গোবর সংস্কৃতি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন, অপেক্ষা উত্তরের
বর্তমানে আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের এমনই হাল যে, দীর্ঘ সত্তর বছর ধরে তৈরী ও রক্ষা করা দেশের মূল্যবান সম্পদগুলিকে বিক্রি করে বর্তমান সরকারকে তাদের খরচ চালাতে হচ্ছে। তারপরেও সরকারের টনক নড়ছে না।
||পার্থপ্রতিম বিশ্বাস ||
আইনজীবী, বারাসাত কোর্ট
গোবর দেওয়ালে লাগলে ঘুঁটে, আর মাথায় ঢুকলে ভক্ত হয়ে যায়। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশ এইসব ভক্তদের পথ ও মতের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে। ভক্তগণ বলছেন, গোবর খেলে ক্যান্সার সারে, গোমুত্র সর্বরোগ হরা। তাই নিয়ম করে গোবর মাখো আর গোমুত্রে স্নান করো।
আজকাল তাদের এই গোবর সংস্কৃতির বিভিন্ন উপমা আমরা নিয়মিত দেখতেও পাই। এরা শুধু ধর্ম ও জাতের নামে মানুষ মেরেই খান্ত হয়না, শিক্ষায় নিজেদের মত ঢুকিয়ে বদলে দেয় বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত ও আধুনিকতার যাবতীয় সম্ভার। ধর্মান্ধতা ও উগ্রতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বদলে দিতে চায় মানুষের সুস্থ মানসিকতা। এমনকি ঘৃনিত অপরাধ করার পর সেই অপরাধকেও ধর্মের মোড়কে ঢেকে মানুষকে বোকা বানাতে চায়।
আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণিত করে আজ সকলেই জেনে গিয়েছেন যে, ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক অবস্থা বর্তমানে প্রায় তলানিতে। যে দেশটা ছয়-সাত বছর আগেও বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ আমেরিকা বা চীনের সঙ্গে টক্কর দিয়ে চলতো , বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেই দেশের অর্থনীতির বর্তমান হাল দেখে পাশ্ববর্তী ছোট দেশগুলোও আজকাল হাসাহাসি করছে।
বর্তমানে আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের এমনই হাল যে, দীর্ঘ সত্তর বছর ধরে তৈরী ও রক্ষা করা দেশের মূল্যবান সম্পদগুলিকে বিক্রি করে বর্তমান সরকারকে তাদের খরচ চালাতে হচ্ছে। তারপরেও সরকারের টনক নড়ছে না।
আরও পড়ুনঃ সঙ্কটে রাজনীতি, হারাচ্ছে সৌজন্যতা, চলছে কদর্য ভাষায় প্রতিপক্ষকে আক্রমণ
সম্প্রতি দেশের সুপ্রিমকোর্টে চলা একটি মামলা সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমে যে খবর প্রকাশ হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, সরকারী দফতর ও তার আধিকারিকরাও দেশের আদালতকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন। বিষয় এই যে , কয়েকটি মোবাইল কোম্পানির কাছে সরকারী পাওনার পরিমান একলক্ষ সাতচল্লিশ হাজার কোটি টাকা। এই পরিমান টাকা পেলে দেশের বর্তমান বেচারাম সরকার হয়তো দেশের কিছু মূল্যবান সম্পদ আরও কিছু সময় ধরে রাখতে পারতো।
দেশের সুপ্রিম কোর্ট যখন মোবাইল কোম্পানিগুলোকে সেই টাকা দেওয়ার দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে আদেশ দেন, তখন গোবরাষক্ত সরকারের এক আধিকারিক সেই আদেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের মতো করে উল্টো নির্দেশিকা জারি করেন। আগেই বলেছি যে, বর্তমান সরকারের গোবর সংস্কৃতির প্রভাবে দেশে বিজ্ঞান ও আধুনিক শিক্ষা আজ তলানিতে। সেই সংস্কৃতি যখন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশকেও রদ বা বদল করে দেয়, তখন সুস্থ ও শিক্ষিত মানুষদের যে অভিব্যক্তি হতে পারে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা তাদের সেই মতই জানিয়েছেন।
তাঁরা বলেছেন, “….. দেশে কি আইন বলে কিছু নেই? এ দেশে থাকার চেয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়াই ভাল।”
এসব জানা ও শোনার পরে দেশের সরকারে থাকা দল বা তার নেতাগোতাদের শরীরে কি এতটুকুও লজ্জাবোধ তৈরী হলো? নাকি তারাও চাইছেন, ওই সকল সুস্থ ও শিক্ষিত বিচারপতিদের তাড়িয়ে নিজেদের গোবর সংস্কৃতির শিক্ষায় শিক্ষিত কিছু মানুষকে দিয়ে বিচারব্যাবস্থাটাকেও কব্জা করতে?
আরও পড়ুনঃ পুলওয়ামা শহিদদের স্মরণে রাজনীতি নয়, দাবি উঠুক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশেরও
এসব জেনে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অ-বিজেপি মানুষরাই বা কি ভাবছেন? আরও কতদিন সহ্য করবেন এদের? এদের ছোঁয়ায় দেশের আরও কোন কোন সম্পদ ধ্বংসপ্রাপ্তি হলে তবেই শাপমুক্তি ঘটবে ভারতবাসীর? যাদের বীরগাথা বিশ্বের মানুষের কাছে আদর্শ হিসাবে প্রমাণিত, আরও একবার কি সেই জাতি রুখে দাঁড়াবে না?
আমি একা নই। আজ এ প্রশ্ন করছেন অনেকেই। রইলাম, উত্তর আসার অপেক্ষায়।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই প্রতিবেদনে প্রকাশিত বক্তব্য প্রতিবেদকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর কোনো দায় www.thequiry.com এর না।