Mozaharul Islam : জাহাঙ্গিরের তৈরি জঙ্গিপুর সত্যিই এক ব্যতিক্রমী পুরসভা
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের হাত ধরে এই বাংলায় এক নগরের পত্তন হয়েছিল, যার নাম ছিল জাহাঙ্গিপুর। এই নগরই আজ জঙ্গিপুর নামে খ্যাত। এই প্রাচীন নগরটির সঙ্গে ইতিহাসের যোগ এখানেই শেষ নয়। ব্রিটিশরা ভারতের শাসন ক্ষমতা দখল করার পর দীর্ঘদিন তাদের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল এই জঙ্গিপুর।
ব্রিটিশ ভারতের রেশম বাণিজ্যের অন্যতম প্রাণকেন্দ্রও ছিল এটি। এই জঙ্গিপুর আজ মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহকুমা। এটি একটি লোকসভা কেন্দ্রও বটে। স্বাধীন ভারতের একমাত্র বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এই জঙ্গিপুর থেকেই প্রথম লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি জঙ্গিপুর শহর সহ গোটা লোকসভার উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছিলেন।
সে দিক থেকে দেখতে গেলে স্বাধীনতা-উত্তর ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের বেশ কিছু গর্বের স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই প্রাচীন জনপদটির সঙ্গে। জাহাঙ্গিরের প্রতিষ্ঠিত জঙ্গিপুর আজ দেড় শতাধিক বছরের পুরনো রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন পুরসভা। এখানে ওয়ার্ড সংখ্যা ২১।
১৮৬৯ সালে জঙ্গিপুর পুরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। জঙ্গিপুর পুরসভার বারবার হাতবদল হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলা সার্বিকভাবে সাক্ষরতার হারে পিছিয়ে থাকলেও জঙ্গিপুর পুর এলাকায় সাক্ষরতার হার যথেষ্ঠ ভালো। এখানকার মানুষের মধ্যে লেখাপড়ার যে চল আছে তার প্রভাব জঙ্গিপুর শহরের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও দেখা যায়।
সেই মুঘল আমল থেকে অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে জঙ্গিপুর শহরের যাত্রা শুরু। ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে গড়ে ওঠা এই শহরের আর্থিক অবস্থা তাই অনেকটাই ভালো। এখানে মূলত বর্ধিষ্ণু ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের বসবাস। তবে আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর মানুষ একেবারে নেই ভাবলে ভুল হবে। তাদের উপার্জনের প্রধান মাধ্যম বিড়ি তৈরি।
উত্তরাখণ্ডে বিজেপির বিদায় নিশ্চিত, কংগ্রেসের কাঁটা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব
এই বিড়ি শিল্পের বেশকিছু মালিকের বসবাসও জঙ্গিপুরেই। সব মিলিয়ে এই শহরের আর্থসামাজিক কাঠামোয় পুরসভার ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। নাগরিকরা সবসময়ই উন্নত মানের পরিষেবা আশা করে থাকেন।
গত পাঁচ বছর ধরে প্রথমে পুরপ্রধান ও পরে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন মোজাহারুল ইসলাম। তাঁর সময়ে জঙ্গিপুর পুরসভা নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি করেছে। ভাগীরথীর পাড়ে গড়ে ওঠা জঙ্গিপুরের অন্যতম গর্ব হল ‘সবুজ দ্বীপ’।
শুধু শহরের মানুষ নয়, সারা মুর্শিদাবাদের নানান প্রান্ত থেকে, এমনকি জেলার গণ্ডি পেরিয়েও প্রচুর মানুষ এই সবুজ দ্বীপে ঘুরতে আসেন। কেউ এখানে এসে পিকনিক করেন, আবার কেউ কেউ বন্ধুবান্ধব-পরিবার নিয়ে অবসর সময় কাটিয়ে যান। একটি পুরসভা এলাকায় এইরকম পরিকাঠামো বেশ অকল্পনীয়। কিন্তু সেই কঠিন কাজকেই বাস্তবে সত্যিতে পরিণত করেছে জঙ্গিপুর।
শুধু নিখাদ আনন্দ দেওয়া নয়, মানুষের রোজের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এই শহরেই আগামী দিনে গড়ে উঠবে ভবঘুরেদের জন্য রাত্রিবাস এবং সুপরিকল্পিত একটি মার্কেট কমপ্লেক্স। জঙ্গিপুরের সাধারণ মানুষের আশা এই মার্কেট কমপ্লেক্স গোটা জেলার গর্ব হয়ে উঠবে।
এতে যেমন ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে, তেমনই পুরসভার উদ্যোগে গড়ে ওঠা মার্কেট কমপ্লেক্সে সাধারণ মানুষ এক ছাদের তলায় অনেক কিছু পেয়ে যাবেন। রাজ্যের অন্যান্য অনেক প্রাচীন পুর এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে একটা সমস্যা দেখা যায়। এর মূল কারণ প্রাচীন পুরসভাগুলিতে নগর পরিকল্পনা অনেক আগে করা হয়েছিল।
কিন্তু বর্তমানে জনগণের চাপ ব্যাপক হারে বেড়েছে, সেই সঙ্গে বাড়ি-ঘর রাস্তাঘাট সবই বেড়ে গিয়েছে। তাই কোথাও আবর্জনা ফেলার ডাম্পিং গ্রাউন্ড দেখা যায় না, আবার কোথাও থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য।
কিন্তু সুপ্রাচীন জনপদ হলেও জঙ্গিপুরে এই সমস্যা নেই। পুরসভা পরিকল্পনা করে নিজেদের এক বিশাল ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করেছে, সেখানেই গোটা শহরের আবর্জনা ফেলা হয়। এতো গেল নাগরিক পরিষেবার কথা।
নারীদের মানবাধিকার নিশ্চিত করুক তালিবান, তবেই বাকিরা এগিয়ে আসবে: রাষ্ট্রসংঘ
কিন্তু দরিদ্র বিড়ি শ্রমিকরা যাতে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে তার জন্য মোজাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে বিকল্প কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা করছে পুরসভা। সবকিছু ঠিকঠাক চললে সামনেই পুরসভা ভোট হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনের সহজে জিতে আবার মানুষের সেবা করার সুযোগ পাবেন বলেই বিশ্বাস মোজাহারুল সাহেবের।
তাই আগামী দিনে কোন কাজগুলি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করবেন তার পরিকল্পনা এখন থেকেই করা শুরু করে দিয়েছেন। আসলে জাহাঙ্গিরের তৈরি শহরের মানুষের ভালোবাসাই তাঁকে এতোটা আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে!