এ কল্যাণ কেমন ‘কল্যাণ’, এতো শুধুই অকল্যাণের ব্যর্থ প্রচেষ্টা!
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ কল্যাণ হোক। দাদু-দিদারা আজও এই ভাষায় নাতি-নাতনিদের মঙ্গল কামনা করেন। কিন্তু এ কল্যাণ কেমন কল্যাণ, এ যে অকল্যাণের বার্তাবাহী!
দুঁদে আইনজীবী (!!) ও ঠোঁটকাটা বলে পরিচিত কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সকলেই চেনেন। কিন্তু গত দু-তিন দিনের আগে তাঁকে কেন্দ্র করে রাজ্যের রাজনৈতিক আবহ আবর্তিত হয়েছে এমনটা আগে কখনও ঘটেনি। এমনিতে আদালতে মামলা হারাটা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন কল্যাণবাবু।
সে দিক থেকে বলা যায় সাম্প্রতিক বিতর্কের জেরে দীর্ঘদিন পর তাঁর কিছু প্রাপ্তি ঘটল! তা সে যতই বিতর্ক হোক না, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসাটা তো হল! অবশ্য কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই বেশ নাটুকে স্বভাবের। আকবর আলি খন্দকারের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে তাকে শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রে তাঁকে প্রার্থী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সহজেই সেই নির্বাচনী লড়াইয়ে জয়ী হন কল্যাণ। অবশ্য এতে তাঁর কোনও ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মা ছিল তা ভাবাটা ভুল হবে। পুরোটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি এবং তৃণমূলের প্রতীকের কামাল। আর তাতেই তিনি দেশের আইনসভার সদস্য হয়ে যান। তার আগে অবশ্য কল্যাণকে বিধায়কও করেছিলেন মমতা। অর্থাৎ, আজ যদি মমতার ছবি এবং তৃণমূলের প্রতীকটা তাঁর মাথার পিছন থেকে সরে যায় তবে কল্যাণ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে!
কোহলির আর ‘বিরাট’ হওয়া হল না!
দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের থেকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কম কিছু পাননি। শুধু তাই নয়, ‘বড় আইনজীবী’ বলে নিজের ঢাক নিজে পেটানো কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালের পর থেকে তৃণমূল ও রাজ্য সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলা লড়েছেন।
এক্ষেত্রে তাঁকে বিশ্বাস করার চেষ্টা করেছিলেন মমতা। যদিও প্রতিদানে কিছুই পাননি। কারণ প্রায় সব মামলাতেই গো হারান হেরেছেন এই ‘দুঁদে আইনজীবী’! তাইতো পরের দিকে বাধ্য হয়ে কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিংভিদের মতো আইনজীবীদের সাহায্য নিতে বাধ্য হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
গত বছরের দুর্গাপুজার সময় শ্রীরামপুরের এই সাংসদকে হঠাৎ করেই কেঁদে ভাসাতে দেখেছিল সবাই। আহা কী ভক্তি! আবার আবার সেই দুর্গা মণ্ডপেই তৃণমূলের সদ্যনির্বাচিত বিধায়ক অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিকের সঙ্গে তাঁর ধুনুচি নাচের ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়েছিল। যদিও নেচেছিলেন কম, মধ্যপ্রদেশই বেশি দুলিয়ে ছিলেন এই দাপুটে আইনজীবী!
এই ঘটনার মাসখানেক পরেই নাম না করে উত্তরপাড়ার বিধায়কের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আপত্তিকর অভিযোগ আনেন। যদিও সেই অভিযোগের ভিত্তি কী তা আজও জানা যায়নি। তবে অনেকেই কল্যাণের নাটুকেপনা বেশ পছন্দ করেন, ওই কমিক রিলিফ যাকে বলে আর কি!
সেই কল্যাণের হঠাৎ করে কী হল? তিনিতো বরাবরই তৈল মর্দনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এই বিষয়টি একদমই পছন্দ করেন না। তবু তিনি সেই কাজই করে এসেছন আজ পর্যন্ত। এমনকি এই কিছুদিন আগেই নাকি সংসদের সেন্ট্রাল হলে দাঁড়িয়ে অভিষেকের দরাজ প্রশংসা করেছিলেন তিনি!
যখন দলের তরুণ প্রজন্মের মুখ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেশ কিছু যুগান্তরী পদক্ষেপ নিতে চলেছেন, তিনি কেন বাধা দিচ্ছেন? হঠাৎ করে হলটা কী! তবে কী ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে টিকিট পাবেন না তা আগেই বুঝে গিয়েছেন কল্যাণ? এমন নয় তো এতো নীতি আদর্শের কথা কপচানোর পর আগামী দিনে তিনি বিজেপির দোলনায় গিয়ে উঠবেন? তাই আগেভাগে জমি প্রস্তুত করছেন!
হিসেব বলছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্যানেলভুক্ত আইনজীবী হলে অর্থাগম বেশ ভালই হয়। তবে কী নিজের মন্দ পসারের কথা ভেবে আপাতত কেন্দ্রীয় সরকারের প্যানেলে জায়গা পাওয়াটাই লক্ষ্য এই ‘দাপুটে’ আইনজীবীর? এর উত্তর সময়ই দেবে।
তবে শুধু যে দলের সাধারণ সম্পাদককে কুরুচিকর আক্রমণ করেছেন কল্যাণ, তা নয়। বরং নোংরা ভাষায় কথা বলাটা তাঁর দীর্ঘদিনের অভ্যেস। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখনও মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে আছেন, তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। সেই সময় অত্যন্ত আপত্তিজনক ভাষায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছিলেন এই কল্যাণ।
পদের লোভ নাকি অন্য কোনো কারণ? প্রকাশ্যে অভিষেকের সমালোচনায় কল্যাণকে প্রশ্ন কর্মীদের
কিন্তু এতো কিছু সত্ত্বেও বুদ্ধদেব বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে কখনও ব্যক্তি আক্রমণই করেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই বলাই যায় আজ নতুন করে নয়, অতীতেও বারেবারে তৃণমূলের বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রীরামপুরের সাংসদ।
অবশ্য যে সাংসদ পদ বা লোকসভায় দলের চিফ হুইপ হওয়ার জেরে তিনি এতো দৌড়ঝাঁপ করেন, সেই পদ আর কতদিন আছে সেটাই বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে!
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বুঝতে হবে তৃণমূল এখন জাতীয় স্তরে প্রধান বিরোধীদলের জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। তাই আজও একইরকম মৌরসিপাট্টা চালাতে গেলে হবে না। অন্তত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নতুন প্রজন্ম তাঁর জমিদারি মেনে নেবে না। এই বাস্তব পরিস্থিতিটা যত দ্রুত বুঝবেন ততই ভালো, না বুঝলে ‘সব গেল গেল’!