মানুষের মুখোমুখি ফের দাঁড়াতে প্রস্তত বামপন্থীরাঃ পবিত্র কর

টানা পাঁচ মাস লকডাউনের পর কেমন আছে ত্রিপুরা? উত্তর-পুর্ব ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বামপন্থীদের অবস্থান কোথায়? বিপ্লব দেবের সরকারকে মোকাবিলা করার জন্য বামেদের পরিকল্পনা কি? এই নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বললেন ত্রিপুরার বাম নেতা ও প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার পবিত্র কর।   

১৷ ত্রিপুরায় বর্তমানে বামপন্থীদের অবস্থান ঠিক কোন জায়গায়?

পবিত্র করঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সন্ত্রাস কবলিত হওয়া সত্ত্বেও ত্রিপুরা জুড়ে বামপন্থীদের অবস্থানগত এবং আদর্শগত অবস্থান যথেষ্ট দৃঢ়।

২. সরকার পক্ষের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে আপনাদের রক্তক্ষরণ অব্যাহত। সাংগঠনিক দিক থেকে আপনারা কতটা শক্তিশালী রয়েছেন?

পবিত্র করঃ সংগঠন দুর্বল হচ্ছে না। বিজেপির সন্ত্রাস ও পুলিশের অতিরিক্ত তৎপরতার কারণে দলীয় কর্মসূচীগুলিতে শারীরিক উপস্থিতি খুব একটা বেশী না হলেও কৌশলগত সক্রিয়তার জন্য সংগঠন দৃঢ় হচ্ছে। আপনাদের মনে আছে ২০১৮ সালে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করে বিজেপি সরকারে আসলেও বামফ্রন্টের ভোট ছিল ৪৪ শতাংশ। এই ভিত্তি দুর্বল হয়নি।

৩। এই মূহুর্তে ত্রিপুরায় বামেরা ক্ষমতায় নেই। বহু বামনেতার চালচলনে মানুষ বিরক্ত। এটা কি সত্যি?

পবিত্র করঃ এটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। এখনও রাজ্যে আমরা যথেষ্ট সক্রিয়। আমাদের গণভিত্তি দুর্বল হয়নি।

৪। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে ক্রমশ অপরাধমূলক কাজ বেড়েই চলেছে। এসব দেখেও পুলিশ নীরব রয়েছে। গোটা বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন?

পবিত্র করঃ হ্যাঁ। উপর তলার নির্দেশে রাজ্য সরকার কাজ চালাচ্ছে। এখন তো পুলিশের মধ্যেও ক্ষোভ জমতে শুরু করেছে।

৫। বিপ্লব দেবের সরকারের সবথেকে বড়ো দুর্নীতি কী?   

পবিত্র করঃ গত ২৫ বছরে যা ছিল কল্পনার অতীত। বিজেপি সরকার আসার পর থেকে নীচু স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর অবধি দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে।

৬। ত্রিপুরার এই মুহুর্তে শিক্ষার হাল তো একেবারে শোচনীয়?

পবিত্র করঃ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। একসময় সাক্ষরতার হারে কেরলকে ছাড়িয়ে দেশের পরথম স্থান দখল করেছিল ত্রিপুরা। এখন তা পিছিয়ে পড়া রাজ্যতে পরিণত হয়েছে।

৭। উপজাতি এলাকাগুলির ভোট ত্রিপুরার নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। আগামী দিনে এই ভোট আপনাদের সঙ্গে যাবে? 

পবিত্র করঃ পার্টি এবং গণমুক্তি পরিষদ উপজাতি ভোট ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই মুহুর্তে উপজাতি এলাকাগুলিতে অনাহার এবং অর্ধাহারে বহু মানুষ দিন কাটাচ্ছেন। আমরা আশাবাদী নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মানুষ বামপন্থীদের ফিরিয়ে আনবে।

৮। বিজেপি সরকার থাকাকালীন ত্রিপুরাতে মানুষ কি তার মৌলিক অধিকার পাচ্ছে?

পবিত্র করঃ সাংগঠনিক অধিকার এবং মানুষের সাধারণ অধিকার স্তব্ধ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। রাজ্যে ‘এসমা’ জারি হয়েছে। এখন তো বিজেপি নিজেদের গোষ্ঠী কোন্দল এড়াতে নিজেদের লোকেদের গ্রেফতার করাচ্ছে।

৯। বিপ্লব দেবের সরকারে রাজ্যের শিল্প এবং কৃষির কতটা উন্নতি হয়েছে?

পবিত্র করঃ কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য কোনও বিষয়েই রাজ্য সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা নেই। কৃষকরা ফসলের নায্য দাম পাচ্ছেন না। চাষের জন্য সরকারী তরফে নুন্যতম সাহায্য নেই। সেচব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে।

১০। রাজ্যে বেকারত্বের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে গিয়েছে। প্রচুর মানুষ কর্মহীন হয়েছেন। এর জন্য কে দায়ী?

পবিত্র করঃ বেকারত্বের হারে দেশের মধ্যে প্রথম ত্রিপুরা। পরিযায়ী শ্রমিকরা আবারও রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। রেগা বা টুয়েপ(যা ত্রিপুরর শহরাঞ্চলে ছিল) এখন বন্ধ। অনাহার, অর্ধাহার, রেশন কার্ড বন্ধক এবং শিশু বিক্রি চলছে গোটা রাজ্যে। এসব নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/durgapujo-is-coming-al-qaeda-militant-arrested-in-front-not-a-repeat-telecast-of-khagragarh/

১১। আপনাদের সরকার দীর্ঘ ২৫ বছর ছিল। এতদিন রাজ্যে সত্যিই শিল্প ছিল?

পবিত্র করঃ গত ২৫ বছরে ত্রিপুরায় প্রতিবছর গড়ে ৯ থেকে ১০ হাজার যুবক যুবতী সরকারী চাকরীর সুযোগ পেতেন। রাজ্যে তিনটি শিল্প তালুক তৈরি হয়েছিল। যা এখন প্রায় বন্ধ। যাদের শিল্প ছিল, তারাও ছেড়ে চলে যাচ্ছে।

১২। ত্রিপুরায় বামপন্থীদের ভবিষ্যত কি?

পবিত্র করঃ রাজ্যে বামপন্থীদের ভবিষ্যত নিশ্চিত। এখনই যদি ভোট হয়, মানুষের ভোটাধিকার যদি কেড়ে না নেওয়া হয়, যদি ইভিএমে কারচুপি না থাকে, তবে বিজেপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। মানুষ যেভাবে তৈরি হচ্ছে, বিজেপি সমস্ত অপচেষ্টা রসাতলে যাবে।

সম্পর্কিত পোস্ট