে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য থেকে জেলা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আজ নরেন্দ্র চক্রবর্তী পশ্চিম বর্ধমান জেলার মানুষ। তবে কথায় কথায় তার পূর্ব বর্ধমান জেলার কথা বলতে বলতে অনেকটা আবেগ তাড়িত হয়ে পড়লেন।
বলছিলেন আমরা যখন জেলা পরিষদে ছিলাম আমাদের সঙ্গে সভাধিপতি ছিলেন দেবু টুডু। একটা সুমধুর সম্পর্ক ছিল। কাজ করার ক্ষেত্রে এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা বুঝে নেওয়ার ক্ষেত্রে আর মানুষের পাশে থাকা বিশেষভাবে আকর্ষিত করেছে বারবার। শিল্পাঞ্চলের দাপুটে নেতা বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমান জেলার পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক। হারিয়ে দিয়েছেন বিজেপির জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে। কথায় কথায় তার নাম মুখে আনতে চাইলেন না।
নরেন দা’র বক্তব্য “আমার নেত্রী একজন। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আমাকে সুযোগ দিয়েছেন। তাই আমি বিধানসভায় গেছি। এলাকার জলের সমস্যা আছে।রাস্তাঘাটের সমস্যা আছে। কর্মসংস্থানের বিষয় মাথায় থাকবে। কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সামগ্রিক পরিবেশ উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি। আশা করি আমার মুখ্যমন্ত্রী পাণ্ডবেশ্বর মানুষের জন্য এইসব প্রকল্প হাতে তুলে দেবেন।”
HS: ফলাফল না পসন্দ, আক্রান্ত শিক্ষক, রাস্তা অবরোধ, পড়ুয়াদের ক্ষোভ ছড়াচ্ছে
রাজনৈতিকভাবে নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বক্তব্য পরিষ্কার। “আমি যখন কোন দলের থেকে নির্বাচিত হই, সেটা সিম্বল মাত্র। আমি সবার বিধায়ক। তাই আমার দরজা খোলা সব সময়। কারো চিঠির দরকার। কারো চিকিৎসা দরকার। কারোর মেয়ের বিয়ের দরকার। কারোর পড়াশোনার সমস্যা। এরকম সামাজিক কাজ সব সময় করতে হয়।”
‘কলরব’ একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সকালে কিছু পাখির ডাক শুনতে ভালোবাসেন। তারপর পূজা পাঠ করে শুরু হয়ে যায়। দিনভর কর্মসূচি। সকাল থেকে রাত অবধি শুধু কলম চলছে তো চলছেই। আবার গাড়ির চাকা ঘুরেই যাচ্ছে।
তিনি বলেন, “আসলে মানুষ আমাকে বিধায়ক করেছে। তাই মানুষের সঙ্গে বেইমানি করতে পারবনা। অতএব আমার কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আছে বলে আমি মনে করিনা। আমি মনে করি মানুষ মনে রাখবে কাজ।মানুষ মনে রাখবে সেই রাজনৈতিক নেতার কর্মকাণ্ড। তাই জনগণকে বাদ দিয়ে কোন উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিধানসভার হাউসে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল। সেটা আমার নেত্রী পূরণ করে দিয়েছেন। যেদিন বিধানসভায় এলাম সেদিন আবেগে চোখে জল চলে এসেছিল।”
lতিনি বলেন, “শপথ নিয়েছিলাম শিল্পাঞ্চলের মানুষের জন্য কিছু করতে হবে। কারণ কোলিয়ারি এরিয়ার মানুষ নানান সমস্যায় ভোগে।চাকরি নেই। শিল্প বন্ধ কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারণে। বহু কলকারখানা বন্ধ। তাই আমাদের বিনিয়োগের উপর জোর দিতে হবে। এখানকার মাটিতে চাষ হয় খুবই কম। কিন্তু যেটা করতে হবে তা হল শিল্পতালুক। তাহলেই বেকার মেধাবী ছেলেমেয়েরা কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন।”
তাই নরেন চক্রবর্তীর আদর্শ হচ্ছে তার বাবার দেওয়া নাম নরেন্দ্রনাথ। চেয়ারের পিছনে দুটো ছবি জ্বলজ্বল করছে। একদিকে স্বামী বিবেকানন্দ আর ডানদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন দা’র অকপট স্বীকারোক্তি “স্বামীজীর নামটা আমার সঙ্গে মিলিয়ে দেবেন না। তিনি বিশ্ববরেণ্য সন্তান। তাঁর ভূমিকা সারা পৃথিবী জুড়ে। তার এক ইঞ্চি যদি কাজ করতে পারি তাহলে ভাববো আমার বাবা মায়ের দেওয়া নামটি সার্থক হয়েছে। তবে আমার বিশ্বাস পারবো। যেহেতু আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখা যাক পথ চলা শুরু হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে মানুষকে যেতে হচ্ছে।”
তাঁর কথায়, “এখানে বড় সমস্যা মানুষের জীবন জীবিকার। তারপরে কেন্দ্রীয় সরকারের অনমনীয় মনোভাব। এই সমস্ত কিছু সমস্যাকে নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প তো নিয়েছি। ওই যে বললাম স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছি। তাই এই নামটা যখন আছে মানে কিছু কাজে করতে হবে। তাই মানুষ ভালো থাকুক। সমাজ সুস্থ হোক। আমার নেত্রী ভালো থাকুক। তাহলেই দেখবেন পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভার চেহারা পাল্টে যাবে। প্রতিটি মানুষ হাসতে পারবেন।কারণ কর্মসংস্থান ও শিল্প কৃষি ,শিক্ষা এই সমস্ত অগ্রাধিকার দিতে পারলে তাহলে মানুষ মনে রাখবে আমাকে নয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।”
তাঁর কথায়, একসময় বামফ্রন্ট ছিল এই শিল্পাঞ্চলে সে অর্থে কিছু করেনি।আমার আগের যিনি বিধায়ক ছিলেন তার নাম মুখে আনতে রুচিতে লাগে। উনি কি করেছেন বা না করেননি তার উত্তর দেওয়ার সময় আমার নেই। তবে আমি আমার জয় সম্পর্কে নিশ্চিত। কারণ মানুষকে জয় করতে পারলেই সব জয় করা যায়।”