মাত্র ১ সপ্তাহে ক্ষেত্র বদল, অগ্নিপথের আগুন বোঝাল ধর্মের থেকেও পেটের ভাত জরুরি
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে অগ্নিপথ বিতর্ককে কেন্দ্র করে বড় ট্রান্সফর্মেশনের সাক্ষী থাকল দেশ। ৭ দিন আগেই ধর্মীয় ভাবাবেগ ইস্যুতে উত্তাল হয়েছিল দেশ। পথ অবরোধ, বিক্ষোভের জেরে জনজীবন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। একই ছবি দেখা গিয়েছিল বাংলাতেও। অনেক জায়গায় প্রতিবাদ হিংসাত্মক চেহারা নেয়।
ফলে এই ধর্মীয় ভাবাবেগ ইস্যুতে গোটা দেশে মেরুকরণ ঘটে যায়। কিন্তু অগ্নিপথ বিতর্কে দেশে ফের আগুন জ্বলে উঠলেও সপ্তাহখানেক আগের ধর্মীয় মেরুকরণ পুরোপুরি মুছে গিয়েছে। রাম ও রহিম এখন একসঙ্গে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।
অগ্নিপথের প্রতিবাদে গোটা দেশ কার্যত আগুনের পথ হয়ে উঠেছে। গত দু’দিনে ২০ টিরও বেশি ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। উত্তর ভারতে আন্তঃরাজ্য চলাচল একরকম বন্ধ। ট্রেন অবরোধ, রাস্তা অবরোধের জেরে যাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে।
এই আন্দোলন পদ্ধতি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকেই বলছেন জাতীয় সম্পত্তি ধ্বংস করে এই প্রতিবাদ মেনে নেওয়া যায় না। অগ্নিপথ আন্দোলনের বিরোধীরা যে যুক্তি তুলে ধরছেন তা ভুল নয়। কিন্তু পেটের ভাত ও হাতের কাজে টান পড়লে কবেই বা মানুষের মাথা ঠিক থাকে!
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য ! শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ
সেনাবাহিনীতে চার বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা বলে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের লক্ষ লক্ষ বেকার যুবকের স্বপ্নকে ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে। এমনিতেই দেশে কর্মসংস্থানের অভাব, বেহাল অর্থনীতির জেরে অবস্থা খুবই খারাপ। এই পরিস্থিতিতে অগ্নিপথ বিতর্ক সেই ক্ষোভে ঘৃতাহুতি দিয়েছে।
বিজেপির বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ ওঠে তারা দেশে ধর্মীয় বিভাজন ঘটিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্য এবং তারপর সারা দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তাতে বিজেপির বিরুদ্ধে মেরুকরণের রাজনীতি করার অভিযোগ উঠেছিল। অনেকেই বলেছিলেন ভারতের মতো স্পর্শকাতর দেশে সাবধানে মন্তব্য করা উচিৎ।
বিজেপি বিরোধী একটি অংশের অভিযোগ ছিল বারবার ধর্মীয় মেরুকরণকে হাতিয়ার করে জলজ্যান্ত বাস্তব সমস্যাগুলো থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। এভাবেই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে চায় তাদের পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারও। কিন্তু অগ্নিপথ বিতর্কের জেরে বেশ ফ্যাঁসাদে গেরুয়া শিবির। কারণ যে উত্তর ও পশ্চিম ভারতকে বিজেপির স্বাভাবিক সমর্থনভূমি বলে মনে করা হয় সেখানেই ক্ষোভের আঁচ সবচেয়ে বেশি।
এর আগে কৃষক আন্দোলন প্রমাণ করেছে ভারতের মানুষকে যেমন ধর্মীয় ইস্যুতে তুলনায় সহজে বিভাজিত করা যায়, তেমনই পেটের ভাত হাতের কাজের বিষয়ে তারা একজোটও হতে জানে। যারা খেটে খাওয়া মানুষের কথা বলে, মনে করে দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাই আসল সমস্যা, তাদের কাছে এই প্রতিবাদ যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক বিষয়।
এখন দেখার বিষয় কৃষি আইনের মতো সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘোষিত অগ্নিপথ প্রকল্পের সিদ্ধান্ত থেকে কেন্দ্র সরে আসতে বাধ্য হয় কিনা। তবে আন্দোলনকারীদেরও প্রতিবাদের ধরণ নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা প্রয়োজন। না হলে দেশের সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন পাওয়াটা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে ।