পদের লোভ নাকি অন্য কোনো কারণ? প্রকাশ্যে অভিষেকের সমালোচনায় কল্যাণকে প্রশ্ন কর্মীদের
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ এই বাংলায় এখন চর্চিত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ৩৭ বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নেতা। বাকি তিনি কাউকে নেতা মানতে নারাজ। মানে সরাসরি অভিযোগ করছেন বা বলছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে বেশ চর্চা শুরু হয়েছে।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে বিধায়ক। তারপরে শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রয়াত সাংসদ আকবর আলী খন্দকারের মৃত্যুর পর তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই তিনি জিতেছেন।যদিও তাঁর নিজের ক্যারিশমায় জিতেছেন বলে কেউ বলে না। সংসদের ভেতরে হোক বা বাইরে তিনি যে সমস্ত বক্তব্য রাখেন, যে ভাষায় আক্রমণ করেন মোদি সরকারকে তার অনুপ্রেরণা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
কিন্তু নিন্দুকেরা বলেন যখন শ্রীরামপুরের সাধারণ কর্মী থেকে নেতাদের সঙ্গে তিনি যে ভাষায় কথা বলেন বা ব্যবহার করেন তখন মনে পড়ে না তার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে সহজ-সরল ভাবে মেলামেশা করেন।
কালীঘাটের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে শ্রীরামপুর লোকসভা থেকে টিকিট পাবেন না কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা নিশ্চিত। কারণ, সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন মামলার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টে বা হাইকোর্টে জিতাতে পারেননি তিনি। অথচ দাবি করেন তিনি নাকি দুর্দান্ত আইনজীবী! তাঁর পেশা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলছেন না কেউ। প্রশ্ন তুলছেন তিনি যে ভাষায় আক্রমণ করছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে তা নিয়ে।
২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের ১০৮ টি পুরসভার ভোট, জানালো কমিশন
দলের সমর্থক ও নেতা থেকে মন্ত্রী সকলেই বিরক্ত। কারণ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এটা জানা উচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে তিনি ‘সাংসদ’ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় হতে পারতেন না। অভিষেককে আক্রমণ করা মানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অসম্মান করা। কথায় কথায় তিনি বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে থাকেন। ঠাকুরের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কখনো আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তাঁর ব্যবহার এতটাই নিম্নমানের যে কর্মীরা চোখের জল ফেলতে ফেলতে বাড়ি ফিরে যান।
অথচ তিনি ভুলে যান এই কর্মীরাই তার হয়ে নির্বাচনী প্রচার করেছেন। দিনে-দুপুরে হোক তারা সময় ব্যয় করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে তারা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য ভোট চেয়েছেন। ভারতবর্ষের রাজনীতিতে অনেকই আছেন যারা পারিবারিক সূত্রে উঠে এসেছেন রাজনীতিতে। এন টি রামা রাও, করুণানিধি, চন্দ্রবাবু নাইডু, শরদ পাওয়ার, লালু প্রসাদ যাদব ,বিজু পট্টনায়ক ,তরুণ গগৈ এদের পরিবারের সন্তান রাজনীতিতে এসেছেন তাদের হাত ধরে। তাহলে অভিষেকের ক্ষেত্রে কল্যাণ বাবুর অসুবিধাটা কোথায়?
তিনি কেন বলছেন যে পারিবারিক সূত্রেj হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছেন অভিষেক। এ কথার অর্থ কি? সকাল থেকে আকাশের মেঘ ভার। পৌর নির্বাচন পিছিয়ে গেছে। গঙ্গাসাগর মেলা শেষের মুখে। আর ঠিক সেই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে উঠেছে ‘শ্রীরামপুরে নতুন সাংসদ চাই’। যার শ্রষ্ঠা আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়।
দলের ভেতরে-বাইরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে সমালোচনা ঢেউ উঠতে শুরু করেছে। তৃণমূলের সংসদীয় নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সকলকে সংযত থাকতে বলেছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বাকিদের সংযত থাকার পাশাপাশি কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে শোভনীয় আচরণ করতে বলেছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্তাল ঢেউয়ের হাত থেকে কি কল্যাণ বাবু বাঁচবেন? নাকি দক্ষিণেশ্বরে মন্দিরে গিয়ে দক্ষিণাকালীর সামনে অঝোরে কাঁদবেন? নাকি বলবেন আমি যা বলেছি ভুল করেছি, আমাকে ক্ষমা করে দাও! কর্মীরা বলছেন কোন ক্ষমা নয়। দলকে প্রকাশ্যে কালিমালিপ্ত করলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দল তাড়িয়ে দিক। আমি আট লক্ষ টাকা আয় করতে পারি ওকালতি করে। কর্মীদের বক্তব্য, আপনাকে কেউ বারন করেনি যে আপনি ওকালতি করবেন না। আপনি রাজ্য সরকারের সমস্ত মামলাগুলো করেছিলেন। অধিকাংশ ফলাফল সকলের জানা। দল আপনাকে গুরুত্ব দিয়েছে। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচন আপনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রচারে গেছেন। দলের সাংসদ আছেন। তাহলে আপনার সমস্যাটা কোথায়? পদের লোভ? নাকি অন্য কোনো কারণ?