পাপ্পু কাহিনী ও টি-শার্টের জীবন

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী ছিল। আপ্পু-গাপ্পু-পাপ্পু’ও ছিল কি? তখন না থাকলেও এখন তো আছে। কী আছে? পাপ্পু। কে পাপ্পু? ধাঁধা, কিংবা গোলকধাঁধা! দিল্লি থেকে গুজরাট হয়ে বাংলা, মানে উত্তর থেকে পশ্চিম হয়ে পূর্ব, আসল পাপ্পুর সন্ধানে ভারত ভ্রমণ শুরু হল বলে। কারণ কে পাপ্পু, তা নিয়ে জোর টানাপোড়েন শুরু হয়েছে নানান শিবিরে।

২০১৪ এর লোকসভা ভোটের পর থেকে লাগাতার প্রচার চালিয়ে উত্তর ভারতে রাহুল গান্ধিকে ‘পাপ্পু’ বলে চিহ্নিত করে দিতে সফল হয় বিজেপি। কিন্তু পাপ্পু’টা কী?

পাপ্পু শব্দের নির্দিষ্ট কোনও ব্যাখ্যা নেই। তবে হিন্দিভাষীরা বোকা-হাঁদা, গোবেচারা ছেলেদের পাপ্পু বলে থাকেন। ব্যারাকপুর বা হাওড়ার মতো, অথবা উত্তর কলকাতার হিন্দিভাষী অধ্যুষিত এলাকায় গেলে এটা স্বচক্ষে দেখতে পাবেন। তো, অনবরত পাপ্পু পাপ্পু বলে বিজেপি হিন্দি বলয়ে রাহুলকে বোকা-হাঁদা, রাজনীতিতে অপরিণত একজন হিসেবে তুলে ধরে।

দক্ষ প্রচারকৌশল এবং পেশাদার স্ট্রাটেজিস্টদের কল্যাণে গেরুয়া শিবিরের এই প্রচেষ্টা সফল‌ও হয়। এমনকি পরবর্তী পর্যায়ে উত্তর ভারত ছেড়ে দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতেও রাহুল মানে পাপ্পু, এই ধারণা ছড়িয়ে দিতে পেরেছে তারা।

পাপ্পু ট্যাগ লাইনের জন্য রাহুল গান্ধির রাজনৈতিক জীবন যে ভালো মতো প্রভাবিত তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। ঘটনা হল, রাজনীতির সঙ্গে যাদের প্রত্যক্ষ সংযোগ আছে তাদের বেশিরভাগই এই পাপ্পু বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামান না।

কিন্তু যারা নির্ধারণ করেন কে কুর্সিতে বসবে, সেই জনতা জনার্দনের একটা বড় অংশের কাছে রাহুল মানেই পাপ্পু। স্বাভাবিকভাবেই বোকা-হাঁদা ছেলের দলকে আর কে ভোট দেবে বলুন! কংগ্রেস গেরুয়া শিবিরের এই অপপ্রচার খণ্ডানোর কম চেষ্টা করেনি। কিন্তু তাদের কোন‌ও স্ট্রাটেজি সেভাবে কাজ করেনি।

ফ্যাসিবাদের চোখরাঙানির মাঝেই ক্ষমতা বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ বামশক্তির কাছে

এক্ষেত্রে রাহুল গান্ধির নিজের ভূমিকাও কিছুটা দায়ী। ঘনিষ্ঠদের থেকে শোনা যায় ভারতীয় রাজনীতি নিয়ে অত্যন্ত স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ধারণা রাখেন রাহুল। তিনি প্র-পিতামহ জহরলাল নেহেরুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনীতি করতে চান। যেখানে তাঁর ব্যক্তিজীবন আলাদা পরিসর পাবে।

কিন্তু রাহুল মানতে না চাইলেও সত্যি, যে বর্তমানে ২৪ ঘন্টা মিডিয়ার যুগ। সব সময় ক্যামেরা তোমায় ফলো করছে। বিশেষ করে তোমার প্রধান প্রতিপক্ষের আইটি সেল ব্যাপক শক্তিশালী। সেখানে তুমি হঠাৎ বিদেশে পাড়ি দিলে বা লাগাতার রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে না থাকলে ‘পাপ্পু’ অপপ্রচার ছড়ানোটা আরও সহজ হয়ে যায়।

যাইহোক, রাহুল গান্ধিকে পাপ্পু বলা হয় এ বিষয়টা বাঙালির কাছে পরিচিত ছিল। তবে বাংলায় ‘পাপ্পু’ সংস্কৃতি এর আগে সেভাবে আসেনি। কিন্তু গত শুক্রবার ইডি’র জেরা সামলে বাইরে বেরিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হঠাৎই অমিত শাহ’কে পাপ্পু বলে বসেন। রাজনৈতিক আক্রমণে কেউ কাউকে পাপ্পু বলতেই পারেন। কিন্তু অমিত শাহ কেন পাপ্পু, তার তেমন একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

রাহুলকে পাপ্পু বলতে গিয়ে বিজেপি যে সমস্ত যুক্তি তুলে ধরেছে, তেমনটা কিন্তু তৃণমূল বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেউই অমিত শাহ’র বিষয়ে বলেননি। বরং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সম্বন্ধে তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কথা শুনে মনে হবে, শাহ সবচেয়ে বেশি সুযোগ সন্ধানী বলেই তাঁকে পাপ্পু বলছেন!

যা শব্দটির হিন্দি অর্থের সঙ্গে ঠিক সাজুজ্যপূর্ণ নয়। তবে নেতা যখন কোন‌ও একটা কথা বলেন, তা সমর্থকরা অতো বিচার বিবেচনা না করেই সেটা গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। অভিষেক শাহকে পাপ্পু বলার পরের দিনই দেখা গেল তাঁর অনুগামী নতুন প্রজন্মের তৃণমূল কর্মীরা পাপ্পু টি-শার্ট বাজারে নিয়ে চলে এসেছে।

পাপ্পু লেখা এই টি-শার্টের মাঝে বড় করে অমিত শাহ’র মুখের ক্যারিকেচার শোভা পাচ্ছে। এটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালোই সাড়া ফেলেছে। কিন্তু ব্যাপারটা এখানেই থেমে থাকেনি। তৃণমূলের পাপ্পু আবার দিল্লির রাজ দরবারে গিয়েও হাজির হয়েছে। কারণ দলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন পাপ্পু লেখা টি শার্ট পড়ে সংসদ ভবনেও হাজির হয়ে গিয়েছেন। বিষয়টি তিনি ট্যুইট করে জানিয়েছেন সবাইকে। দলের আরেক রাজ্যসভা সাংসদ জহর সরকার ট্যুইট করে অমিত শাহকে পাপ্পু বলে কটাক্ষ করেছেন।

তারমানে কে পাপ্পু তা খুঁজতে খুঁজতে আমরা দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে আবার আমদাবাদের দিকে গিয়েছি। কিন্তু দৌড় এখনও শেষ হয়নি। মাঝে সিপিএমের সোশ্যাল মিডিয়া টিমও আসরে নেমে পড়েছে। তারা ফেসবুক-ট্যুইটারে ‘সবচেয়ে বড় পাপ্পু’ শিরোনামে বেশ কিছু টি-শার্টের ডিজাইন পোস্ট করেছে, যার মাঝে অভিষেকের মুখ শোভা পাচ্ছে। অর্থাৎ বামেদের দাবি রাহুল গান্ধি বা অমিত শাহ নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাপ্পু হলেন অভিষেক! ভারত নয়, বামেরা আবার বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে গোটা বিষয়টি বিচার করতে চাইছে। কিন্তু এবারেও যথারীতি কোন‌ও ব্যাখ্যা মেলেনি।

এতদিন ন্যায্য বা অন্যাজ্য যাই হোক, ভারতীয় রাজনীতিতে পাপ্পু বলতে একজনই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু মাঝপথে আরও দুই হেভিওয়েট রাজনীতিবিদের নাম এসে গিয়ে গোটা বিষয়টাই ভারত ভ্রমণের পরিণত হয়েছে। কিন্তু কে আসল, তার সমাধান অধারা। সমর্থকরা শুধু একে তাকে চিহ্নিত করতেই ব্যস্ত।

সম্পর্কিত পোস্ট