জনপ্লাবনে ভাসল ব্রিগেড

।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।

রবিবারের বামেদের ব্রিগেড সমাবেশ ঘিরে শুরু থেকেই ছিল মানুষের উন্মাদনা। জট কাটিয়ে তিন শক্তির জোটের জনমত কতটা পাবে? তা নিয়ে জল্পনা চলছিল কয়েকমাস ধরেই। কিন্তু রবিবার ব্রিগেডের ময়দানে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে দিল মানুষের বার্তা জোটের পক্ষে রয়েছে।

প্রাথমিকস্তরে ব্রিগেডের ময়দানে বিপুল জনসমর্থন মিললেও তা ভোট পরীক্ষায় কতটা ফলপ্রসূ হবে? তা এখনই বলা সম্ভব নয়। কারণ অতীতেও এই ঘটনা একই কথা বলছে।

তবে সময় বদলেছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার ব্রিগেডের মঞ্চে একইসঙ্গে উপস্থিত বাম এবং কংগ্রেস। নতুন হিসাবে সংযুক্তিকরণ হয়েছে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের। তিনে মিলিয়ে রবিবার সংযুক্ত মোর্চার ভিড়ে ব্রিগেডের সমাবেশে যে জনজোয়ার বয়েছে তা নিয়ে রীতিমতো আলোচনা শুরু হয়েছে।

বিশেষ করে নজর কেড়েছেন আব্বাস সিদ্দিকি। এই প্রথমবার ব্রিগেডের সভায় বক্তব্য রাখলেন আব্বাস। তাঁকে ঘিরে মানুষের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনকি মঞ্চে ওঠার সময় জনসমাগম থেকে ভেসে মানুষের তারস্বরের কারণে বক্তৃতা থামাতে হয় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী।

মঞ্চে উপস্থিত সকলের সঙ্গে আব্বাস সেলিমের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন মহম্মদ সেলিম। বক্তৃতা শেষ করতে যাচ্ছিলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা। কিন্তু বিমান বসু এসে অনুরোধ করেন বক্তৃতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য।

আরও পড়ুনঃ ব্রিগেডের মঞ্চে অনুপস্থিত থাকবেন বুদ্ধবাবু, লিখিত বার্তাই প্রেরণা যোগাবে কর্মী সমর্থকদের

এদিন বক্তৃতা রাখার সময়েও আব্বাসের সৌজন্যের দাড়িপাল্লা বামেদের দিকেই একটু বেশী ঝুঁকে ছিল। যেখানে যেখানে বাম শরিকরা প্রার্থী দেবে সেখানে বাম শরিকদের জয় নিশ্চিত করার বার্তা দিলেন আব্বাস। একইসঙ্গে বিজেপি এবং বিজেপির বি টিম তৃণমূলকে বাংলা থেকে উৎখাত করার আহ্বান জানালেন তিনি।

কংগ্রেসের বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা, ভাগিদারী করতে এসেছি কারোর তোষণ করতে আসিনি। পিছিয়ে পড়া মানুষের হোক বুঝে নিতে হবে। যদি কেউ মনে করে অন্যের সঙ্গে হাত মেলানো দরকার। দরজা খোলা রয়েছে। আব্বাস সিদ্দিকি হাত মেলাবে কথা দিয়ে গেলাম।

রাজনৈতিক মহলের মতে, বামেদের সঙ্গে এখনও অবধি ৩০ টি আসন নিয়ে সমঝোতা শেষ হয়েছে। তার পরেই ব্রিগেডে উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন আব্বাস। কিন্তু ব্রিগেডের আগের সন্ধ্যেতেও কথা বলে এখনও অবধি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের ফায়সালা হয়নি। আর এরই মধ্যে ব্রিগেড মঞ্চ থেকে বার্তা দেওয়ার পরেই রাজনৈতিক মহলে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে।

রবিবারের ব্রিগেডে আব্বাস নিয়ে আলোচনার কারণ হল, শুরু থেকেই বিরোধী দলগুলি বলে এসেছে। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট এবং আব্বাস সিদ্দিকি ধর্মনিরপেক্ষ নয়। এমনকি অনেকেই মনে করেছিলেন রাজনীতিতে একেবারে কাঁচা আব্বাস। সেই সমস্ত কিছুকে নস্যাৎ করে দিয়ে আব্বাস বুঝিয়ে দিলেন তাঁর দল ধর্মনিরপেক্ষ এবং রাজনীতিতে তিনি কাঁচা নন।

ব্রিগেডের মঞ্চে আব্বাস বক্তব্য রাখলেও অন্যান্য বাম যুব নেতাদের ব্রাত্য রাখা হলে কেন? তা নিয়ে প্রশ্নও তুলতে শুরু করেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। যদিও ভোটের মুখে জোটকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছে বাম শিবির।

ব্রিগেডের মঞ্চে সুর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম থেকে শুরু করে অধীর রঞ্জন চৌধুরী এমনকি ছত্তিসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেলের বক্তব্যেও ‘সংযুক্ত মোর্চা’কে নিয়ে সেই বার্তা স্পষ্ট হল। তবে এর মধ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুর অনুপস্থিতি বাম সমর্থকদের নিরাশ করেছে। যদিও শনিবারেও সমস্ত কর্মীদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন তিনি।

তবে প্রশ্ন আবারও রবিবাসরীয় বিকেলে ব্রিগেডের মাঠে ধুলো উড়িয়ে যত সংখ্যক মানুষ বাড়ি ফিরে গেলেন, তাঁদের জনসমর্থন থাকবে তো? নাকি ভোটের অঙ্কে পাল্টে যাবে সবকিছু?

সম্পর্কিত পোস্ট