কলকাতা হাইকোর্টে শুরু হল নারদকাণ্ডের শুনানি

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টো থেকে হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে শুরু হল নারদকাণ্ডের শুনানি। প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল, বিচারপতি আইপি মুখার্জী, বিচারপতি হরিশ টন্ডন, বিচারপতি সোমেন সেন এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চে মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। আজই চার হেভিওয়েট নেতাকে নিয়ে রায় দেবে আদালত?
১৭ মে চার হেভিওয়েট নেতা ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখার্জী, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নারদকাণ্ডে গ্রেফতার করে সিবিআই। পরে নিম্ন আদালতে জামিন পেলেও বিষয়টি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। দুই বিচারপতির বেঞ্চে মতপার্থক্য থাকার কারণে উচ্চতর ডিভিশন বেঞ্চে চলে শুনানি। তবে চার নেতাকে গৃহবন্দী থাকার নির্দেশ দেয় আদালত।
বুধবার মামলার শুনানির কথা ছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তা পিছিয়ে যায়। এর মধ্যে হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশের আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত হয়।

এদিন মামলার শুরুতেই সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ থেকে মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা তিনি বলছেন না। তিনি সিআরপিসি ৪৮২,২২৬ এবং ২২৭ এর কথাও উল্লেখ করেন।
১৭ তারিখ চার নেতাকে গ্রেফতারের পর সিবিআই অফিসের বাইরে জমায়েত এবং আদালতের বাইরে জমায়েতের কথা উল্লেখ করে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, এটা পরিকল্পনামাফিক ঘটানো হয়েছে। যদি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে আগামী দিনে যখন কোনও গ্যাংস্টারকে ঘেরাও করা হবে তখন তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা এসে ঘেরাও করবে। গোটা মামলা যাতে সঠিক পথে না চলে সেই ব্যবস্থাই করা হবে। আদালত যদি এর পরিবর্তন না করে তাহলে এধরনের ঘটনা শুধুমাত্র এরাজ্য নয় অন্য রাজ্যেও ঘটতে থাকবে।

এই মামলার ঘটনাগুলো অদ্ভুত। এধরনের ঘটনা এরাজ্যে প্রায়ই ঘটে থাকে। সাধারণ মানুষের অজুহাত দেওয়া উচিত নয়। সাধারণ মানুষের মৌলিক নীতির গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমি নিম্ন আদালতের বিচারপতির বিরুদ্ধে না৷ বিচারপতি পক্ষপাতিত্ব করেছেন এই অভিযোগও তুলছি না। আমার প্রশ্ন মামলায় সাধারণ মানুষের কী উপলব্ধি হবে? প্রশ্ন তুললেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।

বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ আইন অনুযায়ী আমরা শুধুমাত্র দেখতে পারি ওই জমায়েত বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছে কি না। আমরা শুধুমাত্র বিচারপতির বয়ানের ভিত্তিতে এগোতে পারি। যেখানে বিচারপতি কোথাও উল্লেখ করেননি তাঁকে প্রভাবিত করা হয়েছিল কি না সেক্ষেত্রে আমরা কীভাবে বলতে পারি?

মেহতাঃ আমি বিচারপতির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। আমি বলছি সাধারণ মানুষের এবিষয়ে কী উপলব্ধি হবে৷ শুধুমাত্র জামিন নিয়ে আলোচনার জন্য পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ তৈরি হয়নি। এখানে আরও সাংবিধানিক এবং আইন নিয়ে আলোচনার জন্য উপস্থিত হয়েছি৷ যদি জামিন খারিজ করে দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে ৪৩৯(২) ধারার জন্য আবেদন করব। কারণ, এখানে মৌলিক অধিকার নিয়েও প্রশ্ন ওঠে৷

বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ জামিন স্থগিতাদেশের জন্য সিবিআইয়ের তরফে ৪ টি আবেদন করা হয়েছিল। আবার আপনারা চাইছেন মামলা ভিন রাজ্যে নিয়ে যেতে। আবার বিচারব্যবস্থা প্রভাবের কথা বলছেন। জামিন মঞ্জুর করা বেশী প্রাসঙ্গিক? সিবিআইয়ের আইনজীবীকে প্রশ্ন বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

বিচারপতি হরিশ টন্ডনঃ সাধারণ মানুষ তাঁদের আবেগের জন্য আইনকে অবজ্ঞা করবে। আমাদের ন্যায় বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখা দরকার।

কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়ঃ বিগত চার থেকে পাঁচ দিন ধরে মামলা চলছে অথচ এখনও অভিযুক্তরা বন্দী হয়ে রয়েছেন। গোটা মামলা সলিসিটর জেনারেল এমনভাবে বর্ণনা করলেন যাতে অভিযুক্তরা আরও বেশ কিছুদিন বন্দী থাকতে পারেন।
বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ আমরা সকলেই লকডাউনের কারণে গৃহবন্দী হয়ে রয়েছি।
কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়ঃ কিন্তু গতকালের ঝড়ে কলকাতার পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম কিছুই করতে পারলেন না। সাধারণ মানুষকে ভুগতে হচ্ছে। ১৭ তারিখের রায়ে কোথায় ভুল ছিল সেটা আদালতের খতিয়ে দেখা দরকার।
আদালতের এধরনের প্রক্রিয়ায় আমি ব্যথিত। আমার ৪০ বছরের অভিজ্ঞতায় এধরনের ঘটনা আগে দেখিনি।
সিংভিঃ আমরা শুরু থেকে দেখে আসছি মিঃ মেহতা সমস্ত কিছু তুলে ধরছেন কিন্তু জামিনের কথা উল্লেখ করছেন না। জামিনের কথা মেহতা বলছেন না। তিনি ৪০৬ নম্বর ধারার কথা বারবার বলছেন।

সিংভিঃ জনসাধারণের ভয় দেখিয়ে জামিনের বিরোধিতা কোনও যুক্তি হতে পারে না। অভিযুক্তরা জামিন পাওয়ার যোগ্য।

সম্পর্কিত পোস্ট