অমিত শাহকে মিথ্যা না বলার হুঙ্কার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে গিয়েছিলেন, বিজেপি সিএএ লাগু করার পথ থেকে সরছে না। কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে গেলেই রাজ্যে লাগু হবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। মঙ্গলবার তারই পাল্টা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি জানিয়ে দিলেন, ‘বিজেপি একটি চিটিংবাজ দল। ওরা যাই বলুক, যাই করুক, সেটাই মিথ্যের স্তূপ। আমি বলে দিয়েছি, এদেশের প্রতিটি মানুষ এদেশের নাগরিক। ১৯৭১ সালের আগে যাঁরা এসেছেন সকলেই নাগরিক। মতুয়ারাও নাগরিক। আমার বাংলার প্রতিটি মানুষ এ দেশের নাগরিক। ওঁরা মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারেন না।’

মিথ্যাচার করছেন অমিত শাহ। নবান্ন থেকে সাংবাদিক সম্মেলন থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিত্রার্থের জন্য মিথ্যাচারের অভিযোগ আনলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ।তাঁর অভিযোগ, বিজেপির হয়ে প্রচারে এসে কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যকেও উড়িয়ে দিলেন তিনি।

মমতা বলেন, মিথ্যা তথ্য দেওয়া কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে বেমানান। আমি অমিতজিকে বলব মিথ্যা কথা বলবেন না। যা যা মিথ্যা কথা বলেছেন সব কিছুর প্রমাণ আমার কাছে আছে। কাল মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর প্রমাণ-সহ সব বলব।

রাজ্যে প্রচারে এসে বিজেপি সেনাপতি দাবি করেছিলেন, তৃণমূলের আমলে কোনও শিল্প, চাকরি কিছুই হয়নি বাংলায়। অমিত শাহের সেই দাবিরই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ রাজনীতির জন্য বিজেপি সবকিছু করতে পারে। বিজেপি একটা চিটিংবাজের পার্টি।

তিনি বলেন, অমিত শাহ কাল অনেক মিথ্যে কথা বলেছেন।আমরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে দেশে এক নম্বর।রাজ্য নয়, কেন্দ্রীয় সরকারই এই তথ্য দিয়েছে।কাল সাংবাদিক বৈঠকের পর প্রমাণ-সহ সব তথ্য দেব। তথ্য যাচাই না করে মনগড়া তথ্য দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।’

এখানেই শেষ নয়, বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এনআরসি, এনপিআর নিয়েও তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, আমরা কোনওভাবেই সিএএ মানব না। আমরা প্রথম থেকেই সিএএ-এনআরসি বিরোধী।

এদিন মতুয়াদের রাজনৈতিকভাবে ঘুঁটি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, মতুয়ারা আগে থেকেই নাগরিক। আমরাই মতুয়াদের স্বীকৃতি দিয়েছি।আপনারা আর নতুন করে কী করবেন।সব জেনে বুঝে মিথ্যাচার করছেন।’

সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে দুয়ারে দুয়ারে সরকার সরকারি প্রকল্পের সময়সীমা ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে বলে জানান মমতা। এরপরই অমিত শাহের দাবিগুলিকে কার্যত নস্যাৎ করেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। আজ, মঙ্গলবার বেছে বেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আক্রমণের জবাব দেবেন। এটা জানিয়ে রেখেই এদিন সামান্য কটাক্ষের পথে হাঁটেন মমতা।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/darjeeling-issue-bimal-gurung-public-meeting/

তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, নেতাজিকে গোটা বিশ্ব সেলাম করে। কারণ তাঁদের মধ্যে একটা আন্তর্জাতিক চেতনা আছে। সেই আন্তর্জাতিক চেতনা বিশ্বে বাংলার ভোরের স্বপ্ন দেখায়। চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেতা শির, এই কথাগুলো রবীন্দ্রনাথ লিখতে পারেন। আগে ওদের এগুলো নিয়ে পড়শোনা করতে বলুন। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কোনও অবমাননা মানব না, এটা দেশমাতৃকাকে সমর্পণ করে। আর জনগণমন নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছে তাদের বলে দেই, রক্ত দেওয়ার জন্য তৈরি থাকব। কিন্তু, জাতীয় সংগীতকে অপমান করতে আমরা দেব না।’

একুশের ভোটের আগে তৃণমূল বনাম বিজেপির লড়াইয়ের প্রধান হাতিয়ার যে বাঙালি আবেগ হতে চলেছে, তা এখন দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। কে বেশি দাম বাঙালি আবেগকে দেয়, সেটা প্রমাণ করার দৌড়ে যেমন বিজেপি নাম লিখিয়েছে। তেমনই তৃণমূলও পাল্টা একের পর এক রণনীতি বানাচ্ছে। আজ ‘রক্ত দেওয়ার’ হুঁশিয়ারির মাধ্যমে সেই আবেগকেই আরও উস্কে দিতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বলছেন রাজ্যের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।

অমিত শাহ রবিবারের র‍্যালি থেকেও বলেছেন, বিজেপিকে একবার সুযোগ দেওয়া হলে তাঁরা সোনার বাংলা গড়ে দেখাবেন। মুখ্যমন্ত্রীর সামনে সেই প্রসঙ্গ উত্থাপনের করতেই পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বসেন তিনি। জানতে চান, ‘অমিত শাহ জানেন তো সোনা কাকে বলে, রুপা কাকে বলে। আর আর্মস কাকে বলে, দাঙ্গা কাকে বলে, এগুলো জানেন তো!’

অন্যদিকে সিএএ কার্যকর করার বিষয়ে অমিত শাহ গতকাল বলেছেন, করোনার টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু হলে ও সংক্রমণ কমলে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে। যা নিয়ে খোঁচার সুরে মমতা বলেন, ‘বিজেপি ইজ এ চিটিংবাজ পার্টি। বিজেপি নিজেদের নিয়ে ভাবুক, নাগরিকদের নিয়ে নয়।’

সম্পর্কিত পোস্ট