নোটের নৌটঙ্কি! প্রতিক্রিয়া বিহীন আমজনতা কেবলই দর্শক
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ‘কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়’
পরিচিত লাইন। তবে এই অতি পরিচিত লাইনও ফেল মেরে যাওয়ার জোগাড়। কারণ সততার বুলি আউড়ে আপনার ভোট নিয়ে চলে যাওয়া রাজনীতিবিদরা যে এক একটা যক্ষপুরীর পাহারাদার তা আর কে জানত। বরং এখন বলা চলে- ‘কতটা কাছে গেলে তোমার নোটের ভাগ পাওয়া যায়’!
শুধু রাজনীতিবিদরাই বা কেন, এ দেশে রাজনীতি ও অসাধু ব্যবসার যে ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তাতে কার ‘নোট’ কার বাড়িতে থাকে তা সহজে নির্ধারণ করা অসম্ভব।
দেশজোড়া দুর্নীতি ও অপরাধের এই নেক্সাস থেকে বাংলা অনেকটাই দূরে ছিল। সে অবশ্য অতীতের কথা। শেষ এক দশকে একের পর এক ঘটনায় যে ছবি উঠে এসেছে তাতে ‘পাপে পরিপূর্ণ এ বঙ্গভূমি’ বলাই যায়।
সত্যই প্রশ্ন জাগে এমন কোন ব্যবসা আছে যার জন্য বাড়িতে নগদ ১৭ কোটি টাকা রাখতে হয়? হ্যাঁ, শনিবার কলকাতার গার্ডেনরিচের ব্যবসায়ী নিশার আহমেদ খান ও আমির খানের বাড়িতে ইডির হানায় উদ্ধার টাকা নিয়েই বলা হচ্ছে।
এই বিপুল অর্থ আর যাই হোক তা যে সঠিক উৎসের নয়, অর্থাৎ কালো টাকা সেই, বেআইনি সম্পদ তা নিয়ে তো সন্দেহ নেই। আর তা নিয়ে নাকি রাজ্যের অতি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, কলকাতার মেয়র পদে থাকা ফিরহাদ হাকিম বলছেন, “বাংলার অর্থনীতি ধ্বংস করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে!”
বেআইনি অর্থ বাজেয়াপ্ত করলে তা অর্থনীতি ধ্বংস করে? মন্ত্রী মশাইয়ের এই আগে বাড়িয়ে মন্তব্য সেই ‘নেক্সাস’ তত্বতেই যেচে পড়ে জল-বাতাসা দিচ্ছে!
এর আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে ৫০ কোটিরও বেশি নগদ উদ্ধারের সাক্ষী থেকেছে রাজ্যবাসী। হালিশহরের পুরপ্রধান রাজু সাহানির থেকে নগদ ৮০ লক্ষ টাকাও উদ্ধার হয়েছে।
‘হেলমেট হার্মাদ’, বিজেপির পোস্ট দেখলে গুলিয়ে যাবে আগরতলার মসনদে কে?
আবার মালদহের মাছ ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে সিআইডি উদ্ধার করেছে প্রায় ১ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা। রাজ্যজুড়ে যেন নোটের সুনামি শুরু হয়েছে। এদিকে চাকরির আশায় সাড়ে পাঁচশো দিন হতে চলল ধর্মতলায় বসে ছেলে-মেয়েগুলো।
এই দল দায়ী, ও ভালো এসব প্রচুর চলছে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর শেষ কোথায়? যে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন হয়ে যায় তা কতটা প্রয়োজনীয় সেটা নিয়ে বোধহয় ভাবার সময় এসে গিয়েছে। নইলে সততা, উন্নয়ন, সুপ্রশাসনের নামে বারবার আপনাকে, আমাকে ঠকতেই হবে!
হিন্দিতে লাইভ অ্যাক্টিং, বলা ভালো থিয়েটারের এক বিশেষ ধারা আছে। তার নাম ‘নৌটঙ্কি’। সেখানে আপাত ছলনা বা ন্যাকামোর মাধ্যমে সমাজের বিপর্যয়গুলো তুলে ধরা হয়। আমাদের এখানেও নোট উদ্ধারের নামে নৌটঙ্কি চলছে। ন্যাকামো হচ্ছে। আসলে যারা তালিকা শক্তি তারা এসব আগে জানত না বিশ্বাস হয়? বিশ্বাস করা বেশ শক্ত কিন্তু।
বারে বারে একই ঘটনা ঘটছে দেখে, সর্বগ্রাসী পুঁজির দাপটে আমজনতা এমনিতেই বিদ্ধস্ত। এই কোটি কোটি টাকা উদ্ধার, নোটের মেশিন আনা, ভোট গণনার মতো নোট গণনা চলা, ক্ষণে ক্ষণে তার আপডেট আসা এইসব কিছু পরিস্থিতির চাপে সাধারণের কাছে আমোদে পরিণত হয়েছে। তার সহজে প্রতিক্রিয়া হয় না, এই অনাচার দেখে ততোটাই গা গুলিয়ে ওঠে না। সে শুধুই দর্শক। যেন আরও শোষিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে মাত্র!