রাষ্ট্রপতি ভোট নিয়ে মমতার প্রাসঙ্গিকতা স্পষ্ট, তবে ফলাফলের উপর সবটা নির্ভর করছে
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বুধবার দিল্লির কনস্টিটিউশন হলে বিরোধী শিবিরের বৈঠকের নেতৃত্বে যে তৃণমূল নেত্রীই ছিলেন সেটা স্পষ্ট। মানতে না চাইলেও পরিস্থিতির চাপে কংগ্রেসও শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ভূমিকাকে সমর্থন করতে বাধ্য হয়েছে। ফলে দেশের বিরোধী শিবিরের নেতৃত্বদানের চাবিকাঠি এখন আর শুধু সোনিয়া গান্ধীর হাতে নেই।
বরং ভালোমতোই উঠে এসেছেন মমতা। এই বৈঠকে কংগ্রেস, সিপিএম সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলো সামিল হয়েছিল। সবাইকে একসঙ্গে আনাটা মোটেও মুখের কথা নয়। কংগ্রেস বৈঠক ডাকলে আদৌ এতগুলো দল একজোট হত কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। উপলক্ষ্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হলেও সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব ও দাপট যে অনেকটাই বেড়েছে সেটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার।
বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে ডাকা এই বৈঠকে মোট ২২ টি বিরোধীপক্ষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তার মধ্যে ১৭ জন এসেছে। বাকি যে পাঁচটি দল আসেনি তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য বলতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি ও তেলেঙ্গানার শাসক দল অর্থাৎ কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দল টিআরএস।
এছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশের শাসকদল ওয়াইএসআর কংগ্রেসও এই বৈঠকে যোগ দেয়নি। তারা অবশ্য মুখে বিজেপি বিরোধিতার কথা বললেও বরাবরই বিরোধী শিবির থেকে নিরাপদ দূরত্ব রেখে চলে। ফলে তাদের বৈঠকে যোগ না দেওয়াটা এমন কিছু আশ্চর্যের নয়।
টিআরএস প্রধান তথা তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও নিজে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হতে চান। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেস বা বাম দলগুলো কেউই তাঁর কথাকে গুরুত্ব না দেওয়ায় তিনি এই বৈঠকে যে যোগ দেবেন না সেটাও মোটামুটি প্রত্যাশিত ছিল।
দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের উদ্বোধন, ধর্ম নিয়ে রাজনীতির কড়া সমালোচনায় মুখ্যমন্ত্রী
কিন্তু অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বৈঠকে না থাকার বিষয়টি চিন্তায় ফেলেছে বিরোধী নেতাদের। কারণ আপের হাতে এই মুহূর্তে দুটো রাজ্যের ক্ষমতা। বিশেষ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লির পাশাপাশি তারা এখন পাঞ্জাবের মসনদেও আছে। সূত্রের খবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপকে বৈঠকে আনার জন্য প্রচুর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি।
আপ এই বৈঠকে যোগ না দেওয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রভাব মোটেও কমছে না। তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল শেষ পর্যন্ত কী হয় তার উপর তৃণমূল নেত্রীর সর্বভারতীয় গুরুত্ব অনেকটা নির্ভর করে থাকবে। না, বিরোধী শিবিরের প্রার্থী জিতলে তবেই মমতাকে সবাই মেনে নেবে বিষয়টা এমন নয়। কোমর বেঁধে বিজেপি-র আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে ময়দানে নামলেও বিরোধীরা ভালো মতই জানে তাদের প্রার্থীকে জেতানো প্রায় অসম্ভব।
সে যতই খাতায় কলমে শাসক এনডিএর থেকে বেশি ভোট বিরোধী শিবিরের হাতে থাকুক না কেন। সব বিরোধী দলকে একজোট করা একপ্রকার অসম্ভব। এই যেমন নামকাওয়াস্তে বিরোধী শিবিরের আছেন অন্ধ্রের শাসকদল ওয়াইএসআর কংগ্রেস। একই কথা খাটে ওড়িশার শাসকদল নবীন পট্টনায়কের বিজেডি সম্বন্ধে। এঁরা বরাবরই বিজেপির পক্ষ নিয়ে চলেছে।
কিন্তু বাকি বিরোধীদের একজোট করতে তৃণমূল নেত্রী সফল হন কিনা সেটাই দেখার। এমন একজনকে প্রার্থী করতে হবে যাকে কংগ্রেস যেমন মানবে তেমনই বামদলগুলো মেনে নেবে। বৈঠকে যোগ না দেওয়া আপ, টিআরএস, কাশ্মীরের বিরোধী দলগুলি সকলেই সমর্থন করবে।
এক্ষেত্রে এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার ছিলেন মমতার হাতের তাস। তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী হতে রাজি হয়ে গেলে মোটামুটি সবাই সমর্থন করত। এমনকি শাসক এনডিএতেও ভাঙন ধরানোর যেত বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
কিন্তু ‘মারাঠা স্ট্রংম্যান’ পাওয়ার প্রার্থী হতে বেঁকে বসায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে কাজটা অনেকটা কঠিন হয়ে গিয়েছে। কারণ বাকি যে দুজনের নাম উঠে আসছে তাঁদের মধ্যে গোপালকৃষ্ণ গান্ধিকে প্রার্থী করলে বামেরা কতটা সমর্থন করবে বা টিআরএস, আপের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে সংশয় আছে।
রাজীবের নেতৃত্বে ত্রিপুরায় বড় চমকের অপেক্ষায় তৃণমূল
তাছাড়া বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ তথা জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আব্দুল্লাহর সেই রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা নেই যে তিনি বিরোধীদের সবার প্রার্থী হয়ে উঠতে পারবেন। বরং ফারুক আব্দুল্লাহকে প্রার্থী করলে কাশ্মীরের একাংশের ভারত বিরোধী মনোভাবকে সামনে এনে সহজে বিরোধী শিবিরে ফাটল ধরাতে পারে বিজেপি।
এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি শেষ পর্যন্ত সব বিরোধী মেনে নেবে এমন কাউকে প্রার্থী হিসেবে তুলে আনতে পারেন তাহলে নিঃসন্দেহে তাঁর সর্বভারতীয় গুরুত্ব আজকের থেকে আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। কিন্তু সেটা না পারলে ব্যর্থ তকমা জুটতে পারে তৃণমূলনেত্রীর! তবু মমতার ডাকে প্রায় সব বিরোধী একজোট হয়েছিল এটা কম বড় কথা নয়।