“সত্যিই কী কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ খতম হয়েছে? এক বছর পরেও কেন কার্ফু লাগু করতে হচ্ছে?”
বুধবার জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্য়াহারের এক বছর পূর্তি হল। কেমন আছে জম্মু কাশ্মীর? পরিস্থিতি কী আগের থেকে সত্যিই পরিবর্তন হয়েছে? সেইসব জানতেই আমরা টেলিফোনে কথা বলেছিলাম কুলগাওয়ের সিপি(আই)এম বিধায়ক ইউসুফ তারিগামিরর সঙ্গে। তাঁর বক্তব্যের ভিত্তিতেই এই প্রতিবেদন…..
জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার একবছর উপলক্ষে ফারুক আবদুল্লাহ সাহেব সমস্ত বিরোধী দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক ডাকেন। তার আগের দিন কার্ফু ছিল। আজ কার্ফু তুলে নেওয়া হলেও আমাদের কাউকেই বৈঠকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
এখান থেকেই কতগুলো জিনিস পরিষ্কার। এক, এই সরকার প্রতি পদক্ষেপে মিথ্যে কথা বলে। প্রথমে কোনও কারণ দেখিয়ে কার্ফু জারি করে দিল। পরে তা তুলে নেওয়া হলেও রেস্ট্রিকশন জারি করা হল। আমাদের মুভমেন্ট কেন করতে দেওয়া হচ্ছে না? কেন মানুষের মত একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না?
পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে কোন ‘স্বাভাবিকের’ কথা বলা হচ্ছে? এক বছর পর আপনি বৈঠক করতে দিচ্ছেন না, তখন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে আপনি কোন স্বাভাবিকের কথা বলছেন।
দ্বিতীয় প্রশ্ন ওঠে উন্নয়নের। কোন উন্নয়নের কথা আপনারা বলেছেন? এক বছরে কোন উন্নয়ন কাশ্মীরে হয়েছে? এক বছরেও লকডাউন শেষ হল না। অসহায় অবস্থায় মানুষকে বন্দি থাকতে হচ্ছে। তাহলে মুক্তি কোথায়?
আমার তো অনেক আগে থেকেই প্রশ্ন রয়েছে যে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা আপনি বলছেন, সেটা কতটা করতে পেরেছেন? প্রশ্ন তো ওনাদেরকে করা উচিত আপনারা এক বছরে কতটা করলেন?
জম্মু-কাশ্মীরে যখন বিজেপি এবং পিডিপির মিলিত সরকার ছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসে প্যাকেজের ঘোষণা করেছিলেন, সেটা বাস্তবায়নে কতটা খরচ হয়েছে?
একইরকম ভাবে, জম্মু-কাশ্মীরের চাকরিহীন যুবকদের জন্য কতটা কর্মসংস্থান আপনারা গড়ে তুলতে পেরেছেন? এর সঙ্গে জড়িত আরও একটি প্রশ্ন, জম্মু-কাশ্মীরের সরকারি সেক্টরে কতজন মানুষ কাজ হারিয়েছেন? শুধুমাত্র এই করোনা বিপর্যয়ের জন্য নয়। আমি বলতে চাইছি পুরো এক বছরে কতজন সরকারি সেক্টরে চাকরি হারিয়েছেন? সেই খবর কি রাখেন?
আপনি জম্মু-কাশ্মীরের বিজেনেজ চেম্বার্স থেকে জিজ্ঞেস করুন। কি অবস্থায় রয়েছে তাঁরা রয়েছেন? আমি আপনাকে এটা বলতে পারি কাশ্মীরের বিজনেজ চেম্বার্সগুলি এই মুহুর্তে জেগে থাকলেও, জম্মুর বিজনেজ চেম্বার্সগুলি এখন কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতির কারণে ডুবতে বসেছে।
কৃষি ব্যবস্থা কি অবস্থায় রয়েছে? যেখানে যোগাযোগ একেবারে বন্ধ থাকায় আমদানিও বন্ধ।
প্রশ্ন করা দরকার ই-কমার্স গুলির এই মুহুর্তে অবস্থা কি? ই-কমার্স গুলিকে তো ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করতে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে টেলিফোন ইন্টারনেট ব্যবস্থা বন্ধ। টুজি থাকলেও সপ্তাহের বেশীরভাগ দিন তা বন্ধ। তাহলে ই-কমার্সগুলি কিভাবে কাজ করবে?
EXCLUSIVE: গোটা দেশজুড়ে যা চলছে তা একেবারে কাম্য নয়ঃ ইউসুফ তারিগামি
কোনওরকম কোনও আলোচনা ছাড়াই নতুন শিক্ষাব্যবস্থা আনা হল। এর ফল কি হবে কেউ জানে না। কাশ্মীরের মানুষ তো গত একবছর ধরে লকডাউনে বন্দি। কিন্তু জম্মুর বেশ কিছু জায়গায় করোনার কারণে বন্ধ থাকলেও এতদিন টানা বন্ধ ছিল না।
কিছু কিছু জায়গায় খোলা ছিল। সেখানে স্কুল-কলেজ কতদিন খোলা হয়েছে? মহামারিতে রোজগেরে মজুরদের জন্য ভাবার সময় সরকারের নেই। তাদের পেট চালানোর জন্য অর্থও সরকারের কাছে নেই।
৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, সন্ত্রাসবাদ খতম হবে। জম্মু-কাশ্মীরে উন্নয়ন হবে। নতুন করে কর্মসংস্থান গজিয়ে উঠবে। আমি তার ভিত্তিতেই বলছি আপনি সন্ত্রাসবাদ খতম হয়ে যাওয়ার যখন বলছেন, তখন কার্ফু কেন লাগু করতে হচ্ছে?
সুপ্রিম কোর্টে আপনি বলছেন সন্ত্রাসবাদের কথা মাথায় রেখে এখন ফোর জি চালু করা সম্ভব নয়৷ এখন তো আপনার কথাতেই দ্বিচারিতা প্রকাশ পাচ্ছে। যে সরকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মৌলিক কর্তব্য ছিনিয়ে নেয়, সেই সরকারের কথা কি বিশ্বাস করা যায়?
যেটা বিশ্বাস করা সম্ভব তা হল মিথ্যা প্রতিশ্রুতি।