আম্ফান মোকাবিলাঃ নিরাপদ আশ্রয়ে সরলেন ৩ লক্ষ মানুষ, রাতে নবান্নেই মুখ্যমন্ত্রী

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ক্রমশ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন আম্ফান।বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে আছড়ে পড়ার কথা থাকলেও ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়ে গিয়েছে ঝড়বৃষ্টি।

মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকে জানালেন,

  • ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে তিন লক্ষ মানুষকে সরিয়ে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
  • তাঁদের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে ২ লক্ষ,
  • উত্তর ২৪ পরগনা থেকে ৫০,০০০,
  • পূর্ব মেদিনীপুর থেকে ৪০,০০০
  • পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ১০,০০০ মানুষকে সরানো হয়।
  • যাঁদের বাড়ি বিপজ্জনক অবস্থায় আছে তাঁদের জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণশিবিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

খোলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম। কন্ট্রোল রুমের টোল ফ্রি নম্বর হল–১০৭০। এবং অন্য নম্বরগুলি হল— ০৩৩–২২১৪–৩৫২৬/‌১৯৯৫।

আম্ফান মোকাবিলায় প্রস্তুতি,বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যু বৃ্দ্ধের

করোনা সংক্রমণ ঘিরে গোটা রাজ্য ঘরবন্দি। লকডাউনে এলোমেলো মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র। আর এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের মানুষকে বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বাড়িতে থাকারই নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি বলেন,  ‘‌মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে বিপর্যয় মোকাবিলা দলও। মুখ্যসচিবের নির্দেশে কাজ করছে টাস্ক ফোর্স। সাইক্লোন সেন্টারে যতটা সম্ভব সতর্কতা নেবেন।’

এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকে তিনি বলেন, “করোনা অবহেই রাজ্যে আসছেন আম্ফান। কেউ কেউ বলছে এই ঝড় ভয়াবহ হবে।বুলবুল ও আয়লাকেও হার মানাবে।আজ থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে।কাল বেলা দুটো নাগাদ স্থলভাগের হিট করবে আম্ফান দক্ষিণ ২৪ পরগনা সাগরে।তারপর এই ঘূর্ণিঝড় চলবে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত।সকালে এই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে প্রবেশ করবে।”

সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করে এদিন তিনি বলেন, সরকার এই দুর্যোগ মোকাবিলায় সবরকম ভাবে প্রস্তুত।

রাজ্যবাসীর উদ্দেশ তাঁর বার্তা-

  • ঝড়ের সময় কেউ ঘর থেকে বেরোবেন না।
  • এই ঝড় অন্য ঝড়ের মত নয়।
  • এই ঝড়ের তিনটি অংশ।
  • তিনবার আঘাত হানার সম্ভাবনা।
  • প্রথমবার ঝড়টা থেমে যাওয়ার পর এমন ভাবার কারণ নেই ঝড় থেমে গেছে।
  • শেষ দমকাটা হল লেজ।
  • তাতেই সব গুড়িয়ে দিয়ে চলে যায়।

এদিন আম্ফান প্রসঙ্গে রাজ্যবাসীকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলার পাশাপাশি টেনে আনেন ওড়িশায় ফনীর প্রসঙ্গ-ও।

তিনি বলেন “ওড়িশায় ফণীর সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল এই লেজে। বুধবার সকাল ১১-১২ টা থেকে গোটা রাত্রিটা খুবই ডেঞ্জারাস। যাদের ভালো পাকা বাড়ি আছে তারাই শুধু বাড়িতে থাকুন, বাকিরা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসুন।”

এই সতর্কবার্তা দেন কলকাতার জন্যও। কারণ ঝড় যখন আসবে এতে প্রভাবিত হবে কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হুগলি হাওড়ার মত জেলাগুলি।

প্রভাব শুরু আম্ফানের, উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে শুরু বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি

ইতিমধ্যেই ঘোড়ামারা, মৌসুনি, জি-প্লট, গোসাবার ছোট মলখালি দ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ, কাকদ্বীপ, প্রভৃতি জায়গায় বাড়তি সুরক্ষা নেওয়া হয়েছে।

বুলবুল ও আয়লায় প্রভাবিত উত্তর ২৪ পরগনা বিস্তীর্ণ এলাকায় লাগাতার সতর্ক করা হচ্ছে।

বুলবুলের সময় এক লক্ষ আশি হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে এইবার সতর্কতার জন্য প্রায় ৩ লক্ষ মানুষকে ঘর থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যেই যেখানে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা সেখানে ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এর টিম পৌঁছে গিয়েছে।

অন্যদিকে, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বুধবার বন্ধ রাখার জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ করেন তিনি।

তাঁর কথায়, “এই অবস্থার মধ্যে তারা ফিরলে বিপদের মধ্যে পড়তে পারে। আমরা চাইনা কারও কোনও সমস্যা হোক।”

 

সম্পর্কিত পোস্ট