দরকার পড়লে তিনশো নয়, তিন হাজার দিন অবধি আন্দোলন জারি থাকবেঃ হান্নান মোল্লা
।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।
বছর ঘুরে গেছে সংসদের উভয় কক্ষে পাশ হয়েছে তিন কৃষি আইন। বিতর্কিত সেই আইনের প্রতিবাদে অটুট আন্দোলন জারি রেখেছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। দেখতে দেখতে সেই আন্দোলন তিন’শো দিনের সময়সীমা পার করেছে।
বৃহত্তর আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও বাড়িয়ে তুলতে তৃতীয়বার ভারত জুড়ে বনধের ডাক দিয়েছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনগুলির পাশাপাশি এবার কৃষকদের ভারত বনধকে সমর্থন জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশন।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে সংসদে পাশ হয় তিন কৃষি আইন। কেন্দ্র সরকারের তিন কৃষি আইনের প্রতিবাদে নভেম্বর মাসে দিল্লি অভিযানের ডাক দেন দেশের ২০০ এর বেশী কৃষক সংগঠন। কিন্তু দিল্লি প্রশাসনের তরফে আটকে দেওয়া হয় তাঁদেরকে। লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাসের পাশাপাশি ব্যবহার করা হয় জলকামান। তবুও কৃষকদের আন্দোলন দমিয়ে রাখতে পারেনি সরকার।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শেষবার সরকারের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসেছিলেন কৃষকরা। তাতে বরফ গলেনি। মুখে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার কথা জানালেও আদতে তা ফলপ্রসু হয়নি৷ তাই আরও একবার বনধের ডাক দিয়েছে এসকেএম।
এসকেএমের তরফে হান্নান মোল্লা জানিয়েছেন, কৃষকদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছে সরকার। এই ৩০০ দিনে প্রায় ৬০০ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এতে সরকার বিন্দুমাত্র সহৃদয় হয়নি। বরং কৃষকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সরকার যতই বলুক কৃষকের আয় দ্বিগুণ হবে। আসলে তা জুমলা ছাড়া কিছু নয়। তবুও আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। দরকার পড়লে ৩০০ নয়, ৩০০০ দিন আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
২৭ সেপ্টেম্বর ভারত জুড়ে বনধের ডাক দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। কৃষকদের ডাকা আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে দেশের অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনগুলি। এছাড়াও একাধিক ছাত্র সংগঠন ও মহিলা সংগঠনগুলি কৃষকদের এই বনধকে সমর্থন জানিয়েছে।
এছাড়াও প্রতিটি রাজ্যে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা গঠন করা হচ্ছে সেখান থেকেও প্রচুর সমর্থন মিলছে বলে জানিয়েছেন সর্বভারতীয় কিষাণ সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা। সরকার আইন প্রত্যাহার না করা অবধি আন্দোলন জারি থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপি বিরোধি প্রচারে নেমেছে এসকেএম৷ উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং উত্তরাখণ্ড সহ একাধিক রাজ্যে নিয়মিত মহাপঞ্চায়েতের মাধ্যমে জনমত গড়ে তোলার অনন্ত প্রয়াস জারি রেখেছেন কৃষকরা৷ কৃষকদের মহাপঞ্চায়েতে উপচে পড়া মানুষের ভিড় দেখা গিয়েছে।
এর আগে সংসদের বাদল অধিবেশন চলাকালীন যন্তরমন্তরে একটানা চলেছে কিষাণ সংসদ। সরকারের তরফে সেই সাড়া মিলবে কবে? এক ফোন কলের দুরত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনা করতে কেন পিছপা হটছেন? কৃষকদের নৈতিক জয় কি অবশেষে মানুষের রায়ে হবে? আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে তার ইঙ্গিত মিলতে চলেছে।