বালি চোরেদের মত ছদ্মবেশে ধরব বনজ সম্পদের চোরেদেরঃ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়

বিশেষ প্রতিবেদনঃ  শুশুক নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য বনদপ্তর। বুধবার পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় ভাগীরথীর শাঁকাই ঘাটে গাঙ্গেয় শুশুক সচেতনতা প্রসার কেন্দ্র ও দুটি দ্রুতগামী জলযানের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

বনদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অজয়-ভাগীরথীর মিলনস্থল কাটোয়ার শাঁকাইঘাট গাঙ্গেয় শুশুকের আঁতুড় ঘর। বর্ষায় প্রজননের সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে শুশুক এসে ভিড় জমায় এখানে। মাছ খেয়ে নেওয়ার কারণে মৎস্যজীবীরা শুশুক মেরে ফেলে। ফলে গাঙ্গেয় শুশুক হারিয়ে যেতে বসেছে।

কাটোয়ায় প্রকল্পগুলি উদ্বোধনের পর মন্ত্রী রাজীব আসেন আউশগ্রামে। সেখানেই তাঁর পূর্ব পরিকল্পিত কর্মসূচি গুলি সেরে বন দফতরের বিভিন্ন কাজ এবং আগামী পরিকল্পনা নিয়ে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ দুঁদে রাজনীতিবিদ ও রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুরতেই সদাহাস্যময় মন্ত্রী শর্ত দিলেন “আজ কিন্তু কোনো রাজনৈতিক প্রশ্ন করবেন না।”

বুধবার আউশগ্রামে বনমন্ত্রীর Exclusive Interview নিলেন Thequiry এর এডিটর ইন চিফ নয়ন রায়।

প্রশ্নঃ বনদফতরের দায়িত্ব হাতে পেয়েই প্রথমে বনজ সম্পদ চুরি রুখতে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছিলেন। সেই কাজে কতটা সফল হয়েছেন?

উত্তরঃ  বনজ সম্পদ রাজ্যের অ্যাসেট। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে বনজ সম্পদ চুরির ঘটনা সামনে এসেছে বারবার। আমি চেয়েছিলাম এই জায়গাটা কঠোর হাতে ধরতে। ১০০ শতাংশ সেই কাজে সফল হওয়া যায়নি। মনিটারিং চলছে।

কিন্তু বনজ চুরি রুখতে আগামী দিনে যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে তাতে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি তাতে এই চুরি রোখা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি, ড্রোন দিয়ে নজরদারি চলছে। ভবিষ্যতে গোপন ভাবে বনদফতরের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সময় এলেই তা সবাই জানতে পারবে।

প্রশ্নঃ রাজ্যের মানুষ বুলবুল দেখেন ফনী দেখেছে, আম্ফান দেখেছে। এই সব দুর্যোগে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভের যে ভূমিকা তা অনস্বীকার্য। তবে বিভিন্ন জায়গায় সবুজায়ন ধ্বংস করার মত ছবি বারবার উঠে আসছে। কী ভাবছেন এই বিষয়ে?

উত্তরঃ অবৈধ ভাবে সবুজ ধ্বংস করা। অবৈধ ভাবে গাছ কাটা। অবৈধ ভাবে বাঁধ কাটা। অবৈধভাবে ভেড়ি তৈরী করা। প্রকৃতির ক্ষতি যদি আমরা করি তাহলে সেটা ঘুরে ফিরে আমাদের পক্ষেই ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়াবে।

নিজেদের স্বার্থের লোভে আমরা প্রকৃতির ক্ষতি করি। কিন্তু এটা মাথায় রাখা প্রয়োজন প্রকৃতি না থাকলে আমরাও থাকতে পারব না। যত বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে তা ভয়াবহ রুপ নিয়েছে মানুষের জন্য।

আমি এই দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বেশী করে নজর রাখছি কীভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা যায়। অবৈধ ভাবে যাতে পরিবেশের ক্ষতি কেউ না করতে পারে সেদিকেও নজর রাখছি আমরা।

এর আগে রাজ্যের মানুষ দেখেছে রাস্তায় নেমে ছদ্মবেশে বালি চোর ধরেছিলাম। আগামী দিনে ছদ্মবেশে বনজ সম্পদ চোর ও প্রকৃতির যারা ক্ষতি করবে তাদের ধরব।

প্রশ্নঃ আরও একটা সমস্যা হল আন্ডারপাস। রেলের সঙ্গে এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা চলছে। প্রায় রোজ হাতি মারা যাচ্ছে। কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করবেন?

উত্তরঃ রেলের সঙ্গে এই নিয়ে অনেকবার কথা হয়েছে। সেখানে ঠিক হল রেল একটা নির্দিষ্ট গতির বাইরে যাবে না। কিন্তু উত্তরবঙ্গ সহ ডুয়ার্সে আমরা দেখেছি রেল নিজের গতি বাড়িয়েই চলেছে। এর ফলে শুধু হাতি নয় অন্যান্য বন্য জন্তুও প্রাণ হারাচ্ছে। এটা নিয়ে আমরা কেস করেছি।

পাশাপাশি বেশ কিছু জায়গা আছে যেখানে হাতির করিডর করার জন্য আন্ডারপাসের প্রয়োজন আছে। বহুবার রেলকে এই বিষয়ে জানিয়েছি।কিন্তু কোনো সদর্থক উত্তর পাওয়া যায়নি।

এমনিতেই এত বড় দুর্যোগ গেল। তাতে রাজ্যের পাওনা টাকা এখনও কেন্দ্র দেয়নি। গোটা বিষয়টাতেই কেন্দ্রীয় সরকার উদাসীন।

সবশেষে আমরা দুঁদে রাজনীতিবিদ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর গাওয়া গানের দু’লাইন শোনাতে অনুরোধ করেছিলাম। এদিন সেই অনুরোধ রাজীব দা রাখতে পারলেন না। তবে নিরাশ করলেন না। মুচকি হেসে জানালেন আগামী দিনে বনাঞ্চল, প্রকৃতি নিয়ে তাঁর একটি গান গাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।

কবে সামনে আসবে সেই রাজীব বাবুর গলায় সেই গান? তার জন্য কিন্তু অপেক্ষা করতেই হবে রাজ্যবাসীকে।

সম্পর্কিত পোস্ট