কংগ্রেসের ব্যর্থতায় দায়ী মান্নান-অধীর দ্বন্দ্ব, মত নীচু তলার কংগ্রেস কর্মীদের
নয়ন রায়
প্রয়াত সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, আব্দুস সাত্তার, জয়নাল আবেদীন, অতীশ সিনহা বর্তমানে আব্দুল মান্নান- এরা প্রত্যেকেই বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। প্রত্যেকের নিজস্ব স্টাইল বিধানসভার পরিষদীয় রাজনীতিতে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। এরা জ্যোতি বসু থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে টক্কর দিয়ে পরিষদীয় রাজনীতি করেছেন। সেই সব তথ্য বিধানসভার লাইব্রেরীতে মজুদ আছে।
কিছু দৃশ্য বিভিন্ন টিভি মিডিয়ার লাইব্রেরীতেও আছে। বাংলার কংগ্রেসের মান্নান ও অধীর দুজন বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেন। মান্নান সাহেব নরমপন্থী হলেও অধীর বরাবরই চরমপন্থী মানে হার্ড লাইনার।
একুশের জোটের অন্যতম কারিগর মান্নান। আবার অধীর চৌধুরীর সমর্থন ছিল বলেই জোট হয়েছিল। অনেকেই অবশ্য বলছেন বর্তমানে কংগ্রেসের বেহাল দশার জন্য বহরমপুর লোকাল নাকি দায়ী। বহু কংগ্রেস বিধায়ক নাকি কংগ্রেস ছেড়েছেন অধীর চৌধুরীর আচরণের কারণে। এই বক্তব্য ছেড়ে যাওয়া কংগ্রেস বিধায়কদের।
একদিকে আব্দুল মান্নান বিরোধীদলনেতা ছিলেন। উল্টোদিকে লোকসভায় কংগ্রেসের পরিষদীয় নেতা অধীর চৌধুরী। উচ্চতার মাপকাঠিতে পরিষদীয় রাজনীতিতে দুজন সমান পদের অধিকারী। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির নিচে আব্দুল মান্নানকে থাকতে হয়েছে।
পরিষদীয় রাজনীতির বাইরে ও সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আব্দুল মান্নান অনেক সিনিয়র, অধীর চৌধুরী থেকে। প্রদেশ সভাপতির দাবিদার থাকলেও তার ভাগ্যে এই পদ জোটেনি। অধীর ও মান্নান লড়াই প্রকাশ্যে না এলেও আড়ালে আবডালে বারবার বোঝা গেছে।
২০১৬ থেকে টানা বিধানসভার সময়কালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেশি আক্রমণাত্মক মেজাজকে দেখিয়েছেন আব্দুল মান্নান। মান্নান ও অধীর চৌধুরী পুরোপুরি মমতা বিরোধী ছিলেন এটা সত্য। কিন্তু বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেসের হাল ধরার নেতারা চুপচাপ থাকার কারণে নিচু তলার কর্মীরা কী করবেন তা নিয়ে তারা দিশাহীন অবস্থায় রয়েছেন।
বিগত দিনে বিধানসভায় কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান ও আবুহেনা কখনো নেপাল মাহাতো এবং মনোজ চক্রবর্তীর মত কংগ্রেস নেতারা তাদের দূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের অভাব বর্তমান বিধানসভায় সকলেই অনুভব করবে।
এদের প্রত্যেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বহুদিনের। সেক্ষেত্রে বর্তমানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া বাকি বিধায়করা প্রায় নবাগত। কারণ বিধানসভায় শুধু বিরোধিতা নয়, আক্রমনাত্মক মেজাজ দেখাতে হয় বিভিন্ন ইস্যুতে। তার জন্য দরকার যুক্তিতর্ক বিশ্লেষণ এবং অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান।
মুকুল রায়ের পর পদ্ম শিবির ছাড়ার জল্পনা নিয়ে কী বললেন সুদীপ রায় বর্মন?
বাজেটে বিরোধিতা এবং ফিসকাল ডেফিসিট। রাজ্যের গড় উৎপাদন আয় নিয়ে আলোচনা। যদিও বিজেপিতে অশোক লাহিড়ীর মত অর্থনীতিবীদ থাকছেন। তিনি অমিত মিত্রের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কিন্তু বাকিরা পরিণত নয়। এটাতো ভাববে হবে গেরুয়া বাহিনীকে।
যদি বিধানসভায় কম সংখ্যায় বাম ও কংগ্রেস থাকত তাহলে গেরুয়া দলের বাড়তি সুবিধা তো হতোই। তা যখন হয়নি অতএব বিধানসভার অন্দরে পরিষদীয় রাজনীতিতে বাম ও কংগ্রেস এখন অপ্রাসঙ্গিক। তবে ফ্লোর পলিটিক্স খুব গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভায়। ওয়াকআউট ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ ও পয়েন্ট অব অর্ডারের মত টার্মে কংগ্রেস ছিল সিদ্ধহস্ত।
এই পরিষদীয় মেথড সমস্যায় ফেলবে বিজেপিকে, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। অতএব বিধানসভায় কংগ্রেসের না থাকা মানে বিরাট শূন্যতা। পরিষদীয় রাজনীতি আর এক্সটার্নাল পলিটিক্স এক নয়। তাই আব্দুল মান্নানের অভাব থেকেই যাচ্ছে। এই বাস্তবকে মেনে নিতেই হবে।
করোনা কাল কেটে যাওয়ার পর ২০২৬ পর্যন্ত বিধানসভায় কংগ্রেসের না থাকা মানে পরিষদীয় রাজনীতিতে বিরাট ক্ষতি। এমনটাই বিশ্লেষকদের মত। এই ক্ষত কীভাবে সারবে তা ঠিক করতে হবে আব্দুল মান্নান ও অধীর চৌধুরীকে। তাই এক বেঞ্চে বসে সমাধানের অংক করতে হবে প্লাস মাইনাসের নিরিখে।