একুশের ভোটে উন্নয়নের ইস্তাহারে ১০ অঙ্গীকার মমতার

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ‘রাজনৈতিক নয়, উন্নয়নের ইস্তাহার’ – এই স্লোগানেই রাজ্যের মানুষের জন্য ‘১০ অঙ্গীকার’ করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার কালীঘাটে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি দাবি করলেন, আগের দু’বার যেভাবে ইস্তাহারে উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবারও সেই একই পথে হাঁটছে দল।

এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, গত ১০ বছরে ১১০ শতাংশ কাজ করেছে তাঁর সরকার। ক্ষমতায় ফিরলে আগামী ৫ বছরে ৫ লক্ষ কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল ইস্তাহারে। চলতে থাকা স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্পগুলি চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু নতুন প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দেন ইস্তাহারে।

এদিন প্রকাশিত ইস্তেহারে ইশতেহারে রাজ্যের সব পরিবারকে বছরে ৬,০০০ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তফসিলিদের ক্ষেত্রে দেওয়া হবে ১২,০০০ টাকা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জানিয়েছেন, ক্ষমতায় এলে তার সরকার ছাত্রছাত্রীদের জন্য ‘ক্রেডিট কার্ড’ দেওয়ার বিষয় উদ্যোগী হবে। যার দায়বদ্ধতা বহন করবে সরকার।

কোনও গ্যারান্টার ছাড়াই এই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়ার সুযোগ পাবে ছাত্রছাত্রীরা। কৃষকদের জন্য বাৎসরিক সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তৃণমূল। এ ছাড়াও শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন, বিদ্যুৎ এবং পানীয় জলের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে।

সারদা মামলায় তৃণমূলের জোড়াসাঁকোর প্রার্থীকে তলব ইডির

এদিন ইস্তাহার প্রকাশ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আগের দু’দফার কাজের খতিয়ান তুলে ধরেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ২০১১ সালে যখন তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছিল, তখন রাজ্যের আয় ছিল ২৫,০০০ কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে ৭৫,০০০ কোটি টাকা হয়েছে। বাংলার মানুষের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

এদিকে দশটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ইস্তাহার প্রকাশ করল তৃণমূল তারমধ্যে যেমন রয়েছে রাজ্যকে দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে তুলে আনার প্রতিশ্রুতি। একইভাবে রয়েছে উন্নয়নের কাজ জারি রাখার কথাও।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায়, পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি তৈরি করা এবং ৩৫ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যসীমার বাইরে নিয়ে আসার উপর জোর দেওয়া হবে। সেজন্য বছরে তৈরি করা হবে পাঁচ লাখ কর্মসংস্থান। সরকারি চাকরি, ১০০ দিনের কাজ-সহ বিভিন্নভাবে সেই কাজ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, বাজেটের প্রতিশ্রুতি মত আগামী মে থেকে সমস্ত বিধবাদের মাসিক ভাতা ১,০০০ টাকা করে দেওয়া হবে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসলে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে যাবে বিনামূল্য রেশন।

বিধবা, প্রবীণদের বিশেষ ভাবে সক্ষমদের ভাতা দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যের প্রতিটি পরিবারের মাসিক ন্যূনতম আয় সুনিশ্চিত করতে চায় তৃনমূল কংগ্রেস। এই লক্ষ্যে বাংলার প্রতিটি জেনারেল ক্যাটেগরির পরিবারকে মাসে ৫০০ টাকা দেওয়া হবে।

সেই অনুযায়ী বছরে ৬,০০০ টাকা দেওয়া হবে। তার ফলে উপকৃত হবে রাজ্যের ১.৬ কোটি পরিবার। তফসিলি জাতি এবং উপজাতি শ্রেণিভুক্ত পরিবারকে মাসে ১,০০০ টাকা হিসেবে বার্ষিক ১২,০০০ টাকা দেওয়া হবে। চাকরি করলেও সবাই পাবেন।রাজ্যের প্রতিটি পরিবারের মহিলারাই এই অর্থ পাবেন।

দল ছাড়লেন দেবশ্রী, এবার কি গন্তব্য গেরুয়া শিবির

বছরে চার মাস ধরে চলবে দুয়ারে সরকার চলবে। অগস্ট-সেপ্টেম্বর এবং নভেম্বর-ডিসেম্বরে হবে। এছাড়া বাংলার ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার অগ্রগতির কথা মাথায় রেখে পড়ুয়াদের জন্য ১০ লাখ টাকার স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড আনা হবে।এর জন্য মাত্র চার শতাংশ সুদ দিতে হবে। গ্যারেন্টার লাগবে না। সরকারই গ্যারেন্টার হবে।

তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলে ৬,০০০ টাকা নয়, কৃষকদের বার্ষিক ১০,০০০ টাকা দেওয়া হবে। সুবিধা পাবেন রাজ্যের ৬৮ লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক। পাশাপাশি কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, অন্যান্য বৃত্তি পাবে।বাংলা আবাস যোজনার মাধ্যমে ৩৩.৭ লাখ বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। আরও ২৫ লাখ বাড়ি তৈরি করা হবে।

মাহিষ্য, তিলি, তামুল, সাহার মতো সম্প্রদায়ের মানুষরা ওবিসি শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত নন। কিন্তু মণ্ডল কমিশনের তালিকায় আছেন। তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনার একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে। যাতে ওবিসি সংক্রান্ত যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা পান। মালদহের কিষান জাতির ক্ষেত্রে ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত করার বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করছে দল।

পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখার জন্য একটি বিশেষ উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হবে। পাহাড় এবং তরাই-ডুয়ার্সের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হবে।

দলে যোগ দেওয়ার পর বাড়তি দায়িত্ব পেলেন যশবন্ত সিনহা

আসলে বরাবরই তৃণমূল নেত্রীর ভাবনায় রয়েছে বাংলার উন্নয়ন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাই ইস্তেহারের বেশির ভাগ জায়গা জুড়ে জায়গা পেয়েছে সেই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি, বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা।

সম্পর্কিত পোস্ট