রক্তাক্ত জেএনইউ , দায় নেবে কে?

তিন মাসের বেশী সময় ধরে ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে সরব হয়েছে জেএনইউ। জেএনইউ কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও উত্তর মেলেনি। তবুও আন্দোলনে অনড় তাঁরা।

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ রাতের অন্ধকারে ৫০ থেকে ৭০ জনের গুন্ডাবাহিনী জেএনইউ ক্যাম্পাসে ঢুকে সমস্ত কিছু তছনছ করে বেরিয়ে গেল। রক্তাক্ত জেএনইউ ।

দুষ্কৃতীদের ঘায়ে গুরুতর আহত হলেন জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ। তাঁর অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তাঁকে এইমসের ট্রমা কেয়ারে ভর্তি করা হয়। আহত হন অধ্যাপিকা সুচরিতা সেনও। চিকিৎসার জন্য তাঁকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে এবিভিপির বিরুদ্ধে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উঠছে বেশ কিছু প্রশ্ন।

প্রথমত, কি কারণে ক্যাম্পাসের ভিতর ঢুকে এভাবে নৃশংস হত্যা চালালো দুষ্কৃতিরা?

দ্বিতীয়ত, প্রায় তিন মাসের অধিক সময় ছাত্রছাত্রীরা ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁদেরকে কোনও উত্তর কেন দিচ্ছে না জেএনইউ অথারিটি?

তৃতীয়ত, এতদিন ধরে আন্দোলন চলা সত্বেও বিষয়টি নিয়ে উপাচার্য কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না কেন?

চতুর্থত, রবিবার রাতে ক্যাম্পাসের ভিতর দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব দেখেও কেন চুপ দিল্লি পুলিশ?

রক্তাক্ত জেএনইউ

রবিবার ঘটনার পর সন্ধ্যে সাতটা থেকে ক্যাম্পাসের মেইন গেটের সামনে জমায়েত হয়ে প্রতিবাদে সরব হন ছাত্র এবং শিক্ষকরা। সারা রাত প্রতিবাদে অনড় থাকতে দেখা যায় তাঁদের। তাঁদের মধ্যে অনেকেই রাজনৈতিকভাবে জড়িত নয়।

শুরু থেকেই তাঁরা বলে আসছেন, পুলিশকে বিশ্বাস করতে পারছেন না তাঁরা। তাঁদের মধ্যে কেউ বলছেন, “আমি কিভাবে নিশ্চিত হব যে আমি পরবর্তী লক্ষ্য নয়?”

আরও পড়ুনঃ সারা ভারত বন্ধের দাবিতে হাওড়ায় মিছিল ও পথসভা

রবিবার ঘটনার পর থেকে ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে। সোমবার সকাল থেকেই হোস্টেল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ রাজনৈতিক দলের লড়াইয়ে নিজেদের সুরক্ষিত বলে মনে করছেন না কেউই।

রক্তাক্ত জেএনইউ , নেপথ্যে কারণঃ

প্রসঙ্গত, তিন মাসের বেশী সময় ধরে ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে সরব হয়েছে জেএনইউ। জেএনইউ কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও উত্তর মেলেনি।

তবুও আন্দোলনে অনড় তাঁরা। শুরুতে বাম ছাত্র সংগঠনের ডাকা প্রতিবাদী আন্দোলনে এবিভিপি সমর্থকরা শামিল থাকলেও, পরে তাঁরা আন্দোলন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়।

শনিবার প্রতিবাদে অনড় থেকেই রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রাখতে চায় জেএনইউ ছাত্র পরিষদের বাম সংগঠন।

রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রাখতে স্কুল অব বায়োটেকনোলজি এর ওয়াইফাইয়ের সামনে জমায়েত হয় তাঁরা।

সেখানেই এবিভিপি ছাত্র সংগঠন এবং বাম ছাত্র পরিষদের কিছু সদস্যের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। আহত হয় উভয় পক্ষের সদস্যরা।

পরে উপস্থিত রক্ষীদের হস্তক্ষেপে ঘটনার নিষ্পত্তি হয়। তারপর থেকেই আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে এবিভিপি সমর্থকরা।

ঠিক কী হয়েছিল রবিববার?

রবিবার হঠাৎই রাত্যের অন্ধকারে ক্যাম্পাসের মধ্যে ঢুকে পড়ে প্রায় একশো জনের গুণ্ডাবাহিনীর দল।

তাঁদের কারোর হাতে মোটা লাঠি, লোহার রড।

পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে তাঁদের মিছিল চলে যায় সবরমতী ধাবার সামনে।

তারপর অস্ত্র উঁচিয়ে আহ্বান এবং হামলা চলল ছাত্রদের ওপর। বাদ গেলেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।

শুধুমাত্র হোস্টেলে নয়, হামলা চলে হোস্টেলের বাইরেও। ভেঙে দেওয়া হয় হোস্টেলের বাইরে থাকা গাড়ির কাঁচ।

মহিলা বাথরুমে অ্যাসিড ছুঁড়ে হামলার অভিযোগ ওঠে দুষ্কৃতীদের ওপর। আহত হন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

কিন্তু সব দেখেও চুপ দিল্লি পুলিশ। পুলিশকে সক্রিয় হতে উপরাজ্যপালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

ছাত্রদের তরফে জানানো হয়েছে, গত তিন মাস ধরে ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনে অনড় ঠেকেছে ছাত্ররা। এমনকি নাম নথিভুক্ত না করলে সেমিস্টার দেওয়া যাবে না বলে হুমকি দেখিয়েও কোনও কাজ হয়নি।

তাই এবার বলপ্রয়োগের মাধ্যমেই ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ছাত্রদের অনেকেই জানিয়েছেন, “হোস্টেলের মধ্যে আমি একা থাকলে যদি আমার ওপর হামলার চেষ্টা করা হয়, তখন আমরা কি করব?” ঘটনার পর থেকে রীতিমতো আতঙ্কিত ছাত্ররা।

সম্পর্কিত পোস্ট