রাজ্যজুড়ে প্রবল অশান্তির মাঝে পাহাড়-জঙ্গলের যুগলবন্দী ব্যতিক্রম 

দ্য কোয়ারি ডেস্ক: ‘ভোট নয় ভাঁট’! ‘অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ, এই পরিস্থিতিতে ভোটের নামে মোটা টাকা খরচ করে কি লাভ’! ‘ইলেকশনের বদলে সিলেকশন করে নিলেই হতো, বেকার ঝামেলা ঝঞ্ঝাট’!

রবিবার বিকেল থেকেই এই সমস্ত লেখা, মন্তব্য ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বাংলার পুরভোট নিয়ে এটাই হল আমজনতার মনোভাব!

বোঝাই যাচ্ছে ভোটের নামে ব্যাপক হিংসায় বীতশ্রদ্ধ সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন জেলা থেকে খবর এসেছে যে সমস্ত এলাকায় অতীতে ভোটে কোনদিন অশান্তি হয়নি সেখানেও এবার অনেকে ভোট দিতে পারেননি। কেউ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখেছেন ভোট পড়ে গিয়েছে, আবার কোথাও সকাল থেকেই বুথ শাসকদলের ভোট ম্যানেজারদের দখলে চলে গিয়েছে।

বেশিরভাগ জায়গাতেই বিরোধীরা মুখ বুজে এই গাজোয়ারি মেনে নিয়েছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় পাল্টা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছে তারা। বিশেষ করে শাসকদলের অনেক বিক্ষুব্ধ‌ই নির্দল হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন।

তাঁরা নিজেদের সামর্থ্যে অনেক জায়গাতেই ভোট লুঠ আটকানোর প্রবল চেষ্টা করেছেন। আর তাতেই রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে বিভিন্ন এলাকা।

অশান্তি হওয়া এলাকার ঘটনা শতাংশের বিচারে কম হলেও সংখ্যার বিচারে অজস্র। বিরোধী শিবিরের দাবি অনুযায়ী কমপক্ষে ৫০০ বুথে ব্যাপক অশান্তি হয়েছে।

কিন্তু এরই মাঝে ব্যতিক্রম হয়ে থাকল দার্জিলিং ও ঝাড়গ্রামের ভোট। এই দুই পুরসভায় রবিবার সারাদিনেও তেমন কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। কেউ কারোর বিরুদ্ধে কোনও গুরুতর অভিযোগ তোলেনি। ফলে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত সম্পুর্ন শান্তিতে ভোট হল পাহাড় ও জঙ্গলে।

পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে দীর্ঘদিন আগুন জ্বলেছে দার্জিলঙে। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার শিবির বদলানো, অনীত থাপার নতুন দল তৈরি, জিএন‌এলএফের সঙ্গে জোট করে বিজেপির পুরসভা দখলের চেষ্টা সব মিলিয়ে উত্তেজনার যথেষ্ট রসদ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অশান্তি নয়, হাসি উপহার দিল সুন্দরী পাহাড়।

ঝাড়গ্রামে যে এবারের পুরভোটে অশান্তি হল না সেটাই বরং অবাক করা ঘটনা। প্রার্থী বাছাই ও মনোনয়ন জমা পড়বে প্রবল অশান্ত হয়ে উঠেছিল ঝাড়গ্রাম। রাজনৈতিক মহলের কেউ কেউ মনে করেছিলেন, ভোটের দিন বড়সড় কোনও ঘটনা ঘটতে পারে।

দুই শিবিরের টিকিট না পাওয়া বেশ কিছু নেতা বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই নিয়েও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ছিল। যদিও সে সব কিছুই হল না। দীর্ঘদিন পর একেবারে শান্তিপূর্ণ ভোট দেখল জঙ্গলমহলের এই প্রাণকেন্দ্র।

সত্যি বলতে এবারের পুরভোটে সারা রাজ্যের কাছে প্রবল ব্যতিক্রমী, কিন্তু উদাহরণ হয়ে থাকল পাহাড় ও জঙ্গলের এই যুগলবন্দী। বাকি জেলাগুলি যদি এখান থেকে কোনও শিক্ষা নেয় তবে তা গণতন্ত্রের পক্ষে মঙ্গলদায়ক হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট