জম্মু-কাশ্মীরের ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের বর্ষপূর্তির দিনেই লেফটেন্যান্ট গর্ভনর পদ থেকে বিদায় নিলেন গিরিশ চন্দ্র মুর্মু

শুভজিত চক্রবর্তী

জম্মু-কাশ্মীরের ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের বর্ষ পুর্তির দিনেই লেফটেন্যান্ট গর্ভনর পদ থেকে বিদায় নিলেন গিরিশ চন্দ্র মুর্মু। পরিবর্তে সেই পদের জন্য নির্বাচিত করা হল প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনোজ সিনহাকে।

দিন পরিবর্তনের সাথে সাথে সিএজি পদে নিযুক্ত হলেন তিনি। এতদিন এই গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন রাজীব মহর্ষি।

সূত্রের খবর, ৮ অগাস্ট ৬৫ বছরে পা দিতে চলেছেন রাজীব মহর্ষি। তাই এই পদে দ্রুত পরিবর্তন আনতে এই পদক্ষেপ নিতে হল সরকারকে।

যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে জম্মু-কাশ্মীরে সরকার ভেঙে যাওয়ার পর থেকে নির্বাচন হয়নি। তাই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরেই এই জিসি মুর্মুকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে হাঁটতে হয় কেন্দ্রকে।

এবার আসি সিএজির কথায়। সরকারের প্রতিটি হিসেব রাখার দায়িত্বভার সিএজির হাতে থাকে। যা ভারতের মত গণতান্ত্রিক দেশে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

২০১৪ সালে কংগ্রেস সরকারের পতনের অন্যতম কারণ হিসাবে ধরা হয় টুজি স্পেকটার্ম দুর্নীতি। যার রিপোর্ট পেশ করেছিলেন ততকালীন সিএজি বিনোদ রাই। পরবর্তীকালে মামলা কোর্টে গড়ালে অভিযুক্তরা মুক্তি পান।

পুরাতন রীতি অনুযায়ী সংসদে বাজেট অধিবেশনের আগেই সিএজির রিপোর্ট পৌঁছে যায়। সংসদে এবিষয়ে আলোচনার জন্য সিএজির বিস্তারিত রিপোর্ট জনসমক্ষে আনা হয়।

কিন্তু গত কয়েক বছরে সিএজি প্রকাশিত এই রিপোর্ট পেশ করতে গিয়ে অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে। স্ক্রোল ডট ইন প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৪ থেকে ২০১৯ অবধি রিপোর্ট জমা দিতে ৯০ দিন অবধি দেরি হয়েছে সিএজির।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ৩২ টি রিপোর্ট সংসদে জমা পড়ে। যার মধ্যে ৮ টি অডিট রিপোর্ট জমা দিতে ৯০ দিনের বেশী সময় লেগে যায়।

২০১৫ সালে ৩১ টি রিপোর্ট জমা পড়ে যার মধ্যে ছটি রিপোর্ট দেরিতে জমা পড়ে। ২০১৬ সালে ৪৭ টি রিপোর্ট জমা পড়ে। যার মধ্যে ২ টি রিপোর্ট জমা দিতে ৯০ দিনের অধিক সময় লেগে যায়।

২০১৭ সালে ৩৮ টি রিপোর্ট জমা পড়ে। যার মধ্যে ১০ টি অডিট রিপোর্ট জমা দিতে সিএজির বেশ অনেকটা সময় লেগে যায়। ২০১৮ সালে প্রথম দফার মোদি সরকারের শেষ বছরে ১৭ টি অডিট রিপোর্টের মধ্যে ৮ টি অডিট রিপোর্ট জমা পড়তে ৯০ দিনের অধিক সময় লাগে।

এমনকি মোদি টু পয়েন্ট ও তে সেই ধারা বজায় থাকে। ২১ টির মধ্যে ৭ টি অডিট রিপোর্ট জমা দিতে সিএজির ৯০ দিনের অধিক সময় লেগে যায়।

বিশ্লেষকদের মতে, অডিট রিপোর্ট নিয়ে কোনরকম আলোচনা এড়িয়ে যেতে দেরিতে পেশ করা হচ্ছে। অডিট রিপোর্ট পেশ করার পরেই বিষয়টি পাবলিক একাউন্টস কমিটি এবং কমিটি অব পাবলিক আন্ডারটেকিংসের আলোচনার বিষয় হতে পারে।

রিপোর্ট অনুযায়ী কিছু বিষয়ের অডিট রিপোর্ট সংসদ এবং বিধানসভা উভয় ক্ষেত্রেই আগে জমা পড়লেও পুর্বপরিকল্পিতভাবে তা প্রকাশ্যে আনা হয় না।

যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কৃষি ও শস্য বীমা প্রকল্প, ২০১৭ সালের নমামি গঙ্গে প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনা, তফশিলী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা যোজনা। এছাড়াও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনামূলক বিষয়বস্তুর অডিট দেরিতে জমা পড়ার কার‍ণে বিস্তর আলোচনা হয়নি।

“সত্যিই কী কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ খতম হয়েছে? এক বছর পরেও কেন কার্ফু লাগু করতে হচ্ছে?”

চলতি বছরে ৩০ জানুয়ারি থেকে সংসদে অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের শুরুতেই সিএজির অডিট রিপোর্টের আশা করা হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। বরং পুর্ব প্রস্তাবিত শুল্ক এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের অডিট জমা পড়ে। যা ২০১৯ এর ডিসেম্বর মাসে আনা যেত। ২৩ শে মার্চ সংসদ মুলতুবী ঘোষণার আগে অবধি নতুন করে অডিট রিপোর্ট জমা পড়েনি।

এমনিতে ফিসকাল ইয়ার শেষের পরেই অডিট শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। সম্পুর্ণভাবে অডিট তৈরির আগে তার রূপরেখা তৈরি করতে অনেকটাই সময় লেগে যায়। যতদ্রুত সম্ভব এই প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করতে ১৯৭১ এর সিএজির আইনে পরিবর্তন আনার জন্য প্রস্তাব আনা হয়।

কিন্তু সেই প্রস্তাব নিয়ে বহু সময় ধরে আর কোনও আলোচনা হয়নি। এখন প্রশ্ন হল সিএজির নয়া পদে নিযুক্ত জিসি মুর্মু কি পারবেন সরকারের আর্থিক আয় ব্যায়ের হিসেব দ্রুত জনসমক্ষে তুলে ধরতে?

১৯৮৫ এর গুজরাট ক্যাডার থেকে পাশ করেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট গভর্নর। গুজরাটে নরেন্দ্র মোদি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তার সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রী পদে মোদি নিযুক্ত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের ব্যয় বিভাগের যুগ্ম সচিব পদে নিযুক্ত হন।

গত বছরের নভেম্বর মাসেই জিসি মুর্মুর কর্মজীবনে ইতি টানার আগেই নতুনভাবে গঠিত জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদে নিযুক্ত হন তিনি।

শুধুমাত্র কি পুর্ববর্তী সিএজি রাজীব মহর্ষির রিটায়ারমেন্টের কথা ভেবেই কি জিসি মুর্মুকে আনা হল? নাকি জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে অসামঞ্জস্য তৈরি হয়েছে? সেকারণে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে বেছে নেওয়া হল! এই নিয়েই আপাতত চর্চা রাজনৈতিক মহলে।

সম্পর্কিত পোস্ট