‘দিদিকে প্রধানমন্ত্রী চাই’: স্লোগানে মজেছে বাংলা, কিন্তু দেশ বলছে কী?
নয়ন রায়
‘চলো পাল্টাই’; মোদিকে সরিয়ে দিদিকে প্রধানমন্ত্রী বানাই” সোশ্যাল মিডিয়ায় এটাই এখন ভাইরাল। একুশে অপ্রতিরোধ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী রূপে দেখতে চাই এরকম একটি ইসু বাংলা রাজনীতিতে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।
বাঙালি হিসেবে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বাংলা পেয়েছে। বাকি রইল প্রধানমন্ত্রী। একবার জ্যোতি বসু হতে হতেও শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায় দলের জন্য। বাঙালি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ইন্দ্রজিৎ গুপ্তকে পেয়েছিলেন। কিন্তু বাঙালি প্রধানমন্ত্রী না পাওয়ার ক্ষোভ থাকবেই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া এই বাংলায় শাসক ও বিরোধী দলের কোন মুখ নেই এখন।সোজা কথায় বলে বিরোধিতার রাজনীতিতে কারোর উজ্জ্বল উপস্থিতি নেই। আচ্ছা, সারাদেশে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া সামনে কাউকে নজরে আসছে কি? এই প্রশ্নই এখন প্রাসঙ্গিক ।
বর্ষীয়ান নেতা লালু প্রসাদ যাদব, মুলায়ম সিং যাদব, শরদ পাওয়ার এরা প্রত্যেকেই মমতার থেকে রাজনীতিতে সিনিয়র। যারা জুনিয়ার তারা হলেন তেজস্বী যাদব, এম কে স্ট্যালিন, উদ্ধব ঠাকরে। তাই নয়া কৌশল তার নামটা ভাসিয়ে দেওয়া। খুব একটা অনৈতিকও না।
যারা সিনিয়র ভারতবর্ষের রাজনীতিতে তারা এখন কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নন। তাই ২০২৪ এ মমতার নাম উঠে আসা যায় রাজনৈতিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের কৌশল বলাই যায়। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না এটা নিশ্চিত। কংগ্রেসের যেটা দরকার, তা হলো শরদ পাওয়ার, চন্দ্র বাবু নাইডুর সমর্থন। সেক্ষেত্রে মমতা বন্দোপাধ্যায় উজ্জ্বল দাবিদার হবেন কি?
এর উত্তর ২০২৪ এ পাওয়া যাবে । পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি লোকসভার আসন দিয়ে ভোট হবে না। ভোট হবে সারাদেশের লোকসভা আসনের নিরিখে। সেক্ষেত্রে দেশের সমস্ত আঞ্চলিক দলগুলি মমতারকে সমর্থন করে কিনা সেটাও ভাবার বিষয়। মমতার গ্রহণযোগ্যতা কতটা সেটা সময় বলবে। তাই এই বাজারে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের সোশ্যাল মিডিয়ার চাল কতটা বাস্তবসম্মত তার জল মাপতে এখনোও সময় লাগবে।
রিল থেকে রিয়েল, স্মৃতিপটে স্মরণীয় মিলখা সিং
রাজনৈতিকভাবে মমতা বাজার বুঝতে চেষ্টা করছেন ।কারণ একুশের সাফল্যের ফর্মুলায় ভর করে বাম ও কংগ্রেস পুরভোটে না গেলেও বৃহৎ ভোট মমতার পক্ষে গেছে। তাই কৌশলী প্রশান্ত কিশোর প্রধানমন্ত্রীর দাবিদার বা পছন্দ প্রার্থী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামটা ভাসিয়ে দিতে চাইছে।
উল্টোদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৌশলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বঙ্গ রাজনীতিতে সেকেন্ড ইন কমান্ড করে দিলেন। সেক্ষেত্রে ২০২৪এর নির্বাচনের প্রস্তুতি এখন থেকে শুরু করলেন,’সোশ্যাল মিডিয়ায় দিদিকে চাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ‘।
অনেকেই বলছেন ফর্মুলাটা পিকের না। বাঙালি প্রধানমন্ত্রী হয়নি।এই আবেগকে কাজে লাগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত সোশ্যাল বার্তা আদৌ কতটা বাস্তব সম্মত সেটা সময় বলবে। রাজ্যের অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থান বিনিয়োগের কী পরিস্থিতি তা নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি মমতা বন্দোপাধ্যায়কে বারবার হতে হবে। কারণ মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ,তামিলনাড়ুতে রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি ও বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যের থেকে ঢের বেশি ভালো।
তাই সিভিক, আশা কর্মী, গ্রাম পুলিশ দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে এক পাত্রে রাখা কখনোই ঠিক হবে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে থাকুক মমতা। রাজের বেহাল দশার শনি তাঁকে তাবিজ-কবজ দিয়েই রক্ষা করতে হবে। কারণ লোকসভা নির্বাচনের সময় এইসব ইস্যু মমতার বিরুদ্ধে যাবে। অতএব এখনো সময় থাকতে থাকতে শুধরে নেওয়া দরকার ।
একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে দেশ ও আন্তর্জাতিক ইতিহাস সম্পর্কে নলেজ ব্যাঙ্ক দরকার ।দরকার কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক সীমারেখার সম্পর্কে সম্যক ধারণা।মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আসন এক করা যাবে না। তার জন্য দরকার সংযত আচার-আচরণ এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সম্মান। ভাষা সংযত হওয়াটা প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে বাধ্যতামূলক। এই দেশ আবেগের রাজনীতি থেকে চোয়াল শক্ত করা খুব বেশি পছন্দ করে।
পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবহারিক সম্পর্ক ঠিক রাখা। সেখানে কখনো আলটপকা মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রাহ্য হবে না ।নিন্দুকেরা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলটপকা মন্তব্য রাজনৈতিকভাবে খোরাক হয় বার বার। অতএব জ্যোতি বসুর যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পার্টির সমর্থন পেয়েই তিনি বেশি মান্যতা দিয়েছেন পার্টিকে। তাই তৃণমূল দল চাইলে প্রধানমন্ত্রী হওয়া সহজ। কিন্তু কঠিন হল মানুষ কি চাইছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।