রাজ্যপাল দিয়ে বিরক্ত, বিজেপি আমলে তছনছ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বিজেপির হিন্দু রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন সফল হবে কিনা তা সময় বলবে। তবে নরেন্দ্র মোদির শাসনে ভারতবর্ষের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো যে একটু একটু করে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা একের পর এক ঘটনাক্রম থেকেই প্রমাণিত।
বাংলায় রাজ্যপাল থাকাকালীন জগদীপ ধনখড় বা কেরলের আরিফ মহম্মদ, নির্বাচিত সরকারকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে অতিষ্ট করে তুলে রাজনৈতিক ফায়দা লাভ করাটাই যেন গেরুয়া শিবিরের অ্যাজেন্ডা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অথচ ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি দেশের বর্তমান সংবিধান বলবৎ হওয়ার সময় পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছিল, রাজ্যপাল কখনওই নির্বাচিত সরকারের ঊর্ধ্বে নন। তিনি রাজ্যের অভিভাবক হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ কংগ্রেস আমলে কোনও কোনও রাজ্যপাল অতি সক্রিয় হয়ে কিছু সমস্যা তৈরীর চেষ্টা করেছিলেন।
তবে সার্বিকভাবে এমন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো লংঘনের ঘটনা ঘটেনি। সবচেয়ে বড় কথা মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে শেষ দুই দশক ধরে রাজ্যপালের অতি সক্রিয়তা ধীরে ধীরে কমছিল। কিন্তু মোদি জামানায় বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে দেখা যাচ্ছে রাজভবন থেকে যেন সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, কাজে না করলেও সারা দেশজুড়ে পুলিশের এক পোশাক, তাকে একই নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টাও বুঝিয়ে দেয় কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো লংঘন হচ্ছে। বারে বারে রাজ্যগুলির অধিকার ও একতিয়ারে হস্তক্ষেপ গোটাটাই যুক্তরাষ্ট্রের বদলে ভারতের শাসনব্যবস্থাকে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রীয় শাসনে পরিণত করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
চোর না ধরলে টাকা পাবে না বাংলা!
অবশ্য বিজেপির এইসব পদক্ষেপ একটা বড় অংশের জনগণের সমর্থন পাচ্ছে। তার কারণ আঞ্চলিক বিরোধী দলগুলোর সীমাহীন দুর্নীতি ও স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব। এই দুর্নীতির জ্বালায় অতিষ্ঠ আমজনতা তখন কেন্দ্রীয় শাসকদের চাপিয়ে দেওয়াতেই মুক্তির দিশা খুঁজছেন। তাতে সাময়িকভাবে সুরাহা হলেও দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্যে বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।
ভারতবর্ষের মতো ভাষা ও জাতির ভিন্নতা সম্পন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্র শাসন কাঠামোই সবচেয়ে আদর্শ। সেখানে একনায়ক কেন্দ্রীয় শাসন বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতার বোধকে আরও উস্কে দিতে পারে। কিন্তু এক অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রের ভাবনায় মশগুল বিজেপি ও আরএসএস সেসব ভাবতেই রাজি নয়। তারা সবকিছুই ক্ষমতার জোরে দমিয়ে দেওয়ার কথা ভাবে। যদিও ইতিহাস বারবার অন্য কথাই প্রমাণ করে এসেছে।