বাংলায় আইনশৃঙ্খলা না থাকলে কোথায় আছে? উত্তর প্রদেশে কী চলছে? জঙ্গলরাজ বললেও কম হবেঃ মুখ্যমন্ত্রী
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ করোনা এবং আমফান এই জোড়া দুযোর্গের মধ্যে গেরুয়া শিবির একের পর এক অভিযোগ এনেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। একের পর এক কেন্দ্রীয় নেতা রাজ্যের সরকারকে দুর্নীতিগ্রস্থ হিসাবে দেখানোর জন্য আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছেন।
এই অবস্থায় তৃণমূলের ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ হিসাবে একুশকেই বেঁছে নিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একুশের ভার্চুয়াল সভা থেকে সেই চেনা পরিচিত আত্মবিশ্বাস ধরা পড়ল তাঁর গলায়।
মঙ্গলবার ২১ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল শহিদ সভা থেকে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে তাঁর গর্জন, বহিরাগতরা নয় । বাংলার লোকই বাংলা চালাবে। স্পষ্ট করে মোদি-অমিত শাহর নাম অবশ্য মুখে আনেননি দিদি।
তবে বলেছেন, বিজেপি চোরেদের দল। টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করে। টাকা দিয়ে অন্য রাজ্যে সরকার ফেলে দেয়। তাঁর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, দাদা ভাই যদি ভেবে থাকেন, টাকা দিয়ে ভোট কিনে আর কিছু সিপিএমকে হাত করে বাংলা দখল করবেন, তা হবে না।
একের পর এক ভার্চুয়াল সভা থেকে বিজেপির জাতীয় নেতারা, বাংলায় পরিবর্তনের কথা বলছেন। বহুক্ষেত্রে তাঁরা হাতিয়ার করেছেন, শাসকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি নানা অভিযোগ।
এদিন সেই সব অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেছেন, কেন্দ্রের সরকার ক্ষমতার দখলের জন্য চক্রান্ত করছে। বহিরাগতরা বাংলার দখল নিতে চাইছে। কিন্তু বাংলাকে গুজরাত শাসন করবে না। বাংলা শাসন করবে বাঙালিরাই।
এই সভা থেকে সাধারণ মানুষকে বিজেপিকে প্রত্যাখানের আবেদনও করেছেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর ডাক, একুশের ভোটে বহিরাগত বিজেপির জামানত বাজেয়াপ্ত করুন। বাংলাকে অপমানের বদলা নিন।
এবারই প্রথম চির পরিচিত ধর্মতলার মঞ্চ থেকে নয়, করোনা-পরিস্থিতিতে ‘ভার্চুয়াল’ সভা। সেই ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যম থেকে ২০২১-এর আগের শেষ ২১ জুলাইয়ে দলকে কী বার্তা দেন তৃণমূলনেত্রী সে দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিল তৃণমূল নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা।
১৬ তে বাজিমাত করেছিল খাদ্যসাথী, ২১ এ কী তবে ফ্রি রেশন মন্ত্র?
এদিন সেই সভা থেকে নাম না করে বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, কেন্দ্রে ক্ষমতায় আছে বলে গায়ের জোর দেখাচ্ছে। তাঁরা উন্নয়নের কথা কখনও বলে না। সারাক্ষণ শুধু সর্বনাশের কথা বলে। রাজ্যে গুন্ডামি, দাঙ্গা, আগুন জ্বালানোর কথা বলে। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেয় না।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিওযোগ করেছেন, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশের পর রাজস্থানেও টাকা দিয়ে সরকার ফেলার চেষ্টা করছে বিজেপি।
তাঁর অভিযোগ, দেশের সব রাজ্যে চক্রান্ত করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে বিজেপি। তৃণমূল সুপ্রিমো এদিন বলেন, সব রাজ্যে ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা করছে। ওয়ান নেশন, ওয়ান পার্টি করার চেষ্টা চলছে। তাহলে আর নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ রাখার প্রয়োজন কী? রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে দিন।
এদিনও বার বার বাংলার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, প্রত্যেকদিন রিপোর্ট পাঠিয়ে কেন্দ্র অভিযোগ করছে যে বাংলায় আইনশৃঙ্খলা নেই।
পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, বাংলায় আইনশৃঙ্খলা না থাকলে কোথায় আছে? উত্তর প্রদেশে কী চলছে, জঙ্গলরাজ বললেও কম হবে। আগে আয়নায় নিজেদের মুখ দেখুন। এদিন দিল্লির সরকারকে ‘চক্রান্তের জোতদার’ বলেও কটাক্ষ করেন মমতা।
অতীতে বামেরা ধারাবাহিক ভাবে বলেছে, বাংলা বঞ্চিত। কেন্দ্র বাংলার সঙ্গে বঞ্চনা করছে। এদিন একই অভিযোগ শোনা গিয়েছে তৃণমূলনেত্রীর গলাতেও।
তিনি বলেন, সারা জীবন সিপিএমের হাতে মার খেতে খেতে আমার সারা শরীর ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে। এরপর জনতার রায় পাওয়ার পরও আমরা শান্তিতে কোনও দিন কাজ করতে পরছি না। কথায় কথায় অপমান করেছে। আমিও একটা মানুষ। যন্ত্র নই। বামেরা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন রোজ অত্যাচার করেছে। এখন বিজেপি কথায় কথায় অসম্মান করছে। লাঞ্ছনা, গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে। কথায় কথায় চক্রান্ত করছে।
বিজেপি নেতাদের উদ্দেশ্যে তৃণমূলনেত্রীর তোপ, বাংলা দখল করবে। ভাই তোমাদের জন্মটা কোথায় শুনি! কখনও তো শুনিনি রাজনীতি করেছেন। কখনও তো শুনিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। খালি ধ্বংসের কথা। খালি গুণ্ডাগিরি, ভাঙচুর। ক্ষমতায় আসা এতই সহজ।
উল্লেখ্য, ৯৩ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী সেই সময়ে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দাবিতে তিনি ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন। পুলিশের গুলিতে সেদিন ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়।
তাঁদের স্মরণ করতেই প্রতি বছর ২১ জুলাই শহিদ দিবস পালন করে তৃণমূল। তবে বাংলার রাজনীতি জানে, ২১ জুলাই শুধু শহিদদের স্মরণ করার দিন নয়। দিদি এদিন দলকে হোম টাস্ক দেন। পরের লক্ষ্য বেঁধে দেন। দলকে রাজনৈতিক দিশা দেন।
ঠিক যেমন, উনিশের লোকসভা ভোটের আগে আঠারো সালের ২১ জুলাই স্লোগান তুলে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ৪২-এ ৪২ চাই, দিল্লিও চাই।
একুশের ভোটের আগে মঙ্গলবার সেটাই করলেন দিদি। রাজ্যে এখন প্রধান বিরোধী দল হল বিজেপি। বাংলায় ক্ষমতা দখল করার জন্য প্রতি মুহূর্তে হুঙ্কার দিচ্ছেন মোদি-অমিত শাহর অনুগামীরা।
সেই পরিস্থিতিতে আজ দলকে দিদি বোঝালেন, মানুষের কাছে এই বার্তা নিয়েই যেতে হবে যে, বাংলা গুজরাত থেকে চলবে না।