ত্রিপুরা মডেলে বাংলা দখলের সমীকরণ বিজেপির, ইন্ধন যোগাচ্ছেন রাজ্যপাল

শুভজিৎ চক্রবর্তী

এনিথিং ইজ পসিবল ইন দ্য গেম। এই কথাটা খেলার মাঠে আমরা প্রায়শই শুনে থাকি। ইদানিং রাজনীতির ময়দানেও এই কথা আকছাড় শোনা যাচ্ছে। অনেকটা ‘ছিল রুমাল, হল বেড়াল’ এর মতো। যে কেউ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। যে কেউ ক্ষমতা বদল করতে পারে। আবার কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে।বাংলার রাজনীতিতে এই সমস্ত কথাগুলো এখন জলভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই তো পুজোর আগেই নির্বাচনের দলীয় কর্মীদেরকে টাস্ক দিতে উত্তরবঙ্গ সফরে এসেছিলেন সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা৷ দেখে গিয়ে বললেন উত্তরবঙ্গে যা অবস্থা তাতে তিনি বেজায় খুশি। শুধু পারফরম্যান্স ধরে রাখতে কর্মীদের দিলেন একগুচ্ছ হোমওয়ার্ক।

কিন্তু সমস্ত প্ল্যান ভেস্তে গেল যখন মহাপঞ্চমীর দিন সল্টলেকে বিমল গুরুংয়ের উদয় হল। আর অক্টোবরের শেষে পাহাড়ের তাপমাত্রা কমার বদলে বাড়তে শুরু করল।

পাহাড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হল। অনেকে প্রশ্ন তুললেন তাহলে ২০১৭ সালে অগ্নিগর্ভ পাহাড়ের কি প্রয়োজন ছিল? প্রশ্নটা আরও আগে ওঠা প্রয়োজন ছিল ছত্রধর মাহাতোর ক্ষেত্রেও।কিন্তু বিষয়টা যখন রাজনীতি তখন এনথিং ইজ পসিবল ইন দিজ গেম।

এবার আসি হালির ঘটনায়। সদ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করে এসেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকে একাধিক অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন।

আবার ঠিক তেমনই অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পর রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। রাজ্যের শাসক দলের মতে বিজেপির এজেন্ট হিসাবে কাজ করছেন তিনি। আর রাজ্যপাল বলছেন রাজ্য সরকারের অঙ্গুলিহেলনে কাজ করছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। রোজকারের এই ঘটনা আলাদা করে হ্যাশট্যাগ রাজ্য বনাম রাজ্যপালের আকার নিয়েছে।

তবে এরই মধ্যে চলতি দশকের ইতিহাসের মিল খুঁজে বের করেছেন বিশ্লেষকরা। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে ত্রিপুরায় মানিক সরকারের বাম সরকার ভাঙার আগে ঠিক সরকারের বিরুদ্ধে একইভাবে সুর চড়াও করেছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল তথাগত রায়।

একইভাবে বাংলাতে সাংগঠনিক প্রধান হিসেবে এসে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করেছেন জগদীপ ধনকড়। এখন আবার টানা একমাসের উত্তরবঙ্গ সফর ঠিক করেছেন।

যদিও এবিষয়ে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, কলকাতার পাশাপাশি দার্জিলিংয়েও একটি কার্যালয় রয়েছে। সেখান থেকেই বেশ কিছুদিন কাজ করবেন তিনি। পাহাড়ে মানুষদের মধ্যে উন্নয়নের সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যপালের উত্তরবঙ্গ সফরের পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই বলে দাবীও করেছেন নিজেই।

অথচ রাজ্যপালের উত্তরবঙ্গ সফরকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পাহাড়ে বিমল গুরুং এবং রোশন গিরিকে হাতছাড়া করেছে বিজেপি।  তাই নতুন করে জল মাপার জন্য রাজ্যপালকে পাঠাতে চায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব৷

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/after-the-passenger-protests-nabanna-finally-agreed-to-sit-down-to-discuss-the-local-train/

 

অন্যদিকে নতুন জোট হাতছাড়া করতে নারাজ তৃণমূল সুপ্রিমো। ৩ নভেম্বর অনিত থাপা এবং বিনয় তামাংকে ডেকে পাঠিয়েছেন তিনি। তার আগে রাজ্যপালের উত্তরবঙ্গ সফরের আগে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে নিজেই অনিত থাপাকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী। পাহাড়ে প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে তামাং এবং থাপা দুজনেই থাকবে।

১৯ এর লোকসভায় উত্তরবঙ্গে গেরুয়া ঝড়ের দাপটে আঁচড় কাটতে পারেনি ঘাসফুল শিবির। কিন্তু সরকার গঠন করতে গেলে দরকার দক্ষিণবঙ্গের বেশী সংখ্যক আসন। তাই ২১ এর রোডম্যাপ ঠিক করতে ৫ এবং ৬ নভেম্বর দক্ষিণবঙ্গ সফর করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

দক্ষিণবঙ্গের নতুন সংগঠনের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের পুরাতন সংগঠনের মধ্যে ব্যালেন্স রাখতে রাজ্যপালকে ব্যবহার করছে না তো গেরুয়া শিবির? এই প্রশ্ন বাংলা তথা দিল্লির আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এমনিতেই ৬ নিং মুরলীধর সেনের যা অবস্থা তাতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নেতাদের। যদিও খেলার নাম পলিটিক্স। আর এনিথিং ইজ পসিবল ইন দিজ গেম।

সম্পর্কিত পোস্ট