Exclusive: সুন্দরবনে বাঁধ সমস্যার পাকাপাকি এবার বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্য নেবে রাজ্য
সর্নিকা দত্ত
প্রথমে আয়লা, তারপর বুলবুল এবং হালফিলের আমফান প্রত্যেক ঘূর্ণিঝড়েই কমবেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে সুন্দরবনের সমুদ্র ও নদী বাঁধ।
আর এর ফলে সুন্দরবনের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। এই বাঁধ সংস্কারের জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন তা একা রাজ্য সরকারের পক্ষে বহন করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে সাহায্যের জন্য তাকিয়ে থাকলেও কেন্দ্রের কাছ থেকে সেভাবে সাহায্য আসছে না।
আর এর ফলে বাঁধ মেরামত করতে সময় লাগছে। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে রাজ্য সরকারের ওপর। এই অবস্থায় সুন্দরবনের বাঁধ গুলি অস্থায়ী মেরামত করা হলেও রাজ্য চাইছে এই সমস্যার পাকাপাকি সমাধান।
তবে এই বিষয়ে আর কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চাইছে না রাজ্য সরকার। বরং সুন্দরবন মাস্টারপ্ল্যান নামে একটি প্রকল্প তৈরি করে এই সমস্যার পাকাপাকি সমাধান করার উদ্যোগ নিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এক্ষেত্রে তাঁর ভরসা বিশ্ব ব্যাংক। বিশ্ব ব্যাংকের টাকায় এই এলাকার বাঁধ সংস্কার থেকে পাকাপাকিভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে চান তিনি।
আসলে কেন্দ্রীয় সরকারে থাকা শাসক দল বিজেপি রাজ্যের ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখলেও বাংলার উন্নয়ন নিয়ে সেভাবে আগ্রহী নয়।
Exclusive: আনলক ওয়ানে ঐতিহ্যের ট্রামে প্রতিদিনই বাড়ছে লোকসানের বহর
বরং বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ থেকে শুরু করে বাংলার পাওনা দেওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চনা করা হচ্ছে রাজ্যকে। এই অবস্থায় বাঁধ গুলির জন্য কেন্দ্রের কাছ থেকে অর্থ পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
ইতিমধ্যেই তাঁর নির্দেশে সুন্দরবনের কংক্রিট দিয়ে সমুদ্র বাঁধ গুলি সংস্কারের জন্য পূর্ণাঙ্গ একটা মাস্টারপ্ল্যান তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। এর জন্য একটি কমিটিও গড়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, এই কাজ করতে খরচ হবে দুই হাজার কোটি টাকা। নবান্ন সূত্রে খবর, এই প্রকল্পের জন্য সম্পূর্ণ প্লান বিশ্বব্যাংকের কাছে রাখা হবে। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বলে পরিচিত সুন্দরবনকে নবরূপে রূপায়নে বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার।
রাজ্য সরকার যে প্লান তৈরি করছে, তা মূলত সুন্দরবনের এগারোটি ব্লকে থাকা ৫৫ লক্ষ মানুষকে সুবিধা করে দেবে। আমফান বা আয়লার মত প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে প্রত্যেকবারই তাদের ঘরছাড়া হতে হয়।
রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, সুন্দরবনের নোনা জল প্রবেশের সমস্যা দীর্ঘদিনের। এর থেকে সুন্দরবনের সাধারন মানুষকে বাঁচাতে গেলে সমুদ্র বাঁধ এবং নদী বাঁধ গুলোকে পাকাপাকিভাবে কংক্রিটের করা প্রয়োজন।
এই পরিকল্পনা যেমন বিপুল অর্থের প্রয়োজন তেমনি সময় সাপেক্ষ। তবে সরকার চাইছে একটু সময় লাগলেও সুন্দরবনের মানুষের স্বার্থে পাকাপাকিভাবে সমস্যার সমাধান হোক।
সে কারণেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, খড়গপুর আই আই টি, চেন্নাইয়ের একদল সেচ বিশেষজ্ঞ ও সুন্দরবন দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরাই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ঠিক করবে কিভাবে কাজ হবে।
এ বিষয়ে রাজ্যের সুন্দরবন বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা জানিয়েছেন, দুই ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার জুড়ে বাঁধ রয়েছে।
২০০৯ সালে আয়লায় এই বাঁধের বিস্তীর্ণ এলাকাই ভেঙে যায়। সব মিলিয়ে এখনাে পর্যন্ত ৩৫০ কিলােমিটার পাকা বাঁধ তৈরি হয়েছে। এবার আমফানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মন্ত্রীর অভিযােগ, বাম আমলে বাঁধ মেরামতির জন্য বারবার দরবার করেও প্রয়ােজনীয় অর্থ মেলেনি। নদীবাঁধ যদি ঠিক প্রযুক্তি মেনে স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিয়ে, বাঁধের অবস্থানগত বৈশিষ্টের নিরিখে মেরামত করা যায়, তাহলে আম্ফানের মতাে প্রবল ঝড়ের ধাক্কা সামলানাে সম্ভব।
সুন্দরবনের সামগ্রিক উন্নয়নে কেন্দ্র থেকে ফি বছর ১০০ কোটি টাকা পাঠানাে হত নিয়ম করে। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার তা-ও বন্ধ করে দিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সাহায্য পাওয়া গেলে সমুদ্র নদীবাঁধের সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।
অর্জুনের লক্ষ্য-ভেদঃ যুবশক্তি কর্মসূচীতে যুব সমাজের সাড়ায় আপ্লুত অভিষেক
হাজারাে ঝড়ের তাণ্ডবেও আর বাঁধ ভাঙবে না। লাখ লাখ সুন্দরবনবাসীকেও নিরাশ্রয় হতে হবে না বারবার। ‘ বিপন্ন মানুষকেও বাঁচানাে যাবে বলে মন্ত্রীর মন্তব্য।
অর্থ দফতর সূত্রের খবর, সুন্দরবন এলাকায় ম্যানগ্রোভ, ঝাউ-সহ বিভিন্ন গাছ-গাছালি লাগিয়ে আরাে ১,০৬০ হেক্টর জায়গায় অরণ্য বিস্তার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
স্থির করা হয়েছে, এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই ‘বিশেষ কমিটি’ তাদের চূড়ান্ত রিপাের্ট দেবে। কাজের প্রকৃতি ও ধরন সবটাই ঠিক করে দেবে কমিটি।
সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি চাওয়া হবে। সেই প্রস্তাব তৈরি করছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র স্বয়ং।