“আপনার ছেলে ইনসাফ পেয়েছে?” রিজওয়ানুরের মাকে তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্ন আনিসের বাবার
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ছেলে কোটিপতির মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করে তাদের গরীবের ঘরে নিয়ে এসেছিল। ভিন ধর্মের এই বিয়ে ছেলের খুশির কথা মাথায় রেখে মেনে নিয়েছিলেন বৃদ্ধা কিশোয়ার জাহান। কিন্তু পরিণতি সুখের হয়নি। মাসখানেকের মধ্যে রেল লাইনের ধার থেকে উদ্ধার হয় কিশোয়ার জাহানের ছেলে রিজওয়ানুর রহমানের দেহ।
সেই কিশোয়ার জাহান এবার মৃত ছাত্র নেতা আনিস খানের বাবা সালেম শেখকে ফোন করলেন। সদ্য সন্তানহারা পিতার দুঃখ ভাগ করে নেন এক দশক আগে সন্তান হারা এই মা। রিজওয়ানুর রহমানের মৃত্যুর পর কলকাতা শহর ও রাজ্যের মানুষ ন্যায়বিচারের দাবিতে প্রবল আন্দোলন দেখেছিল। একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই ঘটনায় তৎকালীন শাসকদল সিপিএম ও কলকাতা পুলিশের একাধিক কর্তার বিরুদ্ধে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। আদায় করে নিয়েছিলেন সিবিআই তদন্তের দাবি। যদিও এখনও পর্যন্ত তদন্ত শেষ করতে পারেনি সিবিআই।
এদিকে আমতার প্রতিবাদী ছাত্র নেতা আনিস খানের মৃত্যুতে বর্তমান শাসকদল তৃণমূল একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। আনিসের পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ আমতার তৃণমূল বিধায়ক ও এসপির নির্দেশে তাকে খুন করা হয়েছে।
Anis Khan Death Protest : আনিস কাণ্ডে লাগাতার লড়াইয়ের সুফল পুরভোটে পাবে বামেরা
এই ঘটনার তদন্তে তারা গোড়া থেকেই সিবিআই চেয়ে আসছেন। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সেই দাবি মোটেও মেনে নিতে রাজি নয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্তের জন্য সিট গঠন হয়েছে, যার মাথায় বসানো হয়েছে রিজওয়ানুরের মৃত্যুতে অন্যতম অভিযুক্ত পুলিশকর্তা জ্ঞানবন্ত সিং!
এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে সালেম শেখকে কিশোয়ার জাহানের ফোন করার বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও ছেলের খুনিদের খুঁজতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বৃদ্ধ রিজওয়ানুরের মাকে প্রশ্ন করেছেন, এতো লড়াইয়ের পর তিনি কি ন্যায় বিচার পেয়েছেন?
আনিসের বাবার এই প্রশ্ন কিন্তু খুব তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রিজওয়ানুর কাণ্ডে যাদের নিশানা করে লড়াই করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসার পর তাদের অনেককেই পুরস্কৃত করেছেন।
যে জ্ঞানবন্ত সিংয়ের বিরুদ্ধে একসময় নিয়ম করে তোপ দাগতেন সেই জ্ঞানবন্ত আজ রাজ্য পুলিশের এডিজি। সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু ততদিনে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যাওয়া মমতা সেই সুপারিশ মানেননি!
উল্টে মাঝখান থেকে রিজওয়ানুরের দাদা রুকবানুর রহমান তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত বিধায়ক হয়ে গেলেন। এরপর তার মুখেও আর ভাইয়ের অপরাধীদের শাস্তির দাবি শোনা যায়নি। যে সরকার তার ভাইয়ের মৃত্যুতে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের পুরস্কার দিল, যে দল অশোক টোডিকে নিজেদের মাড়োয়ারি শাখার প্রধান বানিয়ে দিল তাদের সঙ্গে থাকতে বিন্দুমাত্র অস্বস্তি বোধ করেননি রুকবানুর! এইসব কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত সালেম শেখ রিজওয়ানুরের মাকে ন্যায় বিচার নিয়ে প্রশ্নটি করেন।
আসলে এই বৃদ্ধ ছেলের ন্যায় বিচারের দাবিতে এতটাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে রাজ্য সরকারের অফার করা চাকরি প্রস্তাব হেলায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। তিনি মৃত ছেলেকে নিয়ে ব্যবসা করতে চান না তা বারে বারে বুঝিয়ে দিয়েছেন সালেম শেখ। তাঁর এই দৃঢ় অবস্থান আগামী দিনে লড়াইয়ের পথে থাকা সকলকে মনোবল যোগাবে বলেই মনে হয়।