দেশ গড়তে ভোট দিন শিক্ষিত সজ্জন প্রার্থীকে
নিতীশ কুমার প্রশান্ত কিশোরকে তার দল থেকে বহিষ্কার করার পরেই প্রশান্ত কিশোর তার এই নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি তার বাকী জীবন বিহারের উন্নয়নের জন্য সমর্পণ করবেন এবং আর একটা গরীব রাজ্য হিসাবে নয়, তিনি বিহার রাজ্যকে দেশের সেরা দশ রাজ্যের ভেতরে প্রতিষ্ঠিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
||পার্থ প্রতিম বিশ্বাস||
||আইনজীবী, বারাসাত কোর্ট||
বর্তমান ভারতীয় রাজনীতিতে প্রশান্ত কিশোর একটি পরিচিত নাম। কার সঙ্গে কাজ করেননি তিনি?
গত ছয়সাত বছরে বিজেপি, কংগ্রেস, আপ, শিবসেনা, জেডিইউ, ডিএমকে, তৃনমূলের মতো দেশের নানা প্রান্তের ও নানা মতের দলগুলোর সঙ্গে তার কাজ করার অভিজ্ঞতা তৈরী হয়েছে।
এ ছাড়াও তিনি গত বছর দেড়েক নীতিশ কুমারের দল জেডিইউ-র রাজ্য সহসভাপতিও ছিলেন।
এইসব অভিজ্ঞতা থেকেই প্রশান্ত কিশোরের সাম্প্রতিকতম সিদ্ধান্ত বিহারের রাজনীতিতে নতুন দিশা আনতে চলেছে।
নিতীশ কুমার প্রশান্ত কিশোরকে তার দল থেকে বহিষ্কার করার পরেই প্রশান্ত কিশোর তার এই নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, তিনি তার বাকী জীবন বিহারের উন্নয়নের জন্য সমর্পণ করবেন এবং আর একটা গরীব রাজ্য হিসাবে নয়, তিনি বিহার রাজ্যকে দেশের সেরা দশ রাজ্যের ভেতরে প্রতিষ্ঠিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হলো, এই প্রশান্ত কিশোর কে?
কেনই বা এতগুলো প্রতিষ্ঠিত দল ও তার একাধিক নেতা থাকতে ভারতীয়রা প্রশান্ত কিশোরকে দেশের রাজনীতিতে মেনে নেবেন!
আমরা যদি ভারতবর্ষের অতীত ইতিহাস ঘাঁটি তাহলে দেখবো, মুলতঃ বংশপরম্পরায় রাজা ও নবাবদের শাসনেই ভারতীয়রা থেকেছে এবং তাতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করেছে।
সেসব শাসনে ভুরি ভুরি ভুল অপরাধ বা অত্যাচারের উদাহরণ থাকলেও ভারতীয়রা জিনগত ভাবেই সেটা মেনে নিয়েছিলো।
আরও পড়ুনঃ গোবর সংস্কৃতি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন, অপেক্ষা উত্তরের
এমনকি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও এই ধারার শাসন চলেছে। এই বিষয়টা নিয়ে কেউ কেউ গান্ধী নেহেরু পরিবারকে দোষারোপ করেন।
বাস্তবে ভারতবর্ষের সব রাজনৈতিক দলেই এই প্রথা আছে, যে যেখানে যতটুকু সুযোগ পেয়েছে ততটুকুই নিজের পরিবারের জন্য ব্যবহার করেছে এবং সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে।
মেহেবুবা মুফতি থেকে স্ট্যালিন, বাংলার ভাইপো থেকে গুজরাটের জয় শাহ, তেজস্বী যাদব অখিলেশ যাদবরা সেই রাজনীতিরই ফসল।
এদের ভেতরে একমাত্র নেহেরু গান্ধী পরিবারই বিশ্বের দরবারে দেশের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে।
কিন্তু সেসব স্বত্তেও ওই পারিবারিক প্রথার কারণে বাকীদের থেকে অনেক বেশি করে তাদেরকেই সমালোচিত হতে হয়েছে এবং আজও হয়।
তবে এটাও বাস্তব যে, বর্তমান ভারতবর্ষে এমন বহু সাধারণ মানুষ আছেন, যারা দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার ও সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সঠিক দিশা দেখাতে পারেন।
দেশের রাজনীতিতে শিক্ষিত মানুষ না আসলে অশিক্ষিত ও মস্তানরাই যে রাজনীতিকে কুক্ষিগত করবে, এটা আজ আর নতুন করে বলার দরকার নেই।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল বা তার দলের আতিশী মার্লেনা, হার্দিক প্যাটেল, কানহাইয়া কুমারের পাশাপাশি প্রশান্ত কিশোরদের মতো শিক্ষিত নতুনরা দেশের রাজনীতিতে আসছেন।
এটা অবশ্যই ভারতীয় রাজনীতির জন্য সুখের খবর। কিন্তু এখানেই থেমে থাকলে চলবে না।
যেমন আরও বেশী করে এমন মানুষদের দেশের রাজনীতিতে আসতে হবে, তেমনই বদলাতে হবে ভারতীয় নির্বাচকমণ্ডলী বা ভোটারদের মানসিকতাও।
পছন্দের দলের প্রতীক নিয়ে একজন ঘৃন্য বাজে লোক ভোটে দাঁড়ালে তাকে শুধু প্রতীক দেখেই ভোট দিতে হবে কেন?
কেন বিপরীত দিকে থাকা বা অন্য দলের প্রতীকে দাঁড়ানো শিক্ষিত ভদ্র সজ্জন মানুষটি আপনার ভোট পাবেন না?
দেশের মানুষ না চাইলে দেশ কখনও একা একাই বদলাতে পারে না।
যারা দিন আনা দিন খাওয়া আমজনতা, যারা নিজের এবং দেশেরও উন্নয়ন চান, যারা ইতিহাস সৃষ্টি না করলেও ইতিহাসের সঙ্গী হতে চান, তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে।
আরও পড়ুনঃ আস্থা হারিয়েছে মমতার দল, বিকল্প হতে পারে বাম-কংগ্রেসের সার্বিক জোট
এবার থেকে চায়ের দোকানে, অফিস কাছারী বা বাসে ট্রেনে অথবা নিজের ড্রইং রুমে বসে সমালোচনার তুফান তোলার সঙ্গে সঙ্গে নিজের মনকে প্রস্তুত করুন।
আগামীতে যখনই ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন, নিজের দলের সম্মান বাঁচাতে এবং মনে মনে দলকে ভালোবেসেই আপনার বুথে গিয়ে সেই প্রার্থীকেই ভোট দিন, যিনি আপনার ও সমাজের বিচারে শিক্ষিত সজ্জন।
আপনার এই সিদ্ধান্ত হয়তো আপনার দলের প্রার্থীকে হারিয়েও দিতে পারে। কিন্তু তাতেও দুঃখ পাবেন না।
হয়তো আপনার এবং আপনাদের এই নীরব প্রতিবাদের ফলেই আপনার দল আর কখনও কোনো দাগী মানুষকে দলের প্রতীকে ভোটে দাঁড় করাবে না।
হয়তো আপনার ও আপনাদের এই সঠিক সিদ্ধান্তের ফলেই শুধু যে একজন শিক্ষিত সজ্জন মানুষ নেতা রুপে আসবেন তাই নয়, এর ফলে ভবিষ্যতে আরও অনেক শিক্ষিত মানুষ রাজনীতিতে আসার উৎসাহ পাবেন ।
এভাবেই দেশের আমজনতার হাত ধরে দেশের রাজনীতি নতুন পথে পরিবর্তিত হবে।
কথায় আছে, এক হাতে তালি বাজে না। তালি বাজাতে দুই হাতের দরকার হয়। প্রশান্ত কিশোরই হোন অথবা আপনার এলাকার একজন মানুষ।
সুযোগ পেলেই শিক্ষিত সজ্জনদের সমর্থন করুন, ভোট দিন।
চিরাচরিত প্রথা ভাঙুন, আপনার প্রিয় দল তথা দেশ আপনার এই ক্ষুদ্র চেষ্টাতেই বদলে যাবে।