মুখোমুখি মমতা বনাম শুভেন্দু, বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন অর্জুনের প্রবেশ

নয়ন রায়

বিধানচন্দ্র রায়ের আমল আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলকে এক সরলরেখায় বিচার করা ঠিক হবে না। বিধানচন্দ্র রায় যে সময় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন সেই সময় দেশভাগের স্মৃতি টাটকা ছিল। রাজনীতির ময়দানের কথায় আসা যাক।

বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে জ্যোতি বসু ছিলেন বিরোধী দলনেতা। সেই সময় একদিকে বিধানচন্দ্র রায়। অন্যদিকে জ্যোতি বসু। বাংলার বিধানসভায় প্রতিটি ইঁটে কত যে ইতিহাস জড়িয়ে আছে, তা বঙ্গবাসীর অবিদিত নয়।

সাল ২০২১। বাংলার মসনদে মমতা ব্যানার্জী মুখ্যমন্ত্রী। আর বিরোধী দলনেতা তাঁর একসময়ের ক্যাবিনেট সহযোগী শুভেন্দু অধিকারী। রাজনীতির ময়দানে এবার দুজন দুজনের বিরোধী।

যে শুভেন্দু একসময় শাসক শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতার পাশ আলো করে বসতেন, আজ সেই শুভেন্দু অধিকারীকে বসতে হবে বিরোধী দলনেতার কুর্সিতে। প্রশ্ন, অধিকারী পরিবার যে রাজনৈতিক পরম্পরার মধ্যে চলে এসেছেন, তাতে এই পদ কতটা ফিট করে? এর উত্তর তোলা থাকলো।

শুভেন্দু বরাবর আক্রমণাত্মক মেজাজেই রাজনীতি করেন। সেটা বাংলার রাজনীতি ময়দানে পরিচিতি ছবি। নন্দীগ্রাম আন্দোলনে সময় থেকে এটাই বাংলার মানুষ দেখে আসছে। এটা ঠিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বিজেপি তাদের টার্গেটে পৌঁছতে পারেনি। কিন্তু এটাও বাস্তব 77 টা বিধায়ক নিয়ে বিধানসভার অলিন্দে শুভেন্দুর বক্তব্যের ঝাঁঝালো তেজ অনুভব করা যাবে। সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার নজরের কেন্দ্রবিন্দু হবে শুভেন্দু।এটাও কম নাকি!

তুমুল বৃষ্টিতে জলমগ্ন কলকাতা সহ শহরতলী, মাথায় হাত চাষীদের

যে বিজেপি 2016 বিধানসভায় তিন জন বিধায়ক নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, সেই বিজেপি এখন প্রধান বিরোধী দল বিধানসভায়। যেখানে বাম ও কংগ্রেস কেউ নেই। ফলে রাজনীতির অঙ্কে বিজেপি আগামী দিনে শিরোনামে থাকবে, সেই রকমই পঞ্জিকা তৈরি হলো।

2026 বিধানসভার ভোট অনেক দূরে। 2024 লোকসভার ভোট। তার আগে বিজেপি রাজনীতির প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। যদি বিরোধী দলের ভূমিকা ঠিকঠাক পালন করে তো। তবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু যখন, সেই প্রত্যাশা করা যেতেই পারে।

ভোটের আগে শুভেন্দুর দল ছেড়ে চলে যাওয়া, সেইসময় বাংলার মানুষ ও তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা মেনে নিতে পারেন। তারা জানতে চেয়েছিল শুভেন্দুর সঙ্গে বিজেপির কি ডিল হয়েছিল?

সেই সময় শুভেন্দু অধিকারী যা বলেছিলেন তা হল, টেট পরীক্ষা সময় মত হওয়া ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নিয়মিত চালু করা, বিভিন্ন পদে নিয়োগের স্বচ্ছতা এবং রেশন বন্টন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা। এই সমস্ত বিষয়ে তার সঙ্গে বিজেপির ডিল হয়েছিল।

অতএব এবারে বিধানসভায় বি্রোধী দলের নেতার ভূমিকায় শুভেন্দু অধিকারীকে সেই ডিলগুলো গুলোকে মনে করাবে। মুখে যতই বলুক তিনি সরকারের বিভিন্ন সময় পাশে থাকবেন সেটা আসলে নামমাত্র।

রাজ্য বিধানসভায় শাসকদল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুতে সরব হবে। বিধানসভার অধিবেশনে সেদিন শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকা কী হবে সেটাই দেখার। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সরকারের পাশে থাকার বার্তা দিলেও এটাও দেখবেন রাজ্য সরকার ঠিক মতন কাজ করছে কিনা।

যদি কোথাও ফাঁকফোকর থাকে তাহলে চেপে ধরবেন শুভেন্দু অধিকারী। কারণ তিনি বিরোধী দলনেতা। এরকম বেশ কিছু বর্ণময় ঘটনার সাক্ষী থাকবে বাংলার মানুষ।

গোয়া হাসপাতালে ২৬ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু, হাইকোর্টের তদন্ত চাইলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

আর বাংলার মানুষ অপেক্ষায় থাকবে একজন সক্রিয় এবং স্বতন্ত্র বিরোধী দলনেতার ভূমিকা দেখার। বঙ্গ রাজনীতির ইতিহাস জ্যোতি বসু, সিদ্ধার্থ শংকর রায়, আব্দুল সাত্তার, অতীশ সিনহা, জয়নাল আবেদীন, পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সূর্যকান্ত মিশ্র, আব্দুল মান্নান বিভিন্ন সময়ে বি্রোধী দলনেতার বিভিন্ন রূপের সাক্ষী থেকেছে।

এখন দেখার শুভেন্দুর কোন রূপ দেখবেন। তার জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হবে…

সম্পর্কিত পোস্ট