অসময়ে চলে যাওয়া ছোটভাই KK-র জন্য ‘গানওয়ালা’ সুমনের কবিতায় আবেগপ্রবণ ভক্তরা
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ রবি ঠাকুরের পর কবীর সুমন বোধহয় সেই বাঙালি যাঁর লেখা ও গাওয়া গান মানুষের পথ চলার সঙ্গী হয়ে উঠেছে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সুমনের ‘তোমাকে চাই’ গানের দুনিয়ায় ধূমকেতুর মতো আছড়ে পড়েছিল। সদ্য প্রেমে পড়ার অনুরাগ নিয়ে ‘প্রথমত আমি তোমাকে চাই’ শুনলে রাঙা হয়ে ওঠে বয়সন্ধি পেরিয়ে আসা প্রেমিক যুবকের দুই গাল।
আবার সদ্য বিচ্ছেদের যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা হতাশ প্রেমিক ‘প্রথমত আমি তোমাকে চাই’ শুনে আজও হারানো মানুষটার প্রতি নিজের বিশ্বাস খুঁজে পান, হতাশার সঙ্গেই আজও আস্থা থাকার শ্বাস বেরিয়ে আসে বুকের ভেতর থেকে। সেই সুমন ছোটো ভাই কে কে-র সঙ্গে পরজন্মে জুটি বেঁধে একসঙ্গে গান গাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়ে এক আবেগী কবিতা লিখলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বাংলা গানের জগতে স্পষ্ট বাঁকবদল ঘটেছে সুমনের হাত ধরে। তাঁর জীবনেও বাঁকবদল তো কম নয়। তিনি সুমন চট্টোপাধ্যায় থেকে নিজের সিদ্ধান্তে কবীর সুমন হয়েছেন। তবে তাঁর কলম আর গলা থেমে থাকেনি। কেউ বলেন সুমন জীবনমুখী গান করেন, আবার কেউ সুমনের ঠুংরি, খেয়ালে দক্ষতা তুলে ধরে তাঁর ক্লাসিক্যাল গানের প্রতিভার দিকে ইঙ্গিত করেন। কিন্তু এইসব বিভাজন দিয়ে কী আর সুমনকে ব্যাখ্যা করা যায়।
তিনি কখনও বির্তকিত কথা বলে ঝড় তোলেন মানুষের মনে, আবার কখনও তাঁর গিটারের সুর ভাসিয়ে নিয়ে যায় পুকুর পাড়ের গা ঘেঁষে এঁকে বেঁকে চলে যাওয়া ভাঙা ইট-মাটির রাস্তা ধরে গ্রামের শেষ প্রান্তে থাকা ধানক্ষেতে সূর্যাস্ত দেখতে! আসলে সুমন এমনই।
লোকে যে যাই বলুক তিনি সমালোচনার কুছ পরোয়া করেন না। তিনি নিজের সৃষ্টিতে মগ্ন থাকেন। আর তারপর যা বলেন বা লেখেন তা মন নয়, হৃদয়ের ঠিক মধ্যিখানে গিয়ে একটা মোচড় দিয়ে চলে যায়। ছোটো ভাই কে কে-কে অকালে হারিয়ে সেই মোচড় এবার খেয়েছেন সুমন নিজে। অন্তত তাঁর কবিতা তাই বলছে।
KK Death : কলকাতায় হঠাৎই প্রয়াত বিখ্যাত গায়ক কে কে
সুমন তাঁর কবিতায় অকপটে বলেছেন, কে কে-র যাওয়ার এখন সময় নয়। বরং বড় হিসেবে তাঁর চলে যাওয়ার কথা ছিল। পরজন্মে এই অকাল প্রয়াত শিল্পীর সঙ্গে তিনি একসঙ্গে মিলে বাংলার নিজস্ব গান-সুর একই মঞ্চে গেয়ে ওঠার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, লেখেন-
“পরের জন্মে ফিরে এসো নজরুলে
গাইবে দুজনে তাঁরই বাংলা গান।।”
কেকের মৃত্যুতে সর্বত্র মুণ্ডপাত চলছে বাঙালি গায়ক রূপঙ্কর বাগচীর। কিন্তু রূপঙ্করও তো সুমনের ছোট ভাই। এই ছোট ভাইয়ের পাশেও তিনি দাঁড়িয়েছেন। নিজের বিশ্বাস থেকে স্পষ্ট বলেছেন রূপঙ্করের অভিমানে মোটেও রাগ করেনি কে কে। লিখেছেন –
“রূপংকরের কথায় রাগোনি জানি
বুঝেছ ছেলের অসহায় অভিমান”
তবে বাংলা গানের সাধক কবীর সুমনের এই লেখায় তাঁর মাতৃভাষার গান নিয়ে বাকিদের অবহেলার মনোভাবের কথাও উঠে এসেছে। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বঞ্চনা নিয়ে সুমনের লেখা লাইন চোখে জল এনে দিতে বাধ্য। বাংলা গানের বাঁকবদলের কাণ্ডারীর বুকে কত যন্ত্রনা থাকলে কলমের খোঁচায় এমন লেখা বের হয় তা বোঝা যায়।
ভালো থেকো কে কে। তুমি অকালে চলে গেলে। কিন্তু তোমার অসংখ্য অনুরাগীর মতো এক দাদার মনও তোমার জন্য আজ কাঁদছে।