শনিবার বিকেলে মমতার ডাকা বৈঠকে নির্ধারিত হবে আইপ্যাকের ভবিষ্যত

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্ক: তৃণমূলে কিছু একটা হয়েছে। হ্যাঁ, সত্যিই তৃণমূলে কিছু একটা হয়েছে। আর তাই চার পুরনিগমের  ভোটের দিন‌ই দলের কোর কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু কি হয়েছে তৃণমূলে? নবীন-প্রবীনে সংঘাত?

নবীন-প্রবীণের সংঘাত শব্দটা ভারতীয় রাজনীতিতে বেশ মুখরোচক শব্দবন্ধনী। কোনও দলে কোনও বিষয় নিয়ে সামান্যতম মতভেদ দেখা গেলেই খুব সহজেই এই শব্দবন্ধটি ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে কংগ্রেস সিপিএম, তৃণমূল সকলেই সমান ব্যবহার পায়।  তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে হয়েছেটা কি?

নবীন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা প্রবীণ মমতার দ্বন্দ্ব এটা নয়। এটা পুরোপুরি এক ব্যবসায়ী সংস্থাকে ঘিরে কিছু ভুল বোঝাবুঝির বিষয়। সেইসঙ্গে একদল স্বার্থান্বেষীর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা। তাই এই সমস্যা শনিবার বিকেলের পর‌ই মিটে যাবে বলে মনে হয়।

২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে হঠাৎ ধাক্কা খাওয়ার পর তৃণমূলের হয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তরুণ অভিষেক। আমজনতার মনের বিভ্রান্তি দূর করার জন্য তৃণমূলের প্রচার রণকৌশল তৈরির দায়িত্ব দেন প্রশান্ত কিশোরের পেশাদার সংস্থা আইপ্যাককে। সেই রণকৌশল রচনার অঙ্গ  হিসেবেই কিছু ক্ষেত্রে তৃণমূলের সাংগঠনিক বিষয়ে মাথা গলায় পিকে।

অভিষেকের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সুফল একুশের বিধানসভা নির্বাচনেই পেয়েছে তৃণমূল। তাদের হাত ধরে তৃণমূলের এই সাফল্য বেলাগাম করে তোলে আইপ্যাককে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রশান্ত কিশোর নিজের সংস্থাকে ব্যবহার করে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে শুরু করেন। যা চূড়ান্ত আকার ধারণ করে গত বছরের শেষে কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে।

সেবারেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আইপ্যাকের ভূমিকা পরামর্শ দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তৃণমূলের হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কোনও এক্তিয়ার নেই তাদের। কিন্তু তাতেও বোধদয় হয়নি ভোট ব্যবসায়ী প্রশান্ত কিশোরের। বাংলার পুরনির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফের তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেন।

এমনকি দলের কাউকে না জানিয়ে একটি প্রার্থী তালিকা পর্যন্ত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে দেয় আইপ্যাক। এমনও অভিযোগ ওঠে আইপ্যাকের কর্মীরা প্রার্থী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তৃণমূলের বেশকিছু নিচুতলার কর্মীর কাছ থেকে মোটা টাকা উৎকোচ নিয়েছে!

এবারে আর শুধু বার্তা দেওয়া নয়, অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নেন তৃণমূলনেত্রী। স্পষ্ট জানিয়ে দেন তাঁর অনুমোদন ছাড়া কোনও প্রার্থী তালিকাকে মান্যতা দেওয়া হবে না। এই বিষয়টি নিয়েই অনেকে বলছেন আইপ্যাকের বিরোধিতা মানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা।

কিন্তু গোটা ঘটনাক্রম নিরপেক্ষ ভঙ্গিতে দেখলে বোঝা যাবে ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আইপ্যাকের পক্ষে একবারও মুখ খোলেননি। বাকিদের মতো তিনিও চান দলের সংগঠন দলের নেতারাই সামলান। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের তথাকথিত কিছু শীর্ষস্থানীয় নেতা অভিষেককে নিশানা করে যাবতীয় ব্যর্থতার দায় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করছেন।

ঘটনাচক্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই বর্ষীয়ান নেতাদের যথেষ্ট সম্মান-শ্রদ্ধা করেন। তবে শুধু যে বর্ষীয়ানরাই তৃণমূলে গন্ডগোল পাকাচ্ছে তা নয়, বরং তরুণ প্রজন্মের কেউ কেউ অভিষেককে ব্যবহার করে দ্রুত তৃণমূলের শীর্ষস্থানে উঠে আসতে চাইছেন।

তাঁরা দলের অনুমোদন না নিয়েই বিভিন্ন বিতর্কিত লেখা পোস্ট করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই পরিস্থিতিতে দলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি বাড়তে না দিয়ে গোড়াতেই সব ভুলবোঝাবুঝি আলোচনার ভিত্তিতে মিটিয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে রাজনৈতিক উচ্চতা তাতে শনিবার বিকেলেই তিনি সব সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন। তবে কুচক্রী প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাকের নম্বর কাটা যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।

এক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী, তেমনই বাংলার শাসকদলের ভবিষ্যৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের কারোর কোনও দ্বিমত নেই। তাই সমস্যার সমাধান বলতে গেলে হাতের নাগালে। এখন সেটা শুধু ধরার অপেক্ষা!

সম্পর্কিত পোস্ট