ভোটবাজিতে মমতার সেলেব টনিক, ক্ষোভে ফুঁসছেন নেত্রীর ঘনিষ্ঠরা

।। সহেলী চক্রবর্তী ।। 

মমতার প্রার্থী তালিকায় এবার যেন চাঁদের হাট। পুরোনো বিধায়কদের মধ্যে ২৭ জন তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। তারপরই ক্ষোভের আগুনের আঁচ যেন সর্বত্র। এরমধ্যেই শিবপুপরের বিদায়ী বিধায়ক জটু লাহিড়ি নাম লিখিয়েছেন বিজেপিতে। ভাঙড়ের আরাবুল ইসলাম রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। টিকিট পাননি মমতার দীর্ঘদিনের সঙ্গী সোনালী গুহ। বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে তিনি মন বাড়িয়েছেন বিজেপিতে।

তবে রাজনীতিবিদদের নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও বেশ কিছু জায়গায় ক্রিকেটার ও তারকা প্রার্থীদের নিয়ে বিক্ষোভ চলছেই। ব্যারাকপুর, বাঁকুড়া, আসানসোল দক্ষিণ, মেদিনীপুর, বারাসাতের তারকা প্রার্থীতে খুশি নন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারাই। বিগত দিনে দেখা গিয়েছে সেলিব্রিটি প্রার্থীদের ভোটের পর দেখা পাওয়াটাই মুস্কিল হয়ে ওঠে।

বিগত দিনে মুনমুন সেন, সন্ধ্যা রায়, দেবশ্রী রায়, বর্তমানে চিরঞ্জিত, নুসরত জাহান প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের এলাকাতে পাওয়াই দুস্কর। নিজেদের পেশা ছেড়ে তারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেন কতটুকু সময়ই বা দিতে পারবেন মানুষের জন্য?

লোকসভা নির্বাচনের পর সাংসদ মিমি, দেব, নুসরতের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন বিরোধীরা।
বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, বারাসাতের মত আসনগুলি থেকে সেখানকার স্থানীয় রাজনীতিবিদদের প্রার্থী করল না কেন দল? উঠছে সে প্রশ্নও। প্রশ্ন উঠছে তারকা প্রার্থীদের রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে। তৃণমূলের অন্দরেই যেন এখন ছন্নছাড়া অবস্থা।

আরও পড়ুনঃ West Bengal Assembly Election আজই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারে বিজেপি

বিদ্যুৎগতিতে মমতার ঘনিষ্ঠবৃত্তে থাকা মানুষরা সিদ্ধান্ত বদল করতে শুরু করেছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলছেন, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আইপ্যাকের হস্তক্ষেপ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না দলীয় কর্মীরা। প্রত্যেকেই একইসুরে গান গাইছেন, দল এখন মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের হাতে নেই।

তৃণমূলের বিক্ষুদ্ধ অংশের কথায়, তারকা প্রার্থীরা কোনোদিন ময়দানে নেমে রাজনীতির কাজ করেনি। এমনকি প্রচারের আগে পর্যন্ত তাদের রাজনীতির পাঠশালায় ক্লাস নিতে হচ্ছে? তাদের প্রশ্ন রাজনীতি কী চারদেওয়ালে বসে ক্লাস নিলে করে ফেলা সম্ভব?
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছেন তাতে স্পষ্ট উনি দলের ভগ্নদশা রুখতে বা যেসব গর্ত দিয়ে বেনোজল ঢুকছিল তা আটকাতে উনি সেলেব টনিক ব্যবহার করছেন। তবে শাক দিয়ে আর মাছ যে ঢাকা যাবে না সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াতে শুরু করেছেন আমজনতা।

এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। তবে তৃণমূল কংগ্রেসকে যারা নিজেদের পরিবার বলে প্রচার করতেন, আজ তারাই কিনা টিকিট না পেয়ে প্রিয় দিদির প্রতি রাশি রাশি ক্ষোভ-অভিমান ছুঁড়ে দিচ্ছেন।

“২৯৪ টি কেন্দ্রে আমিই প্রার্থী”- শব্দগুচ্ছের বিরোধীতা করছেন দলেরই নেতৃত্বরা। তাদের কথায় দলে একনায়কতন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নেই। কোনো মান সম্মান নেই। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন ভোটের মুখে এসে কেন এই ধরণের কথা তারা বলছেন?
পর্যবেক্ষকদের মতে, সেলেব প্রার্থীতে দলের ভগ্নদশা আরও একবার বেরিয়ে এল। হয়ত লোকসভা নির্বাচনের বিপর্যয়ের ছবি ফিরে আসতে পারে আরও একবার। তবে একইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল তাঁর ঘনিষ্ঠবৃত্তে থাকা মানুষদের আসল চেহারাও।

সম্পর্কিত পোস্ট