অনেক সংগ্রাম করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন, আমার রাজনৈতিক অভিভাবক হারালামঃ অধীর চৌধুরী
দ্য় কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ প্রয়াত বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি নার্সিংহোমে বুধবার গভীর রাতে তার মৃত্যু হয়।
অসুস্থতার কারণে ২১ জুলাই থেকে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল রাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে।
প্রবীণ এই রাজনীতিকে পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, বুধবার নার্সিংহোমে তিনি হাঁটাচলা করেছিলেন। পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে কথাও বলেন। কিন্তু বেশি রাতে তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। বুধবার গভীর রাতেই প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে ট্যুইট করে সভাপতির প্রয়াণের খবর জানানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে, পুরনো পেসমেকার বদল করার জন্য বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেশি থাকায়, সমস্যা তৈরি হয়েছিল। যে কারণে ডায়ালিসিস করতে হচ্ছিল।
জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট থাকার ফলে হাসপাতালে ভরতি হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর কোভিড পরীক্ষা করা হয়। তবে প্রাথমিক রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।তবে মঙ্গলবার রাত থেকে তাঁর অবস্থার ক্রমে উন্নতি হচ্ছিল বলেই জানা গিয়েছিল।
তার মধ্যে বুধবার রাতে অকস্মাত্ এই মৃত্যুর খবর। সোমেন মিত্রের প্রয়াণে বাংলার রাজনীতিতে একটা অধ্যায়ের অবসান হল।
বাংলার রাজনীতিতে সোমেন মিত্র ছিলেন একটা অধ্যায়ের মত। প্রয়াত কংগ্রেস নেতা গনিখান চৌধুরী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মত জনগণের ভালোবাসাকে কাজে লাগিয়ে তিনি প্রবাদপ্রতিম নেতৃত্বের জায়গায় উঠে এসেছিলেন।
বরাবরই সোজাসাপ্টা, খোলা মনের মানুষ ছিলেন তিনি। প্রয়াত বরকত গনিখান চৌধুরীর শিষ্য বলা হত তাঁকে। আমহার্স্ট স্ট্রিটের ‘ছোড়দা’ নামেই কংগ্রেস রাজনীতিতে বেশি পরিচিত ছিলেন সোমেন। অধুনালুপ্ত শিয়ালদহ কেন্দ্র থেকে বেশ কয়েক বার বিধায়ক হয়েছিলেন।
ভারতে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার পার
২০০৭-’০৮ সালে কংগ্রেস ছেড়ে প্রথমে প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস গঠন করেন সোমেন। তার পরে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে।
২০০৯ সালে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সাংসদও হয়েছিলেন। তবে, পাঁচ বছর কাটানোর আগেই ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে তিনি কংগ্রেসে ফিরে আসেন।
নব্বইয়ের দশকে তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের সঙ্গে কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচনে লড়াইয়ের পরেই দল ছেড়েছিলেন তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পরে নির্বাচনে বিপর্যয়ের দায় নিয়ে, ১৯৯৮ সালে সোমেন মিত্রও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর প্রায় দু-দশক পর ২০১৮-র সেপ্টেম্বরে তিনি ফের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদে ফেরেন।
রাজনৈতিক ভাবে বিরোধ থাকলেও দক্ষিণ কলকাতার নার্সিংহোমে থাকাকালীন সোমেন মিত্রের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবিবারও ফোন করে সোমেন মিত্রের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে ফুল পাঠিয়ে তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনাও করেন।এদিন সোমেন মিত্রের প্রয়াণের খবর আসার পরেই প্রকাশ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি সোমেন্দ্রনাথ মিত্রের মৃত্যুতে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ ও শিয়ালদহ কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক ছিলেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই নেতার সঙ্গে আমার অনেকদিনের পরিচয় ও হৃদ্যতা ছিল। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক জগতে অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি সোমেন্দ্রনাথ মিত্রের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।
সোমেনবাবুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীরও।
প্রয়াত সোমেন মিত্র – বঙ্গ রাজনীতিতে এক অধ্যায়ের সমাপ্তি
কংগ্রেস সূত্রের খবর, দলে এই দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে দূরত্ব থাকলেও সোমেনের স্বাস্থ্যের বিষয়ে যাবতীয় খোঁজখবর এবং পরিবারের সঙ্গে টানা যোগাযোগ রাখতেন অধীর চৌধুরী।
প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং বর্তমানে কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীও এই প্রবীণ নেতার প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন,সোমেন মিত্র আর নেই এটা ভাবতে পারছিনা, বাংলার একটা অধ্যায় সমাপ্ত হলো। সংগ্রাম করে, প্রতিকূলতার মোকাবিলা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমার রাজনৈতিক অভিভাবক, আমাকে জনপ্রতিনিধি করার মূল কারীগর সোমেন দা কে হারিয়ে আমি দুঃখে কাতর ও বেদনাহত হলাম।
সোমেন মিত্রের শেষকৃত্য সম্পন্ন সূচীঃ
সকাল ৯.৩০: বেলভিউ হাসপাতাল থেকে বিধান ভবন।
দুপুর ১২.০০ পর্যন্ত বিধান ভবন।
১২:৩০ – বিধানসভা।
বিধানসভা থেকে বাসভবন ৩ নং লোয়ার রডন স্ট্রিট।
সেখান থেকে আদি বাড়ি ৪৫ নম্বর আমহাস্ট স্ট্রিট।
তারপর নিমতলা মহা শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।