ভোকাল টনিকে ‘সোনার বাংলা’, সাদা কালো ফ্ল্যাশব্যাক
।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।
করোনার প্রতিষেধক ভ্যাকসিন, ভোটের টনিক ‘সোনার বাংলা’। বিজেপির প্রচারের ভঙ্গিমা অনেকটা সার্চ ইঞ্জিনের হিস্ট্রির মতো। যতই সময় যাচ্ছে বিষয়টা যেন পুরানো কাঁথায় নতুন কাপড়ের ব্যবহার। জোড়া তাপ্পি দিয়ে ফাটল আটকানো।
শুধুমাত্র বিজেপি বলে ভুল হবে, সাঁতরাগাছি থেকে বেলঘড়িয়া এক্সপ্রেসওয়ে অবধি “বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়” এই পোস্টারে ছেয়ে গেছে মহানগর। শহরে কোনও আগন্তকের আগমন হলে বোঝা দায় এটা নিজের প্রচার, নাকি মানুষের স্বতঃস্ফুর্ততা।
মুখে মুখে চাউর হওয়া ‘খেলা হবে’ এখন চায়ের দোকান থেকে রিসেপশন পার্টিতে বাজছে। হ্যাশট্যাগের দুনিয়ায় এনিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিস্তর। কিন্তু কেউ জানেই না এতকিছুর আয়োজন শুধুমাত্র ভোট উৎসবকে ঘিরে।
উৎসব তো বটেই। গত রবিবার বামেদের পর এখন ব্রিগেডে গেরুয়া চাঁদোয়া লেগে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা বলে কথা। এখন তো দিল্লি থেকে কলকাতা বিমানপথে আসতে আড়াই ঘণ্টা লাগে না। ভিআইপি হলে কি আকাশপথে ছাড় রয়েছে? চাটার্ড বিমানের ক্ষেত্রে কি বিশেষ কোনও ছাড় থাকে? কারণ, সদস্যপদ থেকে মধ্যাহ্নভোজন এবং রাতের ঘুমটা রাজধানীতে করতেও চলে যাচ্ছেন অনেকে।
নির্বাচনের মুখে এনিয়ে হুজ্জুতি করে লাভ নেই। আখেরে লাভ তো সাধারণ মানুষের নয়। উপর থেকে হাত নাড়লে কি দেখা যায়? আম আদমির সেই সৌভাগ্য হয়নি। বরং সুটকেসের ওপর বাচ্ছাকে বসিয়ে টেনে নিয়ে গেছেন মা। হাঁটতে হাঁটতে চটি ছিঁড়ে গেছে ৭ বছরের শিশুটার। পড়ে থাকা রুটি খেতে গিয়ে রেললাইনে পিষে মরতে হয়েছে অনেককে।
আরও পড়ুনঃ ভোটবাজিতে মমতার সেলেব টনিক, ক্ষোভে ফুঁসছেন নেত্রীর ঘনিষ্ঠরা
নিজেদের ভুমিপুত্রের কথা ভাবতে সময় লাগল এতটা? সোনার বাংলা তো ১৮ জন ‘উড়ন্ত’ সাংসদ মিলেও শুরু করা যেত? বিনিয়োগের রাস্তা তো খোলা ছিল। আবার সময় যতই যাবে ততই প্রশ্ন বাড়বে। অহেতুক তর্ক বাড়বে। বরং এটাই সুযোগ ‘কিছু হয়নি, কিছু হয়নি’ রব তুলে দেওয়া। একে অপরের দেওয়ালে কাদা ছুঁড়ে নিজের স্বচ্ছতার প্রচার করাটাই শ্রেয়।
কিন্তু হকের জন্য কে বলবে? কোথা থেকে হবে তার প্রচার? এ বলছে আমরা সেরা, ও বলছে আমরা সেরা। আর একপক্ষ বলছে ‘ওদের চাই না’। শহর থেকে গ্রাম লাল পোস্টারে ছেয়ে গেছে। কতগুলো নবীন মুখ নতুন করে প্রতিবাদের থার্মোমিটার নিয়ে রাস্তায় নেমেছে।
শামিল হচ্ছেন কৃষকরা। যারা সিঙ্ঘু, টিকরি, গাজিয়াবাদের ১০০ টা চাঁদ দেখলেন। যারা দেখলেন জল কামান, কংক্রিটের সীমান্ত, কাঁটাতারের বেড়া আর সরকারের অনমনীয়তা। আস্ত একটা ফানুসে চড়ে ভাত, শুক্ত, ডাল খেয়ে এখন যারা ১৮ হাজারের কথা বলছেন। তাঁরাও তো কৃষকদের ন্যায্য দাবী থেকে বঞ্চিত করছেন।
একটা নয়, ৫ রাজ্যের নির্বাচনের নারকেল ফাটিয়ে শুরু হয়েছে ভোটের পুজো। প্রার্থী সেটিংয়ে এপার থেকে উড়ে আসছেন একজন। ওপার থেকে উড়ে আসছেন একজন। মন্ত্রীতে মন্ত্রীতে ছয়লাপ। আঙুলের কর গুনে বলে দিচ্ছেন পরিসংখ্যান। আগে মান অভিমানের পালা চলছে। এরই মধ্যে সব সেটিং করে, মিটিং করে ফয়সালা করে নিতে হবে।
সোনার বাংলার থেকেও বড় মডেল, “মানুষের জন্য কাজ করতে চাই”। ভয়ঙ্কর এই শব্দগুচ্ছ এখন মরীচিকার মতো মনে হচ্ছে। মৃত্যু আসন্ন। তবুও কুয়োর সিড়ি দেখে নামছেন অনেকেই। এই কালারফুল ডিসপ্লের মাঝে সবাই ভুলে গেছি ফ্ল্যাশব্যাকের কিছু ছবি।
মৃত মাকে ঘুমন্ত ভেবে ডেকে চলেছে কোলের শিশু। রাস্তায় পড়ে থাকা দুধ একসঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছে মানুষ সারমেয়। একই থালায় রুটির চার টুকরো খেয়ে দুই জাতের মুখে হাঁসি। জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে ধর্মের চাদর অদলবদল।
প্রতিকূলতা আমাদের মিলিয়ে দিলেও, অনুকুল পরিবেশ আমাদের জন্য ‘দমবন্ধ’ এর কারণ। তাই তো একুশ শতকেও এসে ক্ষমতার বলে বলীয়ান মানুষ গনতন্ত্র খুঁজে বেড়াচ্ছে।