জীবনকে প্রাসঙ্গিক হতে দিলেন না মমতা, বুঝিয়ে দিলেন কোনমতেই ‘বঙ্গভঙ্গ’ নয়

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বুধবার উত্তরবঙ্গ সফর সেরে কলকাতায় ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাঁর এই উত্তরবঙ্গ সফরের ঠিক আগে পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে ভিডিও বার্তা দিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন কেএল‌ও প্রধান জীবন সিংহ। বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কামতাপুরে পা রাখলে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেবেন! যদিও জীবনের এই হুঁশিয়ারিতে এতটুকু বিচলিত হলেন না মুখ্যমন্ত্রী, পাত্তাই দিলেন না কেএল‌ও প্রধানকে।

আজ নয়, বেশ কয়েক দশক ধরে পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে নাশকতার পথ বেছে নিয়েছেন জীবন সিংহ। ভারত বিরোধী বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে উত্তরবঙ্গজুড়ে মাঝেমধ্যেই নাশকতা চালান। বাম জমানায় এই কেএলওর একের পর এক নাশকতামূলক ঘটনায় উত্তরবঙ্গজুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে ছিল। যদিও তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসে।

তাছাড়া রাজ্য সরকারের পুনর্বাসন প্যাকেজে আকৃষ্ট হয়ে জীবন সিংহের বহু সহকর্মী আত্মসমর্পণ করেছেন। বর্তমানে কেএল‌ও’র শক্তি যৎসামান্য বলেই বিভিন্ন গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে। তবে যারা মানুষকে হত্যা করতে চায় তারা সংখ্যায় দু-চারজন হলেও ভয়ঙ্কর।

এই জীবন সিংহদের দাবি, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে যে কোচবিহার রাজ্য ছিল বা অতীতের যে বৃহৎ কোচ সাম্রাজ্য ছিল তা নিয়ে পৃথক কামতাপুর রাজ্য গঠন করতে হবে। বর্তমান কোচবিহার জেলা ছাড়াও পাশের রাজ্য অসমের কিছু এলাকা তাঁদের এই দাবি করা কামতাপুর রাজ্যের মধ্যে পড়ে। তবে অতীতে সিপিএম হোক বা বর্তমানের তৃণমূল, বাংলা ক্ষমতায় যারা থেকেছে প্রত্যেকেই স্পষ্ট বলেছে বাংলাকে আর ভাগ করতে দেওয়া চলবে না।

দিল্লির প্রাক্তন বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার মন্তব্যে তপ্ত বাংলা, প্রায় আট ঘন্টা অবরুদ্ধ জাতীয় সড়ক

এমনিতেই দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় বাঙালি জাতিকে দু’টুকরো করে দেওয়া হয়েছে। তার ফল আজও ভোগ করছে বাঙালি। এপার-ওপার বাংলার মানুষ আজ‌ও অজস্র সমস্যায় বিদ্ধ। তাই কেএল‌ও’র মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর বাংলা ভাগ করার দাবি যে তিনি মেনে নেবেন না এবারের উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা ফের স্পষ্ট করে দেন। বলেন, সাহস থাকলে আমার বুকে বন্দুক ধরো, কিন্তু বাংলা ভাগের দাবি কোনমতেই মেনে নেওয়া হবে না।

আর কেনই জীবন সিংহদের বাংলা ভাগের দাবি মানবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার? এই গণতান্ত্রিক সময়ে রাজ আমলের সীমারেখা নিয়ে, সেই পুরনো রাজন্য প্রথার ভাবাদর্শকে আশ্রয় করে পৃথক হতে চাওয়ার দাবি কখনও মেনে নেওয়া সম্ভব?

এক্ষেত্রে নামেই সাধারণ কোচ বা রাজবংশী মানুষের অধিকারের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু পুরনো ক্ষমতাসীনদের হাতেই যে সবকিছু থাকবে, রাজন্য প্রথার মতো করে আমজনতাকে তারা শোষণ করে চলবে তা একরকম স্পষ্ট। আর তা ছাড়া কি জীবন সিংহের কামতাপুরীদের প্রতি অবদান‌ই বা কী? তাঁরা শুধুই মানুষের জীবন নিয়েছেন, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা নিজের স্বার্থ ভুলে মানুষকে শুধুই জীবন দিয়ে চলেছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট