যারা গড়লেন তাঁরা কী পেলেন?
চিত্রানী মান্না
শরতের গন্ধ গায়ে তখনও লাগেনি৷ কিন্তু কুমোরটুলির গন্ধ উত্তর কলকাতা পেরিয়ে আমার বাড়ি অবধি এসে পৌঁছেছিল। হাতে ছুটি পেতেই খুব সকালে বেরিয়ে পড়লাম। প্রায় প্রত্যেক বছরেই এই সময়টা আসা যেন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে৷ মেড় বাঁধা থেকে শুরু করে দোমেটে এবং খড়ি বোলানো পুরোদস্তুর একের পর “পাল সম্রাট” দের শিল্পকলাকে লেন্সবন্দী করা। এটাই আমার পুজোর ছুটির হোমটাস্ক।
কিন্তু এবছরে ঠাকুরের বহর যেন কমে গিয়েছে। খুব একটা নাম করা শিল্পী ছাড়া এবাজারে কেউ ধোপে টিকছেন না। ঠাকুরের দাম শুনে মনে হচ্ছে বুলেট ট্রেনে চড়ে ঠাকুরকে নিয়ে এলে কম খরচ হবে। কিন্তু এঁদেরও কিছু করার নেই। খড়, মাটি, বাঁশ, রঙ, তুলি, সাজ সবকিছুর মূল্য প্রায় দ্বিগুণ। সবেতেই জুড়ে গিয়েছে জিএসটি। আর নেই বেশী ঠাকুরের অর্ডারও। পুজো উদ্যোক্তারা নিজেদের সামর্থটুকু দিয়েই রীতি রেওয়াজ বজায় রাখছেন।
বাইরে দেশেও খুব একটা ঠাকুরের রপ্তানি নেই। ওই হাতে গোনা দু একটা হয়তো অর্ডার পেয়েছেন কিছুজন। কুমোরটুলির বিশ্বমানের প্রতিমার বিস্তৃতি সেভাবে হয়নি৷ থমকে গিয়েছে ছাঁচ কেনাও৷ অথচ একটা সময় এই কুমোরপাড়াতেই ঠাকুরের ছড়াছড়িতে হাঁটা দায় ছিল। সকালে বেরিয়ে একঘর থেকে অপর ঘর যেতে দুপুর গড়িয়ে যেত৷
এসব ভাবতে ভাবতে যখন রাস্তা ধরে হাঁটছি তখন চোখে পড়ল এক শিল্পী অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে মায়ের চোখ আঁকছেন৷ মনে এল অকালবোধনের সেই গল্প ১০৮ নীলপদ্ম দিয়ে রামচন্দ্র পুজোর পরে মা দূর্গার না দেখা পেয়ে নিজের চোখে তীর মারতে গিয়েছিল। এই শিল্পী গুলোর অবস্থা অনেকটা সেরকম৷ মন্দার বাজারে তাঁরা দুর্গতিনাশিনীর রূপ তো দিচ্ছেন। কিন্তু এই চরম দূর্গতি কবে কাটবে সেটা জানেন না।
কলকাতায় থাকার সুবাদে প্যান্ডেল, পুজো, ঢাঁকের আওয়াজ পাচ্ছি। আর পাঁচটা বাঙালির মতো আমারও পুজো ডেস্টিনেশন ঠিক হয়ে গেছে ৷ কিন্তু এবছর মা দূর্গার নৌকার অপেক্ষায় রয়েছে এই মানুষগুলো। উৎসবের আলোর রোশনাই যেন তাঁদের ঘরেও ছিটিয়ে যান তিনি।