পুরুলিয়ায় কড়া মেজাজে মমতা, বাঁচতে চাইলে সতর্ক হোক বাকি জেলা

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর রাজ্য প্রশাসন সম্বন্ধে ধারণাটাই আমূল বদলে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার মহাকরণ বা নবান্ন নয়, গোটা ক্যাবিনেট নিয়ে তিনি বারেবারে হাজির হয়েছেন জেলায় জেলায়। এবারেও ধাপে ধাপে জেলায় গিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করা শুরু করেছেন।

তবে সোমবার পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠকে যা হল তা কার্যত নজিরবিহীন। জেলা প্রশাসনের একের পর এক দুর্নীতির কথা জেনে মেজাজ ধরে রাখতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী। বলে বসলেন, “আমার পার্টির লোক হলে টেনে চারটে থাপ্পড় মারতাম”!

আমজনতার দুর্ভোগের কথা জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রীর এই কড়া মেজাজের সামনে তখন দিশেহারা জেলাশাসক থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের তাবড় তাবড় কর্তারা। ওই প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন পুরুলিয়ায় জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে যেভাবে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাতে তিনি চরম অসন্তুষ্ট।

সোমবারের ঘটনা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, শুধু পুরুলিয়া নয়, আগামী দিনে বাকি জেলাগুলিকেও প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর এমন কড়া মেজাজের মুখে পড়তে হতে পারে। কারণ আগামী বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন। যা কার্যত ২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলায় সেমিফাইনালের মর্যাদা পাচ্ছে। সেখানে জেলা প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম ঢুকে থাকলে তার কুপ্রভাব শাসকদলের উপরেই এসে পড়বে।

মাঙ্কি পক্সের প্রাদুর্ভাবে কোভিডের মাঝেই বিপদের আশঙ্কায় তৎপর স্বাস্থ্য দফতর

এমনিতেই ২৪ এর লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছে তৃণমূল। বাংলা তো বটেই, তারা সর্বভারতীয় স্তরেও ভালো ফল করে নিজেদের একটা আলাদা জায়গা করে নিতে চাইছে। কিন্তু সেটা তখনই সম্ভব হবে যদি ২৩ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিটি জেলায় একচেটিয়া সাফল্য পায় তৃণমূল কংগ্রেস। এমনিতে একের পর এক জনমোহিনী সরকারি প্রকল্প আনিয় সাধারণ মানুষের মধ্যে তৃণমূলের ভাবমূর্তি যথেষ্ট উজ্জ্বল।

তবে আশঙ্কার দিক‌ও অল্পবিস্তর আছে। এসএসসি দুর্নীতি, বেকারত্বের সমস্যা, দলের নিচুতলার নেতাদের একাংশের দৌরাত্ম্য তৃণমূলের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। এই অবস্থায় পুরুলিয়া জেলার মতো সরকারি কর্তাদের দুর্নীতি ও গাজোয়ারির জেরে সাধারন মানুষ যদি নিজেদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে থাকে তবে বেশ কিছু জায়গায় ধাক্কা খেতে হতে পারে তৃণমূলকে।

এমনিতেই পুরুলিয়া সহ জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে ১৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে যথেষ্ট ধাক্কা খেয়েছিল তৃণমূল। এর ফলেই ১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ভালো ফল করে বিজেপি এমনটাই মনে করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটা বড় অংশ।

এই বিষয়টি মাথায় রেখেই সম্ভবত পঞ্চায়েত ভোটের এক বছর আগে থেকেই সব কিছু ঠিক করে নিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার জন্য অবশ্যই তাঁকে কড়া হতে হবে। কেউ অন্যায় করলে তাকে শাস্তি দিতে হবে। সোমবার পুরুলিয়ায় গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক সেই ভূমিকাতেই অবতীর্ণ হলেন বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

কেউ কেউ মনে করছেন পুরুলিয়ায় জেলা প্রশাসনের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী কড়া বার্তা দিলেও তা শুধু প্রশাসনিক স্তরে সীমাবদ্ধ নয়। বরং তিনি ঘুরিয়ে দলের একাংশকেও বার্তা দিয়েছেন‌। হয়তো আর কিছুদিনের মধ্যেই তৃণমূল নেত্রী ঘোষণা করে দেবেন যাদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আছে তাদেরকে আর পঞ্চায়েতের টিকিট দেবে না দল।সবমিলিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও কড়া হাতে প্রশাসন ও দলের রাশ ধরবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত পোস্ট