মিলল না সবুজ সঙ্কেত, আসন বন্টন নিয়ে বাম-কংগ্রেসের তরজা অব্যাহত
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ শিওরে কড়া নাড়ছে বিধানসভা নির্বাচন। নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপি। অথচ এখনো বাম কংগ্রেসের আসন রফা নিয়ে তরজা অব্যাহত থেকেই গেল।
রবিবার বৈঠকে বসেছিলেন বাম কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, নরেন চট্টোপাধ্যায়, মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী, বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান এবং সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। এদিনের বৈঠকে আসন বন্টন নিয়ে দর কষাকষি চললেও শেষমেষ ফল কিছুই বেরোলো না । যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল এবং বিজেপি।
সূত্রের খবর ২৯৪ টি আসনের মধ্যে ১৩০ টি আসনে লড়ার দাবি জানায় কংগ্রেস। সেই তালিকা পেশ করেন তারা। তালিকায় রয়েছে মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন আসন। এতেই বেঁকে বসেন বামেরা।
বাস্তব অবস্থার ভিত্তিতেই বাম কংগ্রেসের আসন রফা চান অধীর
বামেদের দাবি দক্ষিণের বিস্তীর্ণ জেলায় দাপট রয়েছে তাদেরও। শুরু হয় বাকযুদ্ধ। বামেরা কংগ্রেসের কাছে এই জেলাগুলি থেকে বেশ কিছু আসন চায়। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ইঙ্গিতবাহী কোন মন্তব্য না আসায় অনড় থাকে বামেরাও।
বামেদের বক্তব্য, এখনই এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিয়ে তাদের শরিক দলগুলির মতামতকেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ যাঁরা বামেদের একনিষ্ঠ সমর্থক, তাঁদের ভোট হারাতে চাইছেন না বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্ররা।
বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে বৈঠক চলাকালীন উত্তেজিত হয়ে পড়েন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। সেই ক্ষোভের ছবি সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রকাশ্যে আসে। ছবিতে দেখা যায় অধীর বাবুর সঙ্গে কথা বলে তার ক্ষোভ প্রশমনে চেষ্টা করছেন প্রবীণ সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। তবে আসন বন্টন নিয়ে উভয় দলের রাজনৈতিক তরজার কথা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এড়িয়ে যান তিনি।
অধীর চৌধুরী বলেন, “তৃণমূল- বিজেপিকে পরাস্ত করতে গেলে ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক জোট হিসেবে বাম কংগ্রেস অথবা কংগ্রেস বামকে এক হয়ে নির্বাচনী মোকাবিলা করতে হবে। সেই লক্ষ্যেই আমরা এগিয়ে চলেছি। আগেও আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনার শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ নয় , বন্ধুত্বপূর্ণও বটে। একে অপরের মতবিনিময়ের মধ্য দিয়েই এই আলোচনা আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। কেউ কারোর ওপর কিছু চাপিয়ে দেওয়ার আলোচনা হয়নি। আগামী দিনে এই আলোচনা আরো কয়েকবার চলবে। তবে এই মাসের মধ্যেই আমরা আসন বন্টন সমাপ্ত করতে চাই।”
সূত্রের খবর ২৫ জানুয়ারি ফের আলোচনা হবে দু’পক্ষের। তবে সেদিন অধীর রঞ্জন চৌধুরী থাকবেন না বলে কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে। ফলে আসন বন্টন নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। ফের ২৮ জানুয়ারি আরও একটি বৈঠক রয়েছে।
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু কংগ্রেস সভাপতির কথার রেশ ধরেই বলেন, উনি সত্য বলছেন।আমাদের বোঝাপড়ার অভাব নেই। তবে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আরো আলোচনা প্রয়োজন। কোন তিক্ততা নেই এই আলোচনায়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগেও হাত মিলিয়েছিল বাম-কংগ্রেস। সেসময় ৯২ টি আসনে লড়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়েছিল জোট। সেই পুনরাবৃত্তি আর যাতে না হয়, তার জন্য ভেবে চিন্তে আসন ভিত্তিক আলোচনা চাইছেন তাঁরা। সুত্রের খবর, গতবারের বেশ কিছু বিধানসভায় বাম প্রার্থীদের প্রচারে কংগ্রেস এগিয়ে এলেও বামেদের শীর্ষ নেতৃত্বকে সেভাবে সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।
তৃণমূল বিজেপির লড়াইয়ের মাঝে আসরে নামছে বাম-কংগ্রেস
রাজনৈতিক মহলের মতে যত তাড়াতাড়ি বাম-কংগ্রেস আসনের রফা নিয়ে সমঝোতায় আসতে পারবে তত তাড়াতাড়ি নির্বাচনী কাজে নামতে পারবেন তারা। অন্যথায় সভা-সমিতি যাই হোক না কেন জোট নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে জনমানষে।
বিশেষ্ণরা মনে করছেন, তৃণমূল ও বিজেপির ভোট শেয়ারের মধ্যে দশ শতাংশেরও বেশি ভোট তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী। তারা সিপিএম কংগ্রেসের দিকে আসতেই পারে। তবে এটাও উল্লেখ্য, কংগ্রেস ও বামেদের মতাদর্শ আলাদা। দু’পক্ষকে কিছুটা হলেও নমনীয় হতে হবে। কিন্তু, এই হিসেবও শেষ অবধি পাটিগণিতেরই। রাজনীতির জমিতে ঠিক কী চলছে, সেটাই স্থির করে দেবে জোটের ভাগ্য।