সিঙ্গুর নিয়ে বিলম্বিত বোধদয় মমতার!

।। শুভজিৎ চক্রবর্তী।।

কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত। এই কথাকেই মূলমন্ত্র করে সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানার জন্য জমি দিতে চেয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বামেদের এই নীতির বিরোধিতা করে সিঙ্গুরে দীর্ঘতম আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। প্রতিশ্রুতিমতো ১১ সালে আজকের দিনেই সিঙ্গুর কৃষি জমি পুর্নবাসন এবং উন্নয়ন বিল পাশ করেছিল তৃণমূল সরকার। সেই কথা উল্লেখ করে টুইট করলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।
নিজের টুইটে দীর্ঘ সময় ধরে দিল্লি উপকন্ঠে কৃষকদের আন্দোলনের কথাও উল্লেখ করে কৃষকদের অধিকারের কথা তুলে ধরলেন তিনি।

সম্প্রতি ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের মুখপাত্র রাকেশ টিকায়িত, সাধারণ সম্পাদক যদুবর সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করে আরও একবার কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ২৪ এর নির্বাচনকে পাখির চোখ করে দলে সাধারণ সম্পাদক পদে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে হয়েছে। মমতাকে বিরোধী মুখ করে জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের বিস্তার নিয়েও ব্যাপক আলোচনাও হচ্ছে। ঠিক সেই সময়ে কৃষকদের বৈঠক অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে মনে করা হচ্ছে।

২১ বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক উত্তাপের কথা মাথায় রেখে মমতা যে আগামী দিনে মোদি-শাহের বিরুদ্ধে প্রথমের সারীতে থাকবেন এবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী পদে উত্তীর্ণ হতে গেলে উদাহরণস্বরূপ অর্থনীতি, শিল্প এবং কৃষিতে সবল রাজ্যের প্রয়োজন হয়। সেই উদাহরণ কী মমতা বন্দোপাধ্যায় তুলে ধরতে পারবেন? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে।

জমি ফিরত আইনের মাধ্যমে সিঙ্গুরের কত শতাংশ জমি কৃষকরা ফিরে পেয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দশ বছর পরেও। একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে ফিরত পাওয়া জমির কত অংশে চাষ করতে পারছেন কৃষকরা? একসময় জাতীয় আন্দোলনের শিরোনামে থাকা সিঙ্গুরে মমতার দীর্ঘ আন্দোলনকে কুর্নিশ জানিয়েছিলেন দেশের একাধিক রাজনৈতিক দল৷ জমি ফিরতের পর সিঙ্গুরে গিয়ে সর্ষের বীজ ছড়িয়েছিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ কিন্তু এখনও বেশীরভাগ জমি খালি পড়ে রয়েছে৷ বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে ভেঙে দেওয়া কারখানার ইট, সুড়কির কারণে জমিতে বন্ধাত্বে পরিণত হয়েছে৷ ফাটল জমি থেকে উচ্চারিত হচ্ছে কৃষকের যন্ত্রণা কথা। এখন সেই জমিতে এগরিকালচার ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গঠনের কথা বলছেন।

সব মিলিয়ে সিঙ্গুর নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরাট অর্থব্যয় ছাড়া আর কিছু হয়নি। যা তেল পুড়েছে তাতে টাটা নাচেনি। সুপ্রিম কোর্টে জয়লাভ হলেও আদতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরাই। আজ ২৪ এর নির্বাচনকে পাখির চোখ করে মমতা বন্দোপাধ্যায় এগানোর আগে দেখা দরকার মমতার সরকারে কতটা খুশি বণিকমহল। কারণ শিল্প এবং কৃষি সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই চলে জাতীয় অর্থনীতি। একটা পায়ে কুড়ুল মেরে অপরের ওপর ভরসা পাবেন কীভাবে?

এবিষয়ে সর্বভারতীয় কিষাণ সভার সাধারণ সম্পাদক তথা সিপি(আই)এমের পলিটব্যুরো সদস্য হান্নান মোল্লা বলেন, সরকার চুক্তি করেছিল জমি ফিরত দেবে। এখনও অবধি ১০ শতাংশ জমি কৃষকরা ফেরত পাননি। আবার যারা জমি ফিরত পেয়েছেন অনেকের চাষের উপযুক্ত পরিবেশ নেই৷ যারা টাকা নেয়নি তাঁরা তো বেশী করে বিপদে পড়ল৷ এই সমস্ত লোক ঠকানো কথা আগেও বলেছেন, এখনও বলছেন। যদি সত্যিকারের কৃষকদরদী হন তাহলে যে পরিমাণ জমিতে চাষ হচ্ছে না সেই পরিমাণ উর্বর জমি ফিরত দেওয়া হোক৷ প্রয়োজন পড়লে সরকার জমি কিনে ফিরত দিক৷ এতে কৃষকের লাভ হবে।

সিপি(আই)এমের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, শুধুমাত্র বিল পাশ হয়েছিল। পরে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যেহেতু টাটারা জমি ছেড়ে চলে গেছে তাই কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আসলে বন্ধাত্ব জমির দশক পালন করছেন তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট