ভোট আটকাতে গুরুংয়ের অনশন ব্যর্থ, সরকারের কৌশলে মোর্চার পাশে নেই পাহাড়ের কেউ
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ চলতি বছরের প্রথম দিকে যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনের বকেয়া নির্বাচনগুলো একে একে সারতে শুরু করেছে সরকার। প্রথমে পুরনিগমগুলি ও পরে পুরসভাগুলির বকেয়া নির্বাচন হয়েছে। এবার গোর্খা টেরিটোরিয়াল এডমিনিস্ট্রেশন ও শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের বকেয়া নির্বাচন হবে। কিন্তু এই ভোট আটকাতে বিমল গুরুংয়ের অনশন ও তার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আবারও চর্চায় উঠে এসেছে দার্জিলিং পাহাড়।
বছর তিনেক আগেও রাজ্যের পাহাড়ে শেষকথা ছিলেন বিমল গুরুং এবং তাঁর দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। রাজ্য পুলিশের অফিসার অমিতাভ মালিকের অস্বাভাবিক মৃত্যু ও তার জেরে বিমল গুরুং-রোশন গিরিদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ওঠার পর গোটা পাহাড়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমূল বদলে যায়।
দীর্ঘদিন আত্মগোপন করে থেকে দার্জিলিং পাহাড়ে বিজেপিকে সাহায্য করে আসছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেই বিজেপি বিশ্বাসঘাতকতা করার পর বোধোদয় হয় গুরুংয়ের। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের মাসখানেক আগে হঠাৎ সর্বসমক্ষে উদয় হয় গুরুং -রোশন গিরিদের। তাঁরা জানান বিজেপি নয়, এবার তৃণমূলকে সমর্থন করবেন।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে দার্জিলিং পাহাড়ের তিনটি আসনে মিশ্র ফল হয়। কিন্তু ওই নির্বাচনেই অনুমান করা গিয়েছিল পাহাড়ে আর আগের দাপট নেই বিমল গুরুংয়ের। মাসখানেক আগে দার্জিলিং পুরসভা নির্বাচনে এই অনুমান বাস্তবে পরিণত হয়।
KK Death : কলকাতায় হঠাৎই প্রয়াত বিখ্যাত গায়ক কে কে
সেখানে মাত্র তিন মাস আগে পথ চলা শুরু করে পুরসভার দখল নেয় গুরুংয়েরই প্রাক্তন ছায়াসঙ্গী অজয় এডোয়ার্ডের হামরো পার্টি। এছাড়াও পাহাড়ে উল্লেখযোগ্য শক্তি হিসেবে উঠে আসে আনীত থাপার রাষ্ট্রীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। এই অবস্থায় পাহাড়ের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ঘোষণা করে তাদের মূল লক্ষ্য পাহাড়ের উন্নয়ন ও স্থায়ী শান্তি।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিমল গুরুংও জানিয়েছিলেন তিনি পৃথক রাজ্যের দাবি ছাড়ছেন। বাংলার মধ্যে থেকেই সর্বোচ্চ স্বায়ত্বশাসন চান। সেই সময় তিনি হয়তো ভেবেছিলেন পাহাড়ের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব তাঁর হাতেই থাকবে। কিন্তু হামরো পার্টি ও রাষ্ট্রীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা এবং তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তরোত্তর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে গুরুং হয়তো ভয় পান।
বুঝতে পারেন তিনি ধীরে ধীরে রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছেন। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা এই আশঙ্কার কারণেই জিটিএ নির্বাচন করতে চাননি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান। কারণ তিনি জানতেন নির্বাচন হলে তাঁর দল এবার মুখ থুবরে পড়বে।
এই কারণে রাজ্য নির্বাচন কমিশন জিটিএ নির্বাচনের কথা ঘোষণা করতেই অনশনে বসেন গুরুং। ৫ দিন অনশনের পর তাঁর শারিরীক পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শোনা যাচ্ছে এরপর সিকিমে চলে গিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য সিকিমে থেকে বরাবর সাহায্য পেয়ে এসেছেন গুরুং।
প্রশ্ন হচ্ছে গুরুং অনশনে বসা সত্ত্বেও কেন তাঁর সঙ্গে কোনরকম আলোচনায় গেল না রাজ্য সরকার। সূত্রের খবর, গোয়েন্দা সূত্রে নবান্ন জানতে পেরেছে গুরুংয়ের সঙ্গে পাহাড়ে সমর্থন বলতে কিছু নেই। বরং দার্জিলিঙের সমস্ত জনজাতির মানুষই চাইছে নির্বাচন হোক। আবার স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক। দিনের পর দিন পর দিন আন্দোলন, অবরোধের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে পাহাড়ের।
তাছাড়া পাহাড়ের যুব সম্প্রদায়কে পরবর্তী ধাপ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে বিমল গুরুং এন্ড কোং। এই পরিস্থিতিতে পাহাড়ের বাকি রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ জিটিএর ক্ষমতায় থাকাকালীন বিমল গুরুং ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা কেন্দ্র এবং রাজ্যের দেওয়া অর্থ লুটেপুটে খেয়েছেন। তাঁদের সেই দুর্নীতি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়েই নির্বাচনের বিরোধিতা করছেন।
সবমিলিয়ে একটা বিষয় পরিষ্কার হাতের শেষ তাস খেলে ফেলেছেন গুরুং। কিন্তু তাতে লাভের বদলে তিনি নিজেই মাত হয়ে যাওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে।