একরাশ প্রশ্ন নিয়েই হতে চলেছে গঙ্গাসাগর মেলা
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্ক: এই মহামারী পরিস্থিতিতে বাংলার মানুষের নিস্তারের শেষ আশাটুকুও বুঝি শেষ গেল কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে! চিকিৎসক থেকে সাধারণ মানুষ, সকলেই বারবার দাবি জানিয়েছিলেন এই পরিস্থিতিতে এবারের গঙ্গাসাগর মেলা বাতিল করা হোক।
এই দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট এই বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি দিয়েছে।
ঘটনাক্রম থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট এই অনুমতিতে যতই শর্তসাপেক্ষ কথাটা লেখা থাক না কেন, গঙ্গাসাগর মেলা হচ্ছেই। যার অর্থ বিহার, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে অসংখ্য তীর্থযাত্রী বাংলায় এসে হাজির হবেন। এদের বেশিরভাগই কলকাতা হয়ে ডায়মন্ড হারবার রোড ধরে গঙ্গাসাগরে গিয়ে পৌঁছবেন।
রাজ্য সরকার ৩ জানুয়ারি নতুন কোভিড বিধি জারি করে জানিয়েছিল শারীরিক দূরত্বকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সেইসঙ্গে ঘোষণা করে বাংলায় ঢুকতে গেলে আরটিপিসিআর টেস্ট আবশ্যক।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী বাস, ভেসেল ইত্যাদিতে করে সাগরদ্বীপে গিয়ে হাজির হবেন তাঁরা কি করে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখবেন? এই লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর আরটিপিসিআর টেস্ট করার মতো পরিকাঠামো কী আদৌ রাজ্যের আছে? বা রাতারাতি পরিকাঠামো গড়ে তুললেও আদৌ কী লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর করোনা পরীক্ষা নিয়ম মেনে করা সম্ভব?
সংশয়। এদিকে কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানিয়েছেন ই-স্নানের উপর বেশি জোর দেওয়া হবে। কিন্তু যে পুণ্যার্থী একবার গঙ্গাসাগরে গিয়ে হাজির হবেন তিনি কেন ই-স্নান করতে রাজি হবেন! তিনি তো এতটা পথ উজিয়ে যাচ্ছেনই মকর সংক্রান্তির দিন সাগরে ডুব দেওয়ার জন্য।
এমনিতেই গঙ্গাসাগরে সরকার যতই উদ্যোগ নিক, ভূ-প্রকৃতিগত কারণে সেখানকার পরিকাঠামো বিশেষ উন্নত নয়। বেশকিছু খামতি আছে। এই পরিস্থিতিতে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী সর্বক্ষণ মাস্ক পরে আদৌ থাকবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। বিশেষ করে স্নান করার সময় তাঁদের ড্রপলেট থেকে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ।
এই পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগর মেলার পর সংক্রমণ যদি আরও ভয়াবহ পর্যায়ে গিয়ে হাজির হয় তবে কী রাজ্যজুড়ে পূর্ণাঙ্গ লকডাউন ঘোষণা করবে সরকার? সেই প্রশ্ন কিন্তু ইতিমধ্যেই উঠছে। সব মিলিয়ে গঙ্গাসাগর মেলা এবার আর আনন্দ নয়, বরং রাজ্যের আমজনতাকে অনেকটাই চিন্তায় ফেলে দিল।