তালিবান ঘনিষ্ঠ বাংলাদেশি JMB জঙ্গি সংগঠনের নাশকতা শুরু হয়েছিল ১৭ আগস্ট
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ একদিনে একসঙ্গে বাংলাদেশের ৫০০টি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের জাহির করেছিল জামাত উল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি। সেই হামলার ১৬ বছর হয়ে গেল। জেএমবি সংগঠনটি আফগান তালিবান ঘনিষ্ঠ। বর্তমানে বাংলাদেশের এই জঙ্গি গোষ্ঠী বিভক্ত। পুরনো জেএমবি ও নব্য জেএমবি। তবে ভারতে রয়েছে জেএমবি সংগঠনের সক্রিয়তা। এ দেশে জেএমআই নামে সংগঠনটি সক্রিয়।
২০১৪ সালে পূর্ব বর্ধমানের বর্ধমান শহরের লাগোয়া খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সূত্রে জেএমবির পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয়তা স্পষ্ট হয়। তদন্তে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে তাদের জাল বিরাট। ভারতের জমি ব্যবহার করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার চেষ্টা চালাচ্ছে জেএমবি সংগঠনের নাটের গুরু সালাউদ্দিন সালেহীন।
সালেহীনকে বাংলাদেশের পুলিশের কব্জা থেকেই ছিনিয়ে এনেছিল জেএমবি জঙ্গিরা। গোয়েন্দা বিভাগের বিশ্লেষণ, খাগড়াগড়ে জঙ্গি ঘাঁটি তৈরির নির্দেশ দেওয়া সালাহউদ্দিন নেপাল হয়ে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান পর্যন্ত নেটওয়ার্ক বিছিয়েছে। তার সঙ্গে আফগানিস্তানের তালিবান নেটওয়ার্কের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।
জেএমবি সংগঠনটির প্রথম জঙ্গি আত্মপ্রকাশ হয় ঠিক ১৬ বছর আগে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট। বাংলাদেশের সর্বত্র কম মাত্রার ধারাবাহিক বিস্ফোরণ হয়। বাংলাদেশে এই ‘ সিরিজ বোমা হামলা’র ঘটনায় দুজন নিহত ও অন্তত ১০৪ জন আহত হয়।
জেএমবি নাশকতার সেই শুরু। দ্রুত বাংলাদেশ সরকার সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত করে।
২০০৫ সালের ৩০ মার্চ জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম (বাংলা ভাই) সহ চার জঙ্গি নেতার ফাঁসি কার্যকর করে বাংলাদেশ সরকার।
তবে জেএমবি ঠাণ্ডা হয়নি। আরও নাশকতা ঘটাতে থাকে। ২০০৫ সালেই বাংলাদেশে যেন জেএমবি আর ভয় সমার্থক শব্দ। আদালতে বোমা হামলার একটার পর একটা ঘটনা ঘটাচ্ছিল জেএমবি। কয়েকটি ধারাবাহিক বোমা হামলায় বিচারক ও আইনজীবীসহ ৩০ জন নিহত হন। আহত হন চার শতাধিক।
আকাশসীমা বন্ধের ফতোয়া তালিবানের, চরম বিপদে ভিন দেশের নাগরিকরা
সবচেয়ে বড় জেএমবি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে ওই বছরের ২৯ নভেম্বর ঢাকার গাজীপুর বার লাইব্রেরি এবং চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে। গাজীপুর বার লাইব্রেরিতে আইনজীবীর পোশাকে প্রবেশ করে আত্মঘাতী এক জঙ্গি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এই হামলায় আইজনজীবীসহ ১০ জন নিহত হয়।
নিহত হয় আত্মঘাতী হামলাকারী জঙ্গিও। একই দিন চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে জেএমবির আত্মঘাতী জঙ্গিরা বিস্ফোরণ ঘটায়। সেখানে রাজিব বড়ুয়া নামের এক পুলিশ কনস্টেবল এবং একজন সাধারণ মানুষ নিহত হয়। পুলিশসহ আহত হয় প্রায় অর্ধশত।
২০০৫ সালের ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায় জেএমবি। বাংলাদেশের অন্যতম বামপন্থী সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর নেত্রকোনা কার্যালয়ে সামনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় আত্মঘাতী জঙ্গি দল। উদীচীর দুই নেতাসহ আটজন নিহত হয়। আহত হয় শতাধিক।
পরবর্তী সময়ে জেএমবির মধ্যে নাশকতার তত্ত্ব নিয়ে বিভাজন তৈরি হয়। নব্য জেএমবি জন্ম নেয়। তারা ইসলামিক স্টেট বা আইএস জঙ্গি সংগঠনের ঘনিষ্ঠ। আইএস ও তালিবান পরস্পর বিরোধী। ফলে পুরনো জেএমবি তালিবান ঘনিষ্ঠ হওয়ায় নব্য জেএমবির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে।
এই নব্য জেএমবির জঙ্গিরা ২০১৬ সালে ঢাকায় ঈদের উৎসব বানচাল করতে হোলি আর্টিজান কাফের ভিতর ঢুকে গণহত্যা করেছিল। ভয়াবহ সেই ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের নিকেশ করে। ঠিক ঈদের দিন ফের নব্য জেএমবি হামলা করে কিশোরগঞ্জের ঈদ নামাজের সময়। রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়।