পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে মইদুলকে! এই সরকারের পতন সময়ের অপেক্ষা- মন্তব্য বাম নেতা সুশান্ত ঘোষের
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ মইদুলের মৃত্যুতে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বরা। সোমবার সকালে মারা যান মইদুল।
এই বিষয়ে বাম নেতা এবং চিকিৎসক ডাঃ ফুয়াদ হালিম দ্য কোয়ারিকে জানান, এই আক্রমন বর্বরচিত, হিংসাত্মক। মইদুল ছাড়াও অনেক কমরেডই জখম হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা চলছে। মইদুল আমাদের ছেড়ে চলে গেল।
তিনি জানান, পুলিশের অমানবিক লাঠিচার্জে পেশিতে আঘাত লাগে মইদুলের। সেই আঘাত থেকেই শরীরে বিভিন্ন ফ্লুইড নিঃসৃত হতে শুরু করে। কিডনি ফেলিয়র হতে শুরু করে। ডায়ালিসিস করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ফুসফুসেও জল জমতে শুরু করে। সকালেই কার্ডিাক অ্যারেস্ট হয়। তারপরই মারা যান মইদুল।
ডা হালিম আরও বলেন, চাকরির দাবিতে যে ছাত্র যুবরা আন্দোলন সংগঠিত করেছিল। সেই আন্দোলন রুখতে পুলিশের ভূমিকা নিন্দাজনক। আমরা আহ্বান জানাবো সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে এগিয়ে এসে সমবেত প্রতিবাদ জানানো জন্য। এই বিষয়টি অবিলম্বে মানবাধিকার কমিশনের সামনে আনা উচিৎ। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া উচিৎ।
মৃত কমরেডের পরিবারের প্রতি শোকজ্ঞাপন করে তিনি বলেন, মইদুল তরতাজা ছেলে। তার বিধবা মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। আমরা চাই আগামী দিনে কমরেড মইদুলের স্মৃতি নিয়েই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যেতে।
দ্য কোয়ারিকে বাম নেতা সুশান্ত ঘোষ বলেন, এই আক্রমণকে নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। ছাত্র-যুবরা নবান্ন ঘেরাও করতে গিয়েছিল। তারা তো নবান্ন দখল করতে যায়নি। তারা দাবি জানাতে গিয়েছিল। তবে এই অসভ্য সরকার তাদের পিছনে পুলিশ লেলিয়ে দেয়। আক্রমনের হাত থেকে বাদ যায়নি মহিলা কমরেডরাও।
তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ধপবাজ সরকার শুধু মিথ্যা কথা বলছে। ওরা যত এইসব করবে ততই মানুষের মনে ক্ষোভ ও রাগ পুঞ্জিভূত হবে।২০২১ –এ কারোর ক্ষমতা নেই তৃণমূলকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনবে। খেলা হবে স্লোগান, আর দুয়ারে সরকার করে কোনো লাভ হবে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে যেভাবে রক্তের দাগ লাগানো হল অর বদলা মানুষ নেবেই। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
বাংলার মানুষের রোজগার নেই, তাই ৫ টাকা করে ক্যান্টিনে খাবার খাওয়াতে হচ্ছে- কটাক্ষ দিলীপ ঘোষের
বাম ছাত্র নেতা সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, সব মৃত্যুগুলি একসূত্রে গাঁথা। যারা খুন করালো তারা কোনোদিন এর বিচার করবে এটা পাগলেও মনে করে না।তবে এর পিছনে সিভিক ভলেন্টিয়ারের আড়ালে সরকারের পোষা গুন্ডারা পরিকল্পনা মাফিক খুন করেছে। তাই এই সরকার যতদিন থাকবে ততদিন কোনো বিচার হবে না। এই সরকারের বদলের পরেই এর বিচার হবে। তখন কোনো দলদাস পুলিশ রেহাই পাবে না।
দ্য কোয়ারিকে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, পরিকল্পনা মাফিক খুন করা হয়েছে মইদুলকে। ওরা চাকরির দাবিতে আন্দোলন করেছিল। তাদের রাস্তায় ফেলে যেভাবে পুলিশ মারধোর করেছে তাতে গোটা ঘটনা যে প্ল্যান করেই করা হয়েছে তা পরিস্কার। এই ঘটনার প্রতিবাদে মানুষ পথে নামবেই।
সুদীপ্ত গুপ্ত মিছিল থেকে দাবি করেছিল ছাত্র-যুবদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। পরিবর্তে ওকেও আট বছর আগে এই সরকারের পুলিশ খুন করেছিল। এই সরকার শুধু আক্রমন করতে জানে। দাবি মেটাতে পারেনা। সুদীপ্ত বিচার পায়নি। মাঝখানে আরও অনেকেই আছে তারাও বিচার পায়নি। আবার মইদুলের মত তরতাজা প্রাণ চলে গেল। আমরা বিচার চাই। একইসঙ্গে দেখতে চাই এর শেষ কোথায়।
উল্লেখ্য, গত ১১ ফেব্রুয়ারি নবান্ন অভিযানের জন্য মইদুল কলকাতায় এসেছিলেন অন্যান্যদের সঙ্গে। সামনের সারিতেই তাকে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। নবান্ন অভিযানে বাম-কংগ্রেস ছাত্র যুবদের রুখতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। বেধড়ক মারধর করা হয়েছিল বাম কর্মী – সমর্থকদের উপর। সেই মারের আঘাতে রাস্তাতেই প্রায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন মইদুল ইসলাম। তাকে পরে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।