যে যত বড় বিপ্লবী ছিল সে তত আগে পা রাখছে তৃণমূলের নৌকায়! এবার তবে কে?
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ২০১৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের বছরখানেক পর থেকে তৃণমূলেরই হোমরা-চোমরা নেতাদের কয়েকজন দল ছাড়তে শুরু করেন। যথেষ্ট গুরুত্ব পেলেও এই নেতাদের প্রত্যাশা ছিল গগনচুম্বী। কিন্তু সবাইকে নিয়ে চলার নীতিতে বিশ্বাসী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে একজনকেই সবকিছু দিয়ে সন্তুষ্ট করা সম্ভব হয়নি।
সেই কারণেই এই নেতারা তৃণমূল ছেড়ে ছিলেন। বিজেপিতে গিয়ে সেই মুকুল রায়, অর্জুন সিং, সৌমিত্র খাঁ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারীরা বড় বিপ্লবী হয়ে ওঠেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই ইতিমধ্যে ঘর ওয়াপসি ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে অর্জুনের পরে কে?
তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরই নম্বর টু মনে করা হতো মুকুল রায়কে। বস্তুত মুকুলের হাতে দলীয় সংগঠনের যাবতীয় দায়িত্ব তুলে দিয়ে একরকম নিশ্চিন্ত ছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু সেই মুকুল বিজেপিতে গিয়ে তৃণমূল ভাঙানোর মূল কাণ্ডারী হয়ে উঠেছিলেন।
তিনি চোখা চোখা বাক্যবাণ ব্যবহার করে তৃণমূল সরকারের পতনের ডাকও দেন। ইডি-সিবিআই ব্যবহার করে নানান মামলায় জর্জরিত করে ফেলা হয় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করতে না পেরে একুশের নির্বাচন মেটার মাস দেড়েকের মধ্যে ছেলেকে নিয়ে তৃণমূলে ঘর ওয়াপসি হয় মুকুলের।
বিজেপিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে কিনা বলেছিলেন অর্জুন সিং। সেসময় বিজেপি নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমগুলোতে অর্জুনকে ‘রবিনহুড’ নেতা হিসেবে তুলে ধরা হয়। কার্যত হিন্দিভাষী হওয়ার সুবাদে তৃণমূলের পাশ থেকে সব হিন্দি ভোট ছিনিয়ে নেওয়ার হুঁশিয়ারি পর্যন্ত দেন।
মন্ত্রিসভার আসন্ন রদবদলে ‘নক্ষত্র’ পতন ঘটাতে পারেন মমতা!
কিন্তু হিন্দি ভোট দুরের কথা, নিজের পরিবারের সদস্যদেরই ধরে রাখতে পারেননি অর্জুন। শেষে বুঝতে পারেন বাংলায় রাজনীতি করে মানুষের কাজ করতে হলে তৃণমূলটাই আসল জায়গা। কিছুটা আত্মউপলব্ধি, কিছুটা পরিস্থিতির ফের, আর বাকিটা শুভ বুদ্ধির উদয় ঘটে সেই অর্জুন সিং আবার তৃণমূলে ফিরে এসেছেন।
বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র তথা রাজারহাটের প্রাক্তন বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত বিজেপিতে গিয়ে একই ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি আরও আগে ফিরে এসেছেন তৃণমূলে। দেখা যাচ্ছে শিবির বদল করে যারা যত বড় বিপ্লবী হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা ততো তাড়াতাড়ি ভুল বুঝতে পেরে ফিরছেন ‘নিজের ঘর’ তৃণমূল কংগ্রেসে। এখন প্রশ্ন অর্জুন সিংয়ের পর কে?
তৃণমূলের হাত ধরে রাজনীতিতে পদার্পণ হয়েছিল টলিউড অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের। বিজেপিতে গিয়ে তিনি আজ তথাকথিত ‘বড় নেত্রী’ হয়ে উঠেছেন। লোকসভা নির্বাচনে হুগলি থেকে জিতেওছেন।
কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর লোকসভার অন্তর্গত ৭ টি কেন্দ্রেই পরাজিত হয় বিজেপি। লকেট নিজে হেরে যান। এখনও পর্যন্ত বিজেপিতে থাকার কথা বললেও যা হালচাল তাতে লকেট চট্টোপাধ্যায়ও যেকোনও দিন তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন করতে পারেন বলে তৃণমূলেরই একটি সূত্রে খবর।
একসময় যুব তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন সৌমিত্র খাঁ। তাঁর হঠাৎ কী হল কে জানে। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে লম্বা-চওড়া বক্তব্য রাখতে শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। যদিও সৌমিত্রকে কোনদিন সরাসরি নিশানা করার প্রয়োজন মনে করেননি মমতা-অভিষেক।
কারণ নিজেকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর চেষ্টা করলেও বিষ্ণুপুরের এই বিজেপি সাংসদের রাজনৈতিক উচ্চতা ততটাও নয় যে তাঁকে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রতিক্রিয়া দিতে হবে। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর বিজেপিতে আর ‘সুখী’ সৌমিত্র। ২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনিও তৃণমূলের ফিরে আসার চেষ্টা করতে পারেন বলে রাজনৈতিক মহলের একটি অংশের অনুমান।
পুরুলিয়ায় কড়া মেজাজে মমতা, বাঁচতে চাইলে সতর্ক হোক বাকি জেলা
তবে সবচেয়ে বড় বিপ্লবী শুভেন্দু অধিকারীর কী হবে? যে ন্যক্কারজনক ভাষায় তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লাগাতার আক্রমণ করে গিয়েছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একেরপর এক বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন তাতে তাঁকে কী আদৌ ফিরিয়ে নেবে তৃণমূল? এক্ষেত্রে পুরো বিষয়টাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর নির্ভর করছে।
যদিও অধিকারীদের গড় বলে পরিচিত কাঁথি পুরসভাটুকুও ধরে রাখতে পারেননি তিনি। শোনা যাচ্ছে তিনি যেখানকার বিধায়ক সেই নন্দীগ্রামের একটা বড় অংশের বিজেপি কর্মী খুব দ্রুত তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছে।
সব মিলিয়ে নিজের এলাকাতেই ব্যাপক কোণঠাসা শুভেন্দু। তাই নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তিনিও যে তৃণমূলের ফিরতে চাইবেন না এটা হলফ করে বলা কঠিন। ফলে দিলীপ ঘোষ ছাড়া আর কেউ বিজেপিতে থাকবে কিনা এটা বলা সত্যিই খুব মুশকিল!