নিশীথকে পাশে নিয়ে উত্তরবঙ্গ পৃথক রাজ্যের দাবিতে সরব জন বারলা, উল্টো সুর দিলীপ ঘোষের কন্ঠে
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে সরব তৃণমূল কংগ্রেস। বেশ কয়েকদিন ধরে নতুন করে রাজ্যভাগের ইস্যুতে উত্তপ্ত হচ্ছে বঙ্গ রাজনীতিকে। উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করা হোক এই দাবি তুলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দ্বারস্থ হচ্ছেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সংসদ জন বারলা। বিজেপি সাংসদের দাবিকে কার্যত খারিজ করে দিয়ে কদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন “কোনোভাবেই রাজ্যকে ভাগ করতে দেওয়া হবে না।”
উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ একটি রাজ্যেরই অঙ্গ। রাজ্য ভাগের ইস্যুতে তাপ উত্তাপ বেড়েছে চা-বাগান অধ্যুষিত এলাকা উত্তরবঙ্গের তরাই ও ডুয়ার্সে। এরইমাঝে আজ কোচবিহারে এক সাংবাদিক সম্মলনে নতুন করে রাজ্য ভাগের দাবি তুলে উত্তাপ ছড়িয়েছে বিজেপি সাংসদ জন বারলা।
সাংসদের দাবি, “যে রাজ্যে বসবাস করি সেখানে কোনো নিরাপত্তা নেই।চা বাগানের শ্রমিকদের পরিস্থিতি খারাপ। আইন-শৃঙ্খলা তলানিতে। নির্বাচনের পর সন্ত্রাস বেড়েছে। উন্নয়ন হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার উপরে রাষ্ট্রপতির কাছে দাবি করতেই পারি।”
সাংসদের এই দাবি খারিজ করে দিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আর যখন কোচবিহারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন জন বারলা, পাশে ছিলেন কোচবিহার সাংসদ নিশীথ প্রামানিক।
উল্টো সুর বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কন্ঠে। তিনি বলছেন, “বিজেপি কোনো রাজ্য ভাগের ইস্যুকে সমর্থন করেনা। সাংসদ কেন বলছেন সেটা না জেনে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।”
এখানেই থেমে থাকেনি কালজানি ও তোরসা নদীর পাড়ে আলিপুরদুয়ারের রাজনীতির জল। বেশ ঘনীভূত হয়েছে বাংলা ভাগের ইস্যু। বাংলা ভাগের ইস্যুকে সামনে রেখে আসরে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
কোচবিহারে বসেই প্রাক্তন মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন ও প্রাক্তন বিধায়ক উদয়ন গুহ বলছেন, কোনোভাবে চক্রান্ত করে বাংলা ভাগের চিন্তা ভাবনা যদি বিজেপি করে থাকে তাহলে তৃণমূল পথে নেমে আন্দোলন করবে। তার উপযুক্ত জবাব গণতান্ত্রিকভাবেই তৃণমূল কংগ্রেস দেবে। তাঁরা মনে করিয়ে দেন, গোর্খাল্যান্ড ইস্যুকে সামনে রেখে রক্তপাত হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। নতুন করে বাংলা ভাগের চক্রান্তে উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে উত্তরবঙ্গে। যা কোনভাবেই বাস্তবে হতে দেওয়া যাবে না।
শীঘ্রই দেশে আছড়ে পড়তে পারে করোনার তৃতীয় ঢেউঃ এইমস প্রধান
উত্তরবঙ্গ আলাদা রাজ্যের দাবি কলকাতায় নয় পৌঁছেছে দিল্লিতেও। দুদিন আগে Thequiry কে আলিপুরদুয়ারের সাংসদ একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন উত্তরবঙ্গ আলাদা রাজ্য বা ইউনিয়ন টেরিটোরি করার দাবি তিনি জানাচ্ছেন। একদিকে উত্তরবঙ্গের নদীগুলিতে জল বাড়ছে পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি এবং করোনা-লকডাউন পরিস্থিতিতে সরকারের নাজেহাল পরিস্থিতি। তার মধ্যে নতুন করে উত্তরবঙ্গ আলাদা রাজ্যের দাবিতে আজকের বক্তব্য নতুন করে রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
উত্তরবঙ্গের আলাদা রাজ্যের দাবিকে আদৌ কোন সম্মতি দেয় কিনা কেন্দ্র নাকি বিজেপি অন্দরে আলিপুরদুয়ারের সাংসদ সুকৌশলে চাপ বাড়ালেন সেটাও দেখার বিষয়। বিজেপি সাংসদ বলেছেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার দায়দায়িত্ব থেকে যায়। তাই তিনি চান উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন হোক। এখানে কোনো শিল্পপতি আসতে চাইছেন না। সন্ত্রাসের ভয়ের কারণে। পুলিশ প্রশাসন বা জেলা প্রশাসনকে বলে কাজের কাজ হয়নি। খুব স্বাভাবিকভাবে এখানকার মানুষের নাগরিকদের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।
তাই তাঁর কথায়, দাবি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে করতেই পারি। কারণ তাদের ভোটে নির্বাচিত সাংসদ। বিজেপি রাজ্য সভাপতির দলের সাংসদের বক্তব্য কার্যত উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, একদিকে ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানো মূল দাবি। অন্যদিকে মুকুল রায়ের পদ ছাড়া নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর চিঠি বিধানসভার সচিবালয়ে। ঠিক উল্টোদিকে উত্তরবঙ্গের দাবি আলাদা রাজ্যের। যা নিয়ে তুঙ্গে জল্পনা।